টেলিভিশন রচনা বা দূরদর্শন রচনা

টেলিভিশন রচনা

ভূমিকা

আধুনিক বিজ্ঞানের আর একটি মহামূল্য দান ‘টেলিভিশন’। বেতারের মাধ্যমে দূরের মানুষের কণ্ঠস্বর শোনা যেত কিন্তু টেলিভিশন অথবা দূরদর্শনের মাধ্যমে শুধু কণ্ঠস্বর নয় সেই মানুষটিকে দূরদর্শনের পর্দায় একই সঙ্গে দেখার সুযোগ করে দিল বৈজ্ঞানিক গবেষণা।

আবিষ্কার 

দূরদর্শনকে বেতার ও চলচিত্রের সংযুক্ত রূপ বলা যেতে পারে। জন লেসি বেয়ার্ড দূরদর্শনের প্রথম ও প্রধান আবিষ্কর্তা। দূরদর্শন আলো, বিদ্যুৎ এবং ফটোগ্রাফীর মিশ্র ফল। জন লেসি বেয়ার্ড দূরদর্শনে এই তিনটিকে কাজে লাগিয়েছেন। দূরদর্শন ইথারের সাহায্যে যেমন বক্তার কণ্ঠস্বর প্রেরকযন্ত্রের দ্বারা উৎক্ষিপ্ত হয় তেমনি শক্তিশালী ক্যামেরার সাহায্যে বক্তার ছবিও ইথার সমুদ্রে প্রেরকযন্ত্রের সাহায্যে পাঠানো হয়। গ্রাহক যন্ত্র সেই কণ্ঠস্বর এবং আলোকচিত্র পরিবেশন করে। জন লেসি বেয়ার্ড ছাড়া বৈজ্ঞানিক কর্ণেরও এই ব্যাপারে যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দ হতে ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দূরদর্শন নিয়ে অনেক পরীক্ষা হয়েছে। অবশেষে ১৯৩০ সাল হতে আনুষ্ঠানিকভাবে দূরদর্শন প্রদর্শন আরম্ভ হয়েছে।

আনন্দ দানের মাধ্যম

দূরদর্শনের ভূমিকা বেতারের মতই। তবে বেতার অপেক্ষা আনন্দ দানের মাধ্যম হিসেবে দূরদর্শন চলচ্চিত্রের মতই ভূমিকা পালন করে। দূরদর্শনের দ্বারা আমরা বিভিন্ন দেশের সংবাদ জানতে পারি। শুধু তাই নয়, সংবাদের সঙ্গে সেখানকার দৃশ্য আমাদের চোখের সামনে পর্দায় প্রতিফলিত হয়। দূরদর্শনের দ্বারা যাত্রা,থিয়েটার, সিনেমা, খেলাধূলা ইত্যাদি ঘরে বসে দেখা যায়। প্রিয় গায়কের অথবা বক্তার কণ্ঠস্বরের সঙ্গে সঙ্গে তাঁকেও পর্দায় দেখার আনন্দ কম নয়।

শিক্ষার মাধ্যম

দূরদর্শন শিক্ষাদানের একটি উল্লেখযোগ্য মাধ্যম। বেতারের মত দূরদর্শন বিজ্ঞান ও কারিগরী শিক্ষার অনুষ্ঠান প্রচার করে থাকে। পর্দায় উপযুক্ত ছবির মাধ্যমে গণশিক্ষা দানের এটি একটি উপযুক্ত মাধ্যম। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বিশেষ করে বিজ্ঞানের শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে দূরদর্শন খুবই উপকারী। বয়স্ক শিক্ষার ক্ষেত্রেও দূরদর্শনের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এছাড়া কৃষি, জনস্বাস্থ্য, কারিগরী ও বৃত্তি শিক্ষারও সহায়ক। জনমত
গঠন, জাতীয়তাবোধ এবং মানবিকতাবোধ দূরদর্শনের মাধ্যমে সহজে জাগ্রত হতে পারে।

দূরদর্শন ও আমাদের দেশ

পৃথিবীর অন্যান্য দেশের চেয়ে আমাদের দেশে দূরদর্শনের প্রসার দেরিতে হয়েছে। দিল্লীতে দূরদর্শনের সূচনা হয় ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে এবং নিয়মিত প্রদর্শনের ব্যবস্থা হয়েছে ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই আগস্ট হতে। দিল্লী ছাড়া মুম্বাই, চেন্নাই, কোলকাতা, কানপুর ও কাশ্মীরে দূরদর্শন কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। আমাদের দূরদর্শন জনসমাজে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।

উপসংহার

দূরদর্শনের উপকারিতা থাকলেও অপকারিতা কম নয়। দূরদর্শনের প্রদর্শনকাল সারাদিন হলেও সান্ধ্যকালীন অনুষ্ঠান সম্পর্কে প্রশ্ন থেকে যায়। এর ফলে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশুনার ক্ষতি হচ্ছে। দূরদর্শনের ফলে সিনেমা শিল্প মার খাচ্ছে। লোকে আগের মত আর সিনেমা গৃহে ভাড় করে না। খেলাধূলা দেখার জন্য আগে মাঠে যেতে হত, কিন্তু এখন দূরদর্শনের প্রদর্শনী ফলে প্রদর্শনী ম্যাচগুলিতে আগের মত টিকিট বিক্রি হয় না। তাছাড়া দূরদর্শন মানুষকে ঘরবন্দী করে ফেলেছে। মানুষ আগের মত আর পারস্পরিক সংযোগ সাধনে প্রয়াসী নয়। নিজের ঘরে বসে এই বিনোদন যন্ত্রের সাহায্যে মানুষ যে আনন্দ পায় তা আগে অনেকের সঙ্গে মিলে মিশে পেত। দূরদর্শনে প্রদর্শিত সিরিয়াল আজকাল শিশুমনে নানা সমস্যা সৃষ্টি করে। তাছাড়া অনেক সিরিয়ালে পরিবেশন এবং কাহিনি বিন্যাস পবিারের সকলের সঙ্গে বসে দেখার অনুপযুক্ত।
তবে দূরদর্শনকে মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করতে হবে। দূরদর্শনের যে অসুবিধা থাকুক না কেন এর কল্যাণময় দিকটি অনেক।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url