সমাজগঠনে সংবাদপত্রের ভূমিকা রচনা

সমাজগঠনে সংবাদপত্রের ভূমিকা রচনা

ভূমিকা

প্রাচীনকালে সামান্য সংবাদের আদান-প্রদান করতেন ধর্মপ্রচারকরা। এককালে পর্যটকরাই ছিলেন সংবাদপত্র। আধুনিক কালের সংবাদপত্র প্রথম আত্মপ্রকাশ করে চিনদেশে। ইংরেজ আমলে মিশনারীদের চেষ্টায় ভারতবর্ষে প্রথম সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়।

ক্রম-বিবর্তন 

সংবাদপত্র প্রকাশের প্রায় প্রথম কাল থেকেই রাজা রামমোহন রায় তাঁর পরিচালিত সংবাদপত্রকে সমাজ সংস্কারের বাহন করে তুলেছিলেন। হরিশ মুখার্জী সংবাদপত্রকে সমাজসংস্কার এবং ইংরেজ বিরোধিতায় ব্যবহার করেছেন। তীব্র ভাষায় তিনি আক্রমণ করেছিলেন বিশেষ করে নীলকর সাহেবদের। সমাজের সাধারণ মানুষের মনে ইংরেজ-বিরোধীভাব জাগিয়ে তুলে এ সময় অনেক সংবাদপত্রই সেদিন উত্তরকালের স্বাধীনতার আন্দোলনের ভূমিকা রচনা করে গিয়েছিলেন। ইংরেজকে প্রেস আইনও করতে হয়েছিল। এ সময় থেকেই সংবাদপত্র শিক্ষিত মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ক্রমে সংবাদপত্র লোকশিক্ষার বাহন হয়ে ওঠে এবং জনমত গঠনে বিশেষ ভূমিকাও পালন করে।

বিচিত্র কর্মধারা 

বর্তমানে সংবাদপত্রের আদর সর্বত্র। সংবাদপত্রটি হাতে পাবার জন্য রেডিও-টেলিভিশনের যুগেও সকাল থেকে প্রতীক্ষা করেন প্রতিটি গৃহস্থ। যাঁদের পথে বের হতে হয় তাঁরাও পথেই সংবাদপত্র কিনে নেন অথবা অপরের হাতের সংবাদপত্রটি দেখবার জন্য রীতি বহির্ভূত ভাবেও উকিঝুঁকি মারেন। বিভিন্ন রুচির, বিভিন্ন চিন্তার মানুষের কাছে সমভাবে আবেদন করতে সক্ষম বলে সংবাদপত্র এত জনপ্রিয়। বিশ্বের দূর-দূরান্তের সংবাদ বহন করে সংবাদপত্র পাঠকদের সামনে বিশ্বকে
উপস্থিত করে দেয়।

রাষ্ট্রের রূপ গঠনে সহায়ক

বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের সমাজ ব্যবস্থার চিত্রটি পাওয়া যায় সংবাদপত্রে—তা জেনে রাষ্ট্রকাঠামো গঠন করা সহজতর হয়। কোন্ রাষ্ট্র কী উৎপাদন করে, তাদের শিক্ষাদান পদ্ধতিই বা কীরূপ তা জেনে অন্যান্য রাষ্ট্র উপকৃত হয়, আদান-প্রদানেও সক্ষম হয়। উৎপাদিত দ্রব্য সামগ্রীর আদান-প্রদান করতে পারে— শিক্ষা-ব্যবস্থাতেও নতুন প্রাণের সঞ্চার করতে পারে সংবাদপত্র। এক কথায়, সংবাদপত্রের সংবাদ নব নব চিন্তার উন্মেষ ঘটিয়ে প্রত্যেক জাতি ও রাষ্ট্রকে নবরূপ দিতে পারে অতি সহজে।

জাতি গঠনে সংবাদপত্রের দায়িত্ব

জাতীয় জীবনে সংবাদপত্রের প্রভাব অপরিসীম। বর্তমানে প্রতিটি সংবাদপত্রের প্রতি রবিবার একটি করে সংযোজনী থাকে, যাতে বিচিত্র বিষয় আলোচিত হয়। এইসব আলোচনা এবং প্রতিদিনকার সম্পাদকীয় পাঠকদের জ্ঞানরাজ্যকে সমৃদ্ধ করে এবং তার ফলে সমাজ উজ্জ্বলতর হয়। জনসাধারণকে পথ নির্দেশের শক্তি ধরে সংবাদপত্র। তাই কোন বিশেষ উদ্দেশ্য
প্রণোদিত না হয়ে সত্য সংবাদ এবং সঠিক বক্তব্য পরিবেশন করা সংবাদপত্রের বিশেষ দায়িত্ব। অসত্য সংবাদ জাতিকে বিভ্রান্ত করে। রাষ্ট্র কাঠামোর ক্ষতি সাধনও করতে পারে। মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন সংবাদপত্রের পক্ষে অমার্জনীয় অপরাধ। সত্য সংবাদ পরিবেশন এবং নিরপেক্ষ সমালোচনা করা সংবাদপত্রের অবশ্য কর্তব্য।

উপসংহার

দুর্ভাগ্যবশত বর্তমানে সংবাদপত্রগুলোর মালিকগণ-কোন-না-কোন দলের পৃষ্ঠপোষকতা করেন। এমন কি কোন কোনটা বিদেশের ইঙ্গিতেও চলে। এসব কারণে যথার্থ নিরপেক্ষ আলোচনা সংবাদপত্রে প্রায়শই দেখা যায় না। কিন্তু সমাজের স্বার্থে নিরপেক্ষ সংবাদপত্র কাম্য।

এই প্রবন্ধ অনুসারে লেখা যায় -
1. সমাজগঠনে সংবাদপত্রের ভূমিকা
2. জাতীয় জীবনে সংবাদপত্রের স্থান
3. সংবাদপত্রের প্রয়োজনীয়তা, সংবাদপত্র কী এবং কেন?
4. সংবাদপত্র ও দেশের মানুষ
5. জাতীয় জীবনে সংবাদপত্রের গুরুত্ব।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url