নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু রচনা

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু রচনা

"জয় হিন্দ’ যার জীবনমন্ত্র, দেশসেবা যা'র কাম,
ভারত-মাতার বীর সন্তান, নেতাজি তাহার নাম।”

ভূমিকা

আমাদের দেশের স্বাধীনতা-সংগ্রামের ইতিহাসে যাঁদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে, নেতাজী সুভাষচন্দ্র তাঁদের মধ্যে অন্যতম। তাঁর সমস্ত জীবনই স্বাধীনতার জন্য উৎসর্গীকৃত। পরাধীনতার নাগপাশ থেকে ভারতমাতাকে মুক্ত করার জন্য তিনি বীরদর্পে ঘোষণা করেছিলেন— 'Give me blood, I shall give you Freedom.” “তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদেরকে স্বাধীনতা দেব।' দেশের জন্য তিনি সবকিছু ত্যাগ করেছিলেন বলেই তিনি দেশনেতা, নেতাজি তাই আমাদের গর্ব, আদর্শ এবং প্রেরণা।

জন্ম ও বংশপরিচয়

১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দের ২৩শে জানুয়ারি ওড়িশার কটক শহরে তাঁর জন্ম হয়। তাঁর পিতার নাম ছিল জানকীনাথ বসু, তিনি কটকের সরকারী উকিল ছিলেন। সুভাষচন্দ্রের মায়ের নাম ছিল প্রভাবতী দেবী। কলকাতার ভবানীপুরে সুভাষচন্দ্রের পিতার স্থায়ী বাস ছিল। তাঁর পৈত্রিক বাসভূমি ছিল চব্বিশ পরগণা জেলার কোদালিয়া গ্রামে। বর্তমানে ঐ গ্রামটির নাম রাখা হয়েছে সুভাষগ্রাম।

শিক্ষাজীবন

বাল্যকালে সুভাষচন্দ্র বসু কটকে এক খ্রিস্টান স্কুলে ভর্তি হন। এই খ্রিস্টান স্কুলে ভারতীয় ছাত্রদের উপর মোটেই ভালো ব্যবহার করা হত না। পরে তিনি কটকের র‍্যাভেনশ কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন। কটক শহরের এই বিদ্যালয় থেকেই ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে ম্যাট্রিক পাস করেন সুভাষচন্দ্র। তিনি বাল্যকাল থেকেই অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন। ম্যাট্রিক পরীক্ষায় তিনি দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন।
সুভাষচন্দ্র বসু কলকাতায় এসে প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। ওটেন নামক এক সাহেব অধ্যাপকের অন্যায় আচরণের প্রতিবাদ করার ফলে তিনি কলেজ থেকে বিতাড়িত হন। পরে স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের সহায়তায় স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে দর্শনে প্রথম শ্রেণীর অনার্স নিয়ে সঙ্গে বি. এ. পাস করেন। এরপর তিনি বিলেতে যান এবং সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় তিনি চতুর্থ স্থান অধিকার করেন। ইংরেজিতে তিনি ইংরেজ প্রতিযোগীদের পরাজিত করে প্রথম হন।

কর্মজীবন 

সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় পাস করার পর সুভাষচন্দ্র সরকারি চাকরি পান, কিন্তু তিনি ইংরেজ সরকারের অধীনে চাকরি গ্রহণ না করে স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগদান করেন। তিনি জাতীয় কংগ্রেসের একজন বিশিষ্ট নেতা। কলকাতা পৌরসভার মেয়র পদেও তিনি নির্বাচিত হন। পরে তিনি ‘ফরওয়ার্ড ব্লক’ দল গঠন করেন। বিভিন্ন জেলে তাঁকে দীর্ঘদিন কাটাতে হয়।

অন্তর্ধান ও আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন

দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় তাঁকে নিজের গৃহে আটকে থাকতে হয়। কিন্তু পুলিশের সতর্ক দৃষ্টি এড়িয়ে তিনি বাড়ি থেকে অন্তর্ধান করেন। ছদ্মবেশ ধারণ করে তিনি আফগানিস্তানের কাবুল হয়ে জার্মানির বার্লিনে যান সেখানে হিটলারের সঙ্গে দেখা করেন। এখানে তাঁর উদ্দেশ্য সফল হল না দেখে, হাজার হাজার মাইল পথ তিনি ডুবোজাহাজে করে পাড়ি দিয়ে চলে এলেন জাপানে। জাপান সরকারের সহায়তায় এবং রাসবিহারী বসুর আনুকূল্যে ‘আজাদ হিন্দ ফৌজ’ গঠন করলেন এবং এর নেতৃত্ব পেলেন সুভাষ। এই সৈন্য নিয়ে মুক্তিবাহিনী তৈরি করে এগিয়ে এলেন তিনি ভারতের পথে। ইংরেজ সৈন্যদের পরাভূত করে ইম্ফল ও কোহিমায় তিনি স্বাধীন ভারতের পতাকা ওড়ালেন। মুক্ত করলেন আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ। সুভাষচন্দ্র ছিলেন ‘আজাদ হিন্দ’-এর চোখের মণি। তিনি সকলের প্রিয়জন, আদরের ‘নেতাজি’। তাঁর একটিমাত্র শ্লোগান ছিল, ‘জয় হিন্দ’ অর্থাৎ স্বাধীন ভারতের জয়।

দুর্ঘটনা

১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে জাপানের পরাজয়ের সঙ্গে সঙ্গে নেতাজি আত্মগোপন করলেন। প্রচার হল বিমান দুর্ঘনায় তিনি মারা গেছেন।

উপসংহার 

নেতাজী আর ভারতবর্ষে ফিরে আসেননি, এখন পর্যন্ত অনেকের ধারণা নেতাজী সুভাষচন্দ্র জীবিত আছেন। আসলে সুভাষচন্দ্রের প্রভাব আমাদের দেশের মানুষের মনে খুবই ব্যাপক। সেজন্য তিনি বেঁচে থাকুন অথবা নাই থাকুন মানুষের মনে তিনি চিরদিন জাগ্রত থাকবেন। সমস্ত জাতিকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বলে তিনি আমাদের 'নেতাজী'।


✍️এই তথ্য নিয়ে আর যেসব রচনা লেখা যায়, সেগুলি হল : 
তেইশে জানুয়ারি 
তোমার আদর্শ দেশপ্রেমিক
তোমার প্রিয় দেশনেতা 
স্বাধীনতা সংগ্রামের এক মহান পুরুষ
তোমার জীবনের আদর্শ পুরুষ
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url