অরণ্য ও পরিবেশ রচনা
অরণ্য ও পরিবেশ রচনা
ভূমিকা
আধুনিক যুগের ইট-কাঠ-পাথরের সভ্যতায় ক্লান্ত হয়ে রবীন্দ্রনাথ প্রায় একশো বছর আগেই উচ্চারণ করেছিলেন——
“দাও ফিরে সে অরণ্য লও এ নগর।”
কিন্তু তাঁর প্রার্থনা পূরণ হয়নি। সভ্যতা বিস্তারের নামে মানুষ ক্রমাগত গ্রাস করেছে অরণ্যকে। আমাদের এই নগর কলকাতায়ও ছিল এককালে অনেক বৃক্ষ, রবীন্দ্রনাথ যাদের বলতেন ‘মৃত্তিকার বীর সন্তান’। গ্রামে, মফঃস্বলে ছিল প্রচুর গাছপালা, জলাভূমি ফলে প্রকৃতিতে ছিল একটা ভারসাম্য। কিন্তু আজ অরণ্য ও বৃক্ষ ছেদনের ফলে সর্বত্র পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে। দূষণের মাত্রা চলেছে বেড়েই।
সৃষ্টির প্রথম যুগের কথা
সুপ্রাচীনকালে আরণ্যক পরিবেশের মধ্যে ভারতীয় সভ্যতার চরম বিকাশ ঘটেছিল। সে যুগের মানুষ পরিবেশ ও নিজেদের রক্ষার্থে অরণ্যকে লালন-পালন করত।
নগর সভ্যতার বিস্তার ও অরণ্য ধ্বংস
বস্তুতপক্ষে নগর সভ্যতার বিস্তার ঘটেছে অরণ্য প্রকৃতিকে ধ্বংস করেই। পরিবেশের সুস্থতা ও স্বাভাবিকতা বজায় রাখার জন্য বাস্তুতন্ত্রের (Ecosystem) সাম্য রক্ষার জন্য ৩২-৩৫% বনাঞ্চল থাকা প্রয়োজন। কিন্তু ভারতে তার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২২-২৪% এবং পশ্চিমবঙ্গে এসে দাঁড়িয়েছে ১২-১৪%। এতে কখনো অর্থের লোভে, কখনো বিশাল প্রাসাদ গড়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে মানুষ অরণ্য ধ্বংস করছে। ফলে অরণ্যহীন এলাকায় জলবায়ু গিয়েছে বদলে, বৃষ্টি কমে গিয়ে কোথাও কোথাও বেড়েছে জলাভাব। সভ্যতার প্রসারের নামে সভ্যতার ধ্বংসের বীজ বপন করে চলেছে অদূরদর্শী মানুষ।
অরণ্য প্রাণীর অবস্থা
সভ্যতার ক্রমবিস্তারের ফলে গত ৫০-৬০ বছরের মধ্যে ভারতে একেবারে বিলুপ্ত হয়ে গেছে গোলাপি মাথা হাঁস। বিলুপ্ত হতে চলেছে সোনালি হনুমান, বন্যমহিষ, কস্তুরী মৃগ, উল্লুক, বুনো গাধা, গণ্ডার, কালো গলা সারস প্রভৃতি। হ্রাস পাচ্ছে সিংহ, হাতি, বাঘের সংখ্যাও।
বনসংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা
এই পরিস্থিতিতে মানুষ ও প্রাণীদের বাঁচতে ও বাঁচাতে হলে অরণ্য সংরক্ষণ ও বনসৃজন করা ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই। মানুষকে প্রথমেই বুঝতে হবে গাছপালাই খাদ্য জোগায়, বস্ত্রের উপাদান দেয়, শ্বাস নেবার প্রয়োজনীয় অক্সিজেন বাতাসে প্রদান করে, বৃষ্টিপাত নিয়ন্ত্রণ করে, মৃত্তিকাক্ষয় ও বন্যা রোধ করতে সহায়তা করে। তাই বনসংরক্ষণের উদ্দেশ্যে দেশে সরকারি নিয়ম প্রচলিত হয়েছে ঠিক তেমনই বৃক্ষ সংক্রান্ত আইন ভঙ্গকারীদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থাও হওয়া প্রয়োজন।
ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা
মানুষের মধ্যে অরণ্য ও পরিবেশ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে দেশের তরুণ সমাজকেই দায়িত্ব নিতে হবে। প্রতি বছর অরণ্য দিবস, পরিবেশ দিবস, বনমহোৎসব পালনের মধ্য দিয়ে বৃক্ষরোপণ করে মানুষকে আরও সচেতন করে তুলতে হবে। সরকারি খামার থেকে বিনামূল্যে গাছ এনে লাগানো ও তাদের বাঁচিয়ে রাখার মতো গুরু দায়িত্ব নিতে হবে। তবেই হয়তো কিছুদিনের মধ্যে সুফল পাওয়া যাবে।
উপসংহার
কোনো রকমই অরণ্যকে সংহার করা যাবে না। বরং আমাদের উচিত আরও বন-সৃজন। যেভাবেই হোক, অরণ্যকে আমাদের ধরে রাখতেই হবে।