বন সংরক্ষণ কাকে বলে? বন সংরক্ষণের উপায় এবং বন সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা
বন সংরক্ষণ ( Conservation of Forest)
উঃ যে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে উদ্ভিদ সম্পদের রক্ষা, প্রতিপালন ও সুষ্ঠু ব্যবহার করা হয় এবং নতুন উদ্ভিদ পুনস্থাপন করে, রোগ প্রতিরোধ করে এবং শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করে উদ্ভিদকুলকে টিকিয়ে রাখা হয় তাকে বন-সংরক্ষণ বলে।
বন সংরক্ষণ করা হয় কেন?
আজকাল নানানভাবে বনজ সম্পদের যথেষ্ট ক্ষয়-ক্ষতি হচ্ছে, যেমন : অগ্নিদগ্ধ হয়ে, যথেচ্ছ পরিমাণে গাছ কাটার ফলে, পশুচারণের ফলে অনেক উদ্ভিদের অঙ্কুরেই বিনষ্ট হওয়া, পশুদের দ্বারা পদদলিত হয়ে চারাগাছের মৃত্যু, কীট-পতঙ্গের আক্রমণে গাছ নষ্ট হয়ে যাওয়া, তৃণভোজী প্রাণীদের ভক্ষণের ফলে অনেক গাছের অকালেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সুতরাং বনকে যদি সংরক্ষণ করা না হয়, তাহলে তার পক্ষে আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় বস্তুর চাহিদা মেটানোও সম্ভব হবে না। এছাড়া বেপরোয়াভাবে গাছ কেটে ধ্বংস করার ফলে বন্যা, খরা প্রভৃতির প্রাদুর্ভাব খুব বেশী দেখা দেবে।
বনাঞ্চল এলাকা
সুস্থ পরিবেশ এবং বাস্তুতন্ত্রের সাম্য বজায় রাখার জন্য সমগ্র ভূখণ্ডের 32–35% বনাঞ্চল থাকা প্রয়োজন। কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে ভারতে বনাঞ্চল এলাকা মাত্র 22–24% এ এসে দাঁড়িয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা আরও ভয়াবহ, পশ্চিমবঙ্গের বনাঞ্চল এলাকা মাত্র 12-14%।
বন সংরক্ষণের উপায়
নিম্নলিখিত উপায়গুলির দ্বারা বন সংরক্ষণ করা যেতে পারে, যেমন :
1. অগ্নিদগ্ধ স্থানে পুনরায় বৃক্ষ রোপন করা।
2. গাছ কাটা স্থানে পুনরায় গাছ লাগান।
3. গাছ কাটার প্রয়োজন হলে খুব ঘন বন থেকে কেবলমাত্র পরিণত গাছ কাটা।
4. অপরিণত গাছ কাটা বন্ধ করা।
5. বাঞ্ছিত গাছের উপযুক্ত বৃদ্ধির জন্য অবাঞ্ছিত গাছ অর্থাৎ আগাছাগুলো (weeds) সমূলে উপড়ে ফেলা।
6. কীট-পতঙ্গের আক্রমণের হাত থেকে গাছকে রক্ষা করার জন্য উপযুক্ত গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করা এবং গাছে কীটনাশক ঔষধ ছিটানো।
7. বনজ উদ্ভিদের রোগাক্রমণ প্রতিরোধ করা।
৪. অশিক্ষিত শিকারী, ক্যাম্পার (camper) ও অন্যান্য কর্মচারীদের বনজ সম্পদ সংরক্ষণের জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা দেওয়া।
9. চারা গাছগুলোর সুস্থ ও স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত সেচ ব্যবস্থার উন্নতি সাধন করা।
10. বন সংরক্ষণের জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার কর্তৃক আইন প্রণয়ন করা এবং জাতীয় বনভূমি (National park) ও সংরক্ষিত বন (Reserve forest) স্থাপন করা।
বন সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা
বন বা অরণ্য প্রকৃতির সৃষ্টি এক অমূল্য সম্পদ। এর কাছ থেকে আমরা নানান নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পেয়ে থাকি, যেমন :
i) অন্ন, বস্ত্র, কাগজ, ভেষজ পদার্থ, আসবাবপত্র, গৃহনির্মাণ, যানবাহন নির্মাণ ইত্যাদির জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানের সরবরাহ অক্ষুণ্ণ রাখা।
ii) বিভিন্ন ধরনের ওষুধ প্রস্তুতির জন্য বিভিন্ন রকম ভেষজউদ্ভিদ অর্থাৎ বুনো-গাছপালা বনজ সম্পদেরই অবদান।
iii) বনকে কেন্দ্র করে অনেক মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে, যেমন : মধু সংগ্রহ, জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ ইত্যাদি। এবং
iv) পশুপাখীদের বাসস্থান ও তাদের খাদ্যের উৎসকে অক্ষুণ্ণ রাখা।
বন সংরক্ষণের উপযোগিতা
বন প্রকৃতির একটি অমূল্য সম্পদ। বন নষ্ট হয়ে গেলে বনভূমির খাদ্য শৃঙ্খল তথা বাস্তুতন্ত্রের বিঘ্ন ঘটবে। ফলে প্রাণীকুল ধ্বংস হয়ে যাবে। অন্যদিকে, আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের সরবরাহও লোপ পেয়ে যাবে। এছাড়া বন না থাকলে নদীর জলোচ্ছাসের ফলে একদিকে যেমন বন্যা দেখা দিতে পারে, অন্যদিকে তেমনি বৃষ্টিপাত কমে গিয়ে প্রকট খরার সৃষ্টি হতে পারে। সুতরাং বিভিন্ন রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ এড়ানোর জন্য এবং বনের খাদ্য-শৃঙ্খল যাতে বিঘ্নিত না হয়, তার জন্য বন সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
বন সংরক্ষণের প্রধান উদ্দেশ্য
বন সংরক্ষণের প্রধান উদ্দেশ্যগুলি হল-
(i) খাদ্য, বস্তু, ভেষজ পদার্থ, কাগজ, আসবাবপত্র ইত্যাদি আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীগুলির সরবরাহ অব্যাহত রাখা।
(ii) পশু পাখীদের আবাসস্থল ও খাদ্যসামগ্রীর উৎসকে অটুট রাখা।
(iii) প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বজায় রাখা।
(iv) বনভূমির খাদ্য-শৃঙ্খল তথা বাস্তরীতি অক্ষুণ্ণ রাখা।
(v) উদ্ভিদের স্থায়িত্ব বজায় রেখে বায়ু দূষণ রোধ করা, প্রকৃতিতে অক্সিজেনের উৎস বজায় রাখা, বন্যা ও খরা নিয়ন্ত্রণ করা এবং ভূমিক্ষয় রোধ করা।
(vi) উদ্ভিদকূল ভূ-জৈব রাসায়নিক চক্রের মৌল উপাদানের অনুপাতকে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
(vii) বন সকল বনজ প্রাণীদের আশ্রয় দান করে।