অস্পৃশ্যতা রচনা

অস্পৃশ্যতা রচনা

ভূমিকা

একে ছুঁয়ো না, ওকে ছুঁয়ো না—এজিনিস আমাদের সমাজে বহু যুগ ধরে চলে আসছিল। আমাদের সমাজে যত কুসংস্কার আছে তার মধ্যে সবচেয়ে ঘৃণ্য হল অস্পৃশ্যতা। মানুষকে ছুঁতে পারবে না—এর চেয়ে ক্ষতিকর আর কী হতে পারে!

অস্পৃশ্যতা ও সমাজ-জীবন 

এতদিন পর্যন্ত ছুঁৎমার্গের দোহাই দিয়ে সমাজের এক ধরনের মানুষ জনসংখ্যার অধিকাংশকে আলাদা করে রেখেছিল। মানুষের দ্বারা মানুষের এই অপমান ও লাক্ষ্মা সমাজের পক্ষে ছিল খুবই ক্ষতিকর। এর মূলে ছিল শোষণ করার চিন্তা। আর এ ব্যবস্থা জিইয়ে রাখা সম্ভব হয়েছিল দেশের অধিকাংশ লোকের অজ্ঞানতার দরুন। বর্তমানে দেশে শিক্ষার প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ অস্পৃশ্যতার ক্ষতিকর দিকটি সম্বন্ধে বুঝতে পেরেছে, তাই এই ছুৎমার্গও ক্রমেই বিলোপ হচ্ছে। এই জিনিস দূর করার জন্য আইনও রচিত হয়েছে। তবে একথা মনে রাখা দরকার যে কোন কুসংস্কারই আইন করে দূর করা যায় না। কুসংস্কার দূর করতে হলে শিক্ষার প্রসার একান্ত প্রয়োজন। কারণ শিক্ষা মানুষের মনের উদারতা বৃদ্ধির প্রধান উপায়।

কুফল

যে মেথরকে আমরা এতদিন অস্পৃশ্য বলে মনে করে এসেছি, একটু চিন্তা করলেই দেখা যায় যে, শহরের জীবনে মেথর না থাকলে শহর-জীবন একদিনেই অচল হয়ে যেত, শহর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হত। এ সত্যতা শহরবাসী মাত্রই উপলব্ধি করেন। তাই তো কবি বলেছেন—
কে বলে তোমারে, বন্ধু অস্পৃশ্য অশুচি?
শুচিতা ফিরিছে সদা তোমারি পিছনে ;
তুমি আছ, গৃহবাসে তাই আছে শুচি
নহিলে মানুষ বুঝি ফিরে যেতো বনে। —সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত।
অস্পৃশ্যতা মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করে নানা রকম অশান্তি ও মারামারির সৃষ্টি করে। অস্পৃশ্যতা, উচ্চ-নীচ জাতিভেদের বিরুদ্ধে ভারতের বিভিন্ন মহাপুরুষেরা লড়াই করে গেছেন। এই প্রসঙ্গে আমাদের দেশের সংবিধান রচয়িতা ডঃ আম্বেদকরের কথা স্মরণ করা যেতে পারে। অস্পৃশ্যতার জন্য তাঁকে সারাজীবন লানা, ঘৃণা, অবহেলা সহ্য করতে হয়েছে।

উপসংহার

এর আগে বুঝতে হবে যে যাবতীয় কুসংস্কারের সঙ্গে সঙ্গে এই ছুঁৎমার্গের বিরুদ্ধে আমাদের সচেতন হতে হবে। তবেই তো সমাজ-জীবন হবে সুন্দর। মানুষের প্রতি মানুষের এই অবহেলা, ঘৃণা, অপমান, লানা কোন দিনই সমাজ জীবনকে উন্নত করতে পারে না—বরং ধ্বংসের পথেই টেনে নিয়ে যায়।

এই প্রবন্ধের সাহায্যে লেখা যায় :
1. অস্পৃশ্যতা ও বর্তমান সমাজ।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url