স্বামী বিবেকানন্দ রচনা
স্বামী বিবেকানন্দ রচনা
বীর সন্ন্যাসী বিবেকানন্দ জ্ঞানের আলোক শিখা,
ভারত আত্মার মূর্ত প্রতীক বিশ্বপ্রেমের লিখা।
ভূমিকা
আমাদের দেশে অনেক মহাপুরুষ জন্মগ্রহণ করেছেন—যাঁদের আমরা প্রাতঃস্মরণীয় বলে জানি, স্বামী বিবেকানন্দ তাঁদের মধ্যে অন্যতম। তিনি বাঙালি জাতির সম্মান এবং আমাদের হিন্দুধর্মের গরিমা বিশ্ববাসীর কাছে গৌরবের আসনে সুপ্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। তাঁর কর্মময় জীবনের প্রভাব আজও আমাদের নানা ভাবে অনুপ্রাণিত করে। তাই বিবেকানন্দ সমগ্র ভারতবাসীর কাছে একটি শ্রদ্ধাপূর্ণ নাম।
বাল্যজীবন ও শিক্ষা
বিবেকানন্দ ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দের ১২ই জানুয়ারি কলকাতার সিমলার বিখ্যাত দত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাল্যকালে তিনি খুবই দুরন্ত ছিলেন। তাঁর পিতা বিশ্বনাথ দত্ত লব্ধপ্রতিষ্ঠ উকিল ছিলেন। বিবেকানন্দের ডাক নাম ছিল ‘বিলে' এবং পোশাকি নাম ছিল নরেন্দ্রনাথ দত্ত। পরবর্তীকালে রামকৃষ্ণের শিষত্ব গ্রহণ করার পর তাঁর সন্ন্যাস জীবনে নাম হয় স্বামী বিবেকানন্দ।
বিবেকানন্দ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে বি. এ. পাশ করেন এবং কলেজে পড়ার সময় তিনি পাশ্চাত্য দর্শনের প্রতি আকৃষ্ট হন। এই দর্শন তাঁকে নাস্তিক করে তোলে। অবশ্য পরবর্তীকালে রামকৃষ্ণের সংস্পর্শে আসার পর তাঁর এই মত পরিবর্তিত হয়।
ভারত ভ্রমণ
রামকৃষ্ণের শিষ্যত্ব গ্রহণ এবং সন্ন্যাস গ্রহণের পর তিনি সারা ভারত পরিব্রাজক রূপে ভ্রমণ করেন। এই সময় বিভিন্ন স্থানে তিনি জনসাধারণের মাঝে ধর্ম সম্বন্ধে তাঁর ব্যক্তিগত অভিমত প্রকাশ করেন। হিন্দুধর্মের ভিতরের নানা গোঁড়ামি ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে তিনি প্রতিবাদ জানান। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন—মানুষের মধ্যেই ভগবান বাস করেন এবং এই কথাটি তিনি তাঁর এক কবিতায় প্রকাশ করেছিলেন—“জীবে প্রেম করে যেই জন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর”। জাতিভেদ প্রথাকে তিনি তীব্র ঘৃণা করতেন। তাই সমগ্র জাতির প্রতি তাঁর উদাত্ত আহ্বান ছিল—“হে ভারত ভুলিও না— নীচ জাতি, মূর্খ, দরিদ্র, অজ্ঞ, মুচি, মেথর তোমার রক্ত, তোমার ভাই।” বিবেকানন্দের এই মানবিকতাবোধ সে যুগের অন্ধ কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষদের মনে আলোর সঞ্চার করেছিল।
কর্মজীবন
রামকৃষ্ণের নির্দেশে ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে বিবেকানন্দ আমেরিকার শিকাগো শহরে বিশ্বধর্ম সম্মেলনে ভারতের প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। সেই ধর্মসভায় তিনি বিশ্ববাসীর কাছে ভারতের ধর্মমত সম্বন্ধে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেন এবং ভারতীয় ধর্মমত যে অন্য ধর্মমত অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ তা প্রমাণ করেন। এই সময় তিনি দীর্ঘদিন ভারতের বাইরে অবস্থান করেন। বহু বিদেশী নরনারী তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। এঁদের মধ্যে ভগিনী নিবেদিতার নাম উল্লেখযোগ্য। নিবেদিতার আসল নাম ছিল মার্গারেট নোবল। তিনি পরবর্তীকালে ভারতকে নিজের দেশ ভেবে জনসেবায় আত্মনিয়োগ করেন। এইভাবে বিবেকানন্দ হিন্দুধর্মের বাণী সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন।
শ্রীরামকৃষ্ণের তিরোধানের পর বিবেকানন্দ ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে গঙ্গার তীরে বেলুড় মঠের প্রতিষ্ঠা করেন। এই মঠের মাধ্যমে তিনি সেবা ধর্মের দিকটি প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আজ সারা ভারতে এবং ভারতের বাইরে নানা স্থানে এমনি বহু মঠ স্থাপিত হয়েছে এবং সর্বত্রই সেবাধর্ম মূলমন্ত্র হিসেবে গ্রহণ করে বিবেকানন্দ এবং রামকৃষ্ণের আদর্শ আজও প্রচারিত হয়ে আসছে।
সাহিত্য সাধনা
বিবেকানন্দ অনেক গ্রন্থ রচনা করে গেছেন। সারাজীবন ধরে তিনি যে সব বক্তৃতা দিয়েছেন তা সঙ্কলিত করে পুস্তক আকারে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি অনেকগুলি সুন্দর কবিতাও রচনা করেছেন। ১৯০২ খ্রিস্টাব্দের ৪ঠা জুলাই মাত্র ৩৯ বছর বয়সে তিনি বেলুড় মঠে দেহরক্ষা করেন।
উপসংহার
স্বামী বিবেকানন্দ আজ আমাদের মধ্যে বেঁচে নেই ঠিকই কিন্তু তাঁর বাণী দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষকে নতুন জীবনবোধে অনুপ্রাণিত করে চলেছে। তিনি ছিলেন মানবআত্মার প্রাণপুরুষ। তিনি কোনো দিন আমাদের মন থেকে মুছে যাবেন না।
এই প্রবন্ধের সাহায্যে লেখা যায় -
বীর সন্ন্যাসী বিবেকানন্দ
তোমার প্রিয় মহাপুরুষ
বিবেকানন্দের জীবন ও বাণী