বাংলার কুটির শিল্প রচনা

বাংলার কুটির শিল্প প্রবন্ধ রচনা

ভূমিকা

ঘরে বসে যেসব শিল্প পরিচালনা করা হয় সেগুলোকে বলে কুটির শিল্প। কুটির শিল্প অল্প মূলধনে এবং অল্প লোক নিয়ে চালনা করা যায়। যন্ত্র-সভ্যতার আগে আমাদের দেশে কুটির শিল্পই ছিল একমাত্র শিল্পজাত দ্রব্যের উৎপাদনের মাধ্যম।

বাংলার কুটির শিল্প

এককালে আমাদের দেশ কুটির শিল্পের জন্য ছিল খুবই উন্নত ও প্রসিদ্ধ। বাংলার কুটির শিল্পের সমাদর ছিল পৃথিবীর সর্বত্র। ঢাকার মসলিন এক সময়ে সারা বিশ্বে মহাসমারোহে আদৃত হত। ইংরেজ এদেশে এসে ঢাকার এই সূক্ষ্ম শিল্প ধ্বংস করে দিয়েছিল। তাদের দেশের কলের কাপড়ের স্বার্থে। বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরের তসর শিল্প, নদীয়া জেলায় কৃষ্ণনগরের মৃৎশিল্প, মুর্শিদাবাদের কাঁসার শিল্প বাংলা দেশের বাইরেও প্রতিষ্ঠা এবং প্রসিদ্ধি লাভ করেছিল। কুম্ভকার, স্বর্ণকার, সূত্রধর, তন্তুবায় প্রভৃতি পেশাজাত শ্রেণি এককালে তাদের কুটির শিল্পের উপর নির্ভর করেই বেঁচে ছিল।

যন্ত্রশিল্প ও কুটির শিল্প

অষ্টাদশ শতকে শুরু হয় যন্ত্র শিল্পের যুগ। তখন থেকেই সব দেশে কুটির শিল্পের ধ্বংস আরম্ভ হয়। যন্ত্র অল্প সময়ে অল্প ব্যয়ে অনেক বেশি মাল উৎপাদনে সক্ষম। ফলে ক্ষুদ্রায়তন হস্তশিল্প যন্ত্রের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে বাধ্য হয়েছে। আমাদের দেশে ইংরেজরাই তাদের দেশের যন্ত্রে উৎপন্ন দ্রব্যসম্ভার বিক্রি করার জন্য পরিকল্পিত ভাবে কুটির শিল্পকে উৎখাত করেছে। গ্রামের অনেক হস্ত শিল্প ধ্বংস হওয়ায় আজ আমাদের দেশ গরীব হয়ে পড়েছে। বেকারের সংখ্যা তাই ক্রমেই বেড়ে চলেছে।

কুটির শিল্পের প্রয়োজনীয়তা

আমাদের ভারতবর্ষ এখনও কৃষির উপর নির্ভরশীল। কিন্তু বিভিন্ন কারণে শুধু কৃষির উপর নির্ভর করে লোকের সংসার চলছে না। দিনের পর দিন এইসব কৃষক ভূমিহীন বেকারে পরিণত হচ্ছে। গ্রামীণ অর্থনীতি ভেঙে পড়ায় সারা দেশের শিল্পেরও অগ্রগতি বাধা পাচ্ছে। যন্ত্রের যুগেও একথা আজ অস্বীকার করার উপায় নেই যে এখনও এমন অনেক বস্তু আছে যা কুটির শিল্পের মাধ্যমে করাই যুক্তিযুক্ত। তবে এর জন্য চাই প্রথম এবং প্রধান সরকারি উদ্যোগ। পিতল-কাঁসার বাসন, মাদুর, পাটি, কাঠের আসবাব-পত্র, মাটির পুতুল, সূচিশিল্প প্রভৃতি কুটির শিল্প যদি পরিকল্পিত সরকারি সাহায্য পায় তবে তার দ্বারা লক্ষ লক্ষ লোকের জীবিকার সমাধান হতে পারে।

উপসংহার

এখনও শিল্পকার্যের এমন অনেক দিক আছে যা মেশিনের সাহায্যে তৈরি করা কোন প্রকারেই সম্ভব নয়। এসব শিল্প সমবায় ভিত্তিতে গড়ে তোলা যায়। সুতরাং দেশের আর্থিক দুরবস্থার কথা চিন্তা করে দক্ষ ও শিক্ষিত ব্যক্তিদের কুটির শিল্পকে বাঁচিয়ে রেখে তার উন্নতির জন্য সচেষ্ট হওয়া একান্ত কর্তব্য।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url