মগধের উত্থানের কারণগুলি কী কী ?
মগধের উত্থানের কারণ গুলি আলোচনা করো।
উঃ খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে বৃহত্তম শক্তি হিসেবে মগধের আত্মপ্রকাশ ঘটে। মগধের এই উত্থানের মূলে ছিল—
(1) ভৌগোলিক অবস্থান : মগধের প্রাচীন রাজধানী রাজগৃহ ছিল পঞ্চপর্বত বেষ্টিত এবং গঙ্গা, শোন ও গণ্ডক নদী পরবর্তী রাজধানী পাটলিপুত্রকে প্রাকৃতিক সুরক্ষা দিয়েছিল।
(2) আর্থিক সমৃদ্ধি : উন্নত কৃষি, পর্যাপ্ত খনিজ সম্পদ এবং বাণিজ্যিক সমৃদ্ধির কারণে আর্থিক দিক থেকে মগধ অন্যান্য মহাজনপদগুলি থেকে ছিল বহুগুণে এগিয়ে।
(i) পলিবিধৌত উর্বর জমি, গঙ্গা, শোন ও গণ্ডক নদীর পর্যাপ্ত জল এবং লোহার তৈরি কৃষি সরঞ্জামের ব্যবহার কৃষিকে সমৃদ্ধ করেছিল।
(ii) স্থল ও জলপথে ভারতীয় উপমহাদেশের সঙ্গে মগধের যোগাযোগ এবং শান্তি ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকায় একদিকে বাণিজ্য যেমন উল্লেখযোগ্য হয়েছিল, তেমনই রাজশক্তি পেয়েছিল শ্রেষ্ঠীদের অকুণ্ঠ সমর্থন।
(iii) সেযুগে ভারতের লোহা ও তামার খনিগুলি ছিল মগধ ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে। কৌটিল্য উল্লেখ করেছেন যে, রাজকোশ খনির উপর নির্ভর করে এবং সেনাবাহিনী নির্ভরশীল রাজকোশের ওপর খনিজ সম্পদই হচ্ছে যুদ্ধসম্ভারের গর্ভাশয়।
(3) রাজতন্ত্রের প্রভাব : বিম্বিসার অজাতশুত্রু, শিশুনাগ, মহাপদ্মনন্দ, চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য ও আশোক প্রমুখ উল্লেখযোগ্য শাসকদের অধীনে কূটনৈতিক দক্ষতা মগধকে সাফল্য এনে দিয়েছিল। মগধ পরিণত হয়েছিল এক সাম্রাজ্যবাদী শক্তি হিসেবে।
(4) সাংস্কৃতিক মিলন : আর্য ও অনার্য সংস্কৃতির মিলন এখানকার মানুষের চিত্তবৃত্তি ও রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণকে সম্প্রসারিত করে মগধকে একটি বৃহৎ সাম্রাজ্যের প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠতে সাহায্য করেছিল।
ঐতিহাসিক রামশরণ শর্মা প্রাকৃতিক আনুকূল্যকে মগধের সাফল্যের প্রধান কারণ বলে মনে করলেও ড. ব্যাসাম, রোমিলা থাপার-এর মতে আর্থিক সমৃদ্ধি এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে মগধকে রাজনৈতিক সাফল্যের সঙ্গে এক সর্বভারতীয় সাম্রাজ্যে পরিণত করে।