কৃতজ্ঞতা রচনা

কৃতজ্ঞতা রচনা

ভূমিকা

মানবিক মূল্যবোধের সমুজ্জ্বল নিদর্শন হচ্ছে কৃতজ্ঞতাবোধ। কৃতজ্ঞতা বোধের জন্ম মানুষের হৃদয়বৃত্তি হতে। হৃদয়ের মধ্যে এই বোধটি লালিত পালিত হয় এবং কর্মের প্রতিদান হিসেবে হৃদয় স্বতস্ফূর্তভাবে কৃতজ্ঞতাবোধ প্রকাশ করে। তাই কৃতজ্ঞতা শব্দটি হৃদয়ানুভূতির একটি প্রস্ফুটিত ফুল। কৃতজ্ঞতাবোধ আছে বলেই মানবিক মূল্যবোধ মানুষকে এত আনন্দ দেয়।

কৃতজ্ঞতা কী

অভিধানে লেখা আছে উপকারীর উপকারকে স্বীকার করাকে কৃতজ্ঞতা বলে। মানুষ মানুষের উপকার করে। উপকার পেয়ে মানুষ আনন্দিত হয় ; সঙ্কট থেকে মুক্ত হয়। বিপদ থেকে মুক্ত হয়ে মানুষ আনন্দে আত্মহারা না হয়ে যদি উপকারীর উপকার বিনম্র ও সশ্রদ্ধ চিত্তে মনে রাখে তখনই তা কৃতজ্ঞতার রূপ গ্রহণ করে। কৃতজ্ঞতা এমনই একটা জিনিস যা চোখে দেখা যায় না বা হাতে ধরা যায় না। এই বোধটি মন ও হৃদয় হতে জন্মলাভ করে। শুধু তাই নয় এই বোধ থাকলে মানুষ প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠে।

কৃতজ্ঞতার স্বরূপ

তবে আধুনিক সমাজে মানুষ অনেক স্বার্থপর হয়ে গেছে। যে মানুষ উপকারীর উপকার স্বীকার করে না তাকে কৃতঘ্ন বলে। সংসারে এমন মানুষের সংখ্যা কম নয়। এই সব শ্রেণির মানুষকে মনুষ্যপদবাচ্য বলে মনে করা উচিত নয়। স্বার্থান্ধ মানুষেরা এই সমাজে বসবাস করে। সমাজের অন্য মানুষদের দেখে এই সব মানুষদের বিবেক শুদ্ধ হতে পারে। আজকাল দেখা যায় উপকার পেয়ে অনেকেই উপকারীকে ভুলে গিয়ে নিজের শক্তি-সামর্থের কথা জাহির করে। উপকারীর কথা তারা ভুলে যায়। এর ফলে ক্ষতি হয় দু’পক্ষেরই। যিনি উপকার পেয়েছেন তাঁর, এবং যিনি উপকার করেছেন তাঁরও। কারণ এই অভিজ্ঞতা উপকারী ব্যক্তিকে ব্যথিত করে। পরবর্তীকালে কারোর বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়তে দ্বিধা করতে পারেন। আর যিনি উপকার পেলেন তিনি যদি ব্যাপারটি মাথায় না রাখেন তাহলে সমাজের লোকের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে উঠতে পারেন। এটি একটি সামাজিক ক্ষতি। এই ধরনের সামাজিক দৃষ্টান্ত কোনো সভ্য দেশে হওয়া উচিত নয়। তাই কৃতজ্ঞতা বোধ এক অর্থে মানবিক শিষ্টাচার এবং সেই সঙ্গে সামাজিক শিষ্টাচারও বটে। এই বোধটি পরিবার থেকে প্রতিটি শিশুর মনে উপ্ত হওয়া উচিত।

উপসংহার 

মানুষের জীবন সীমিত। এই সীমারেখার মধ্যে মানুষের মত ফুলের বিকশিত ও সৌরভ ছড়ানো উচিত। কৃতজ্ঞতাবোধ এমনি একটি সৌরভ যা মানবজীবনকে নন্দিত করে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url