বোধ পরীক্ষণ কী? বোধ পরীক্ষণ কীভাবে করা হয় ? বোধ পরীক্ষণ উদাহরণ

বোধ পরীক্ষণ কী? বোধ পরীক্ষণ উদাহরণ

বোধ পরীক্ষণ কী?

উত্তরঃ বোধ পরীক্ষণ কথার আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে ‘অর্থবোধ’ বা ‘জ্ঞান যাচাই করা’। বাংলা ভাষায় লিখিত কোনো নির্বাচিত গদ্যাংশ বা অনুচ্ছেদ পড়ে সেই অংশে লেখকের বক্তব্য কী তা শিক্ষার্থী বুঝতে পেরেছে কিনা জানবার জন্য প্রশ্ন করা হয়। ওইসব প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিতে পারলেই বুঝতে হবে
শিক্ষার্থীর বিষয়বস্তু সম্পর্কে সঠিক ধারণা জন্মেছে। শিক্ষার্থীদের ভাষা সম্বন্ধে জ্ঞানলাভ হয়েছে কিনা জানবার জন্যই নির্বাচিত উদ্ধৃতাংশ বা অনুচ্ছেদ সম্বন্ধে প্রশ্ন করা হয়। এইরূপ পরীক্ষার নামই বোধ পরীক্ষণ। ইংরেজিতে বলা হয় Comprehension Test।

বোধ পরীক্ষণ কীভাবে করা হয় ?

উত্তরঃ বোধ পরীক্ষণের ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের প্রথমে একটা রচনাংশ দেওয়া হয় এবং সেই রচনাংশের উপর কিছু প্রশ্ন করা হয়। এর উদ্দেশ্য হল রচনাংশটি কতখানি মনোযোগের সঙ্গে পাঠ করে তার জ্ঞাতব্য বিষয় ও অর্থ ইত্যাদি ছাত্রছাত্রীরা বুঝতে বা ধরতে পেরেছে তা পরীক্ষা করা। প্রশ্নগুলির উত্তর দিতে গেলে অপ্রয়োজনীয় অংশ বাদ দিয়ে ঠিক প্রয়োজনীয় অংশই লিখতে হবে। সুতরাং বোধ পরীক্ষণ থেকে ছাত্রছাত্রীদের কোনো রচনার সারসংক্ষেপ করারও ক্ষমতা বাড়ে।
বোধ পরীক্ষণের জন্য যে সব প্রশ্ন করা হয়, সেগুলির ঠিকভাবে উত্তর দিতে গেলে নীচের পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়। যেমন—
ক) প্রদত্ত অনুচ্ছেদটি বারবার পড়ে বক্তব্য বিষয়টি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা করে নিতে হয়।
খ)প্রদত্ত প্রশ্নগুলি ভালোভাবে বুঝতে হবে।
গ) অপরিচিত শব্দ থাকলে তার অর্থ অনুমান করতে হবে যথাযথভাবে।
ঘ) প্রতিটি উত্তর যথাযথভাবে পৃথক করে লিখতে হবে।
উ) প্রদত্ত অনুচ্ছেদের বাইরের কোনো কথা উত্তরে দেওয়া চলবে না।
চ) অপ্রয়োজনীয় শব্দ পরিহার করতে হবে।
ছ) প্রদত্ত শব্দসমূহের বদলে নিজের ভাষায় উত্তর দিতে হবে।
জ) উত্তর দেওয়া শেষ হলে, উত্তরগুলি ঠিক হয়েছে কিনা, ভালোভাবে দেখে নেবে ও রচনাংশের সঙ্গে মিলিয়ে নেবে।

বোধ পরীক্ষণ উদাহরণ

উদাহরণ -১

অতি গরিব এক অন্ধ। তার ভারী দুঃখ—তার ঘরবাড়ি নাই, টাকাপয়সা নাই, ছেলেপিলে নাই, আর সে চোখে দেখতে পায় না। মনের দুঃখে অনেক কষ্টে তার দিন কাটে।
একদিন স্বর্গ থেকে দেবদূত এসে বললেন, “ওরে অন্ধ, তুই আর কাঁদিস নে, আমি তোকে বর দিতে এসেছি। তুই কী বর চাস আমায় বল। একটিমাত্র বর তুই পাবি, সুতরাং ভালো করে ভেবেচিন্তে বলিস।”
অন্ধ কী বর চাইবে ভেবেই পায় না। একবার বলতে চায়, আমার চোখে দৃষ্টি এনে দাও—আবার ভাবে শুধু দৃষ্টি দিয়ে করব কী, বলি টাকাপয়সা দাও কিংবা ঘরবাড়ি দাও। আবার মনে হয়, টাকাপয়সা ঘরবাড়ি বা কার জন্য চাই—আমার ছেলেপিলে কেউ নাই। আর দুদিন বাদেই যদি মরে যাই তাহলে
এ-সব চেয়েই-বা লাভ কী ? আর সব পেয়েও যদি মনের সুখটুকু না পাই, তাহলে তো সবই বৃথা। তার ভাবনা দেখে, দেবদূত বললেন, “আচ্ছা, তুই এখন না বলতে পারিস, না হয় আমি কাল আবার আসব, তখন বলিস। এর মধ্যে ভালো করে ভেবে রাখ।”
অন্ধ বেচারার আর সারারাত ঘুমই হল না। ভোরবেলা দেবদূত আবার ফিরে এসে বললেন, “আমি এসেছি,–এখন কী বর চাস বল।”
তখন অন্ধের বুদ্ধিটা হঠাৎ কেমন খুলে গেল। সে লাফিয়ে উঠে বলল, “আমায় খালি এই বর দিন যে আমি যেন হাসতে হাসতে দেখে যেতে পারি যে আমার নাতি-নাতনিরা চৌতলা বাড়িতে সোনার পালঙ্কে বসে আমার চারদিকে খেলা করছে।”
দেবদূত তার বর চাওয়ার বাহাদুরি দেখে হেসে বললেন, “আচ্ছা তাই হোক।”
একবরে অন্ধের ছেলেপিলে, ঘরবাড়ি, টাকা পয়সা, চোখের দৃষ্টি, অনেক বয়স মনের সুখ, সবই চেয়ে নেওয়া হল। 
[ একটি বর—সুকুমার রায়।]
প্রশ্ন
১। নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও :
(ক) “একটিমাত্র বর তুই পাবি।”—একথা কে কাকে বলেছেন?
(খ) “অন্ধ কী বর চাইবে ভেবেই পায় না।” -- অন্ধ বর চাইতে ভেবে পেল না কেন ?
(গ) অন্ধ শেষপর্যন্ত কী বর চাইল ?
(ঘ) অন্ধের বর পাওয়ার ফল কী হয়েছিল ?
(ঙ) গল্পটি থেকে অন্ধ লোকটির সম্বন্ধে তোমার কী ধারণা হল ?
২। নীচের কোন্ বক্তব্যটি ঠিক আর কোন বক্তব্যটি ভুল তা নির্দেশ করো :
(ক) দেবদূত অন্ধের বুদ্ধির পরীক্ষা করতে চেয়েছিলেন।
(খ) অন্ধ খুবই বোকা ছিল।
(গ) অন্ধ নিজেই দেবদূতের কাছ থেকে ভেবে দেখার জন্য একটি দিন চেয়েছিল।
(ঘ) দেবদূত আনন্দের সঙ্গে অন্ধকে বর দিয়েছিলেন।
(ঙ) দেবদূত অন্ধকে একটি বরের পরিবর্তে চারটি বর দিয়েছিলেন।
৩। নীচের বিষয়গুলি গল্পটি থেকে খুঁজে নিয়ে লেখো :
(ক) দুটি ধ্বন্যাত্মক অব্যয়।
(খ) যেখানে দেবতারা থাকেন।
(গ) আশীর্বাদের সমার্থক শব্দ।
(ঘ) দেবদূত যে অন্ধের যে ব্যবহার দেখে খুশি হয়েছিলেন।
(ঙ) চারতলা।
উত্তর
উদাহরণ ১ এর গল্পটি ভালোভাবে পড়ে প্রশ্নের উত্তর গল্পটি থেকে খুঁজে বের করতে হবে যেমন উপরের প্রশ্নের উত্তরগুলি করে দেয়া হলো-
১। (ক) একথা দেবদূত বলেছেন এক গরিব অন্ধকে।
(খ) দেবদূত তাকে মাত্র একটিই বর দেবেন। তাই অন্ধ ভেবে পেল না কী বর চাইবে। কারণ একবরে যদি দৃষ্টি ফিরে পায় আর টাকা পয়সা না থাকলে চোখের দৃষ্টি দিয়ে কী করবে। আবার যদি টাকা পয়সা, ঘরবাড়ি পায় তাহলে তা ভোগ করবে কে। তার তো কোনো ছেলেপিলে নেই। আবার সব পেয়ে মনের সুখ না থাকলে সবই তো বৃথা হয়ে যাবে। অতএব এখন একটা বর চাইতে হবে যাতে তার সব বাসনাই পূর্ণ হয়। তাই অন্ধ প্রথম দিন বর চাইতে পারল না। দেবদূতও তাকে আর একটা দিন ভাববার সুযোগ দিলেন।
(গ) দ্বিতীয় দিন অন্ধ দেবদূতের কাছে একটি বর চাইল—সে যেন হাসতে হাসতে দেখে যেতে পারে যে তার নাতি-নাতনিরা চৌতলা বাড়িতে সোনার পালঙ্কে বসে তার চারদিকে খেলা করছে।
(ঘ) অন্ধ একটা বরের মধ্য দিয়ে ছেলেপিলে, ঘরবাড়ি, টাকা পয়সা, চোখের দৃষ্টি, অনেক বয়স এবং মনের সুখ—সবই পেয়েছিল।
(ঙ) গল্পটি পড়ে মনে হল অন্ধটি বেশ বুদ্ধিমান এবং সংসার অভিজ্ঞ।
২। (ক) ঠিক। (খ) ভুল। (গ) ভুল। (ঘ) ঠিক। (ঙ) ভুল।
৩। (ক) ঘরবাড়ি—ছেলেপিলে। (খ) স্বর্গ। (গ) বর। (ঘ) দেবদূত হেসে বললেন....... (চ) চৌতলা।

উদাহরণ - ২

পশ্চিমের কোনো বড়ো শহরে এক মুসলমান ভদ্রলোক প্রায়ই একটি চিতাবাঘ নিয়ে রাস্তায় বার হতেন। তিনি আগে চলতেন আর তার চাকর বাঘের গলার শিকল ধরে পিছন পিছন যেত। একদিন ভদ্রলোকটির সঙ্গে আলাপ করে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আপনি সামান্য একটা শিকল বেঁধে এত বড়ো বাঘকে রাস্তায় বার করতে ভয় পান না? ওরা কখন কী করে বসে তার কি কিছু ঠিক আছে! যদি কারও ঘাড়ে পড়ে?' তিনি বললেন, ‘সে ভয় নেই। বেগম কারও ঘাড়ে পড়বে না। পাছে পথের লোক ভয় পায় তাই বাইরে ওর গলায় শিকল দিয়ে থাকি। ঘরে ও তো ছাড়াই থাকে। তখন যদি দেখেন আশ্চর্য হয়ে যাবেন। বেগম বাঘের স্বভাব একেবারে ভুলে গেছে। এখন ঠিক পোষা কুকুর-বিড়ালের মতো এঘর-সেঘর, বারান্দা-উঠোন এই করে বেড়ায়। বাড়ির ছেলেমেয়েরা পর্যন্ত ওর সঙ্গে ছুটোছুটি করতে ভয় পায় না। ভদ্রলোকটির কথা শুনে আমার আর একটি চিতাবাঘের কথা মনে পড়ল। তার নাম ছিল ‘সাই’। এক মেম তাকে পুষছিলেন। সে-ও বেগমের মতো মেমের ঘরে-বাইরে বাড়ির আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়াত।
[বেগম ও সাই –যোগীন্দ্রনাথ সরকার ||
প্রশ্ন
১। নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও :
(ক) ভদ্রলোক কীভাবে চিতাবাঘ নিয়ে রাস্তায় বের হতেন?
(খ) ভদ্রলোককে কী জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল ?
(গ) “তিনি বললেন”— তিনি কী বললেন ?
(ঘ) “এক মেম তাকে পুষেছিলেন।”—তাকে কে? তার স্বভাব কীরকম ছিল ?
(ঙ) অংশটুকু পড়ে তোমার কী মনে হয়েছে ?
২। হ্যাঁ বা না লেখো :
(ক) ভদ্রলোক কি চিতাবাঘের শিকল ধরে রাস্তায় বের হতেন? 
(খ) ভদ্রলোকের পিছন পিছন কি চাকর যেত? 
(গ) ভদ্রলোকটির চিতাবাঘের নাম কি বেগম ? 
(ঘ) আর একটি চিতাবাঘের নাম কি সাই ? 
(ঙ) মেমের চিতাবাঘ কি বাড়িতে খোলা থাকত।
৩। নীচের বিষয়গুলি প্রদত্ত অংশটি থেকে খুঁজে নিয়ে লেখো :
(ক) একটি জাতির নাম। 
(খ) নির্দিষ্ট কোনো দিন নয়। 
(গ) ইউরোপীয় নারী। 
(ঘ) বাঘের মতো ছোটো পশু। 
(ঙ) এখানে-ওখানে 
উত্তর
১। (ক) ভদ্রলোক আগে চলতেন আর তাঁর পিছনে চাকর চিতাবাঘের গলায় পরানো শিকল ধরে চলত।
(খ) ভদ্রলোককে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, তিনি সামান্য একটা শিকল বেঁধে এত বড়ো বাঘকে রাস্তায় বের করতে ভয় পান কিনা। কারণ এই ধরনের জন্তু কখন কী করে বসে তার ঠিক নেই। এমনকি কারো ঘাড়েও পড়তে পারে।
(গ) ভদ্রলোক বললেন যে, সে ভয় নেই। বেগম কারো ঘাড়ে পড়বে না। পাছে পথের লোক ভয় পায় তাই বাইরে ওর গলায় শিকল দিয়ে থাকি। ঘরে বাঘটি ছাড়াই থাকে। তখন দেখলে যে কেউ আশ্চর্য হয়ে যাবে। বেগম বাঘের স্বভাব একেবারে ভুলে গেছে। এখন ঠিক পোষা কুকুর-বিড়ালের মতো এঘরওঘর, বারান্দা-উঠোন করে বেড়ায়। বাড়ির ছেলেমেয়েরা পর্যন্ত ওর সঙ্গে ছুটোছুটি করতে ভয় পায় না।
(ঘ) এখানে “তাকে” বলতে একটি চিতাবাঘের কথা বলা হয়েছে। এই চিতাবাঘটিকে একজন মেম পুষছিলেন। চিতাবাঘটির নাম ছিল সাই। সে পোষা বিড়াল-কুকুরের মতো ঘরে-বাইরে, বাড়ির আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়াত।
(ঙ) অংশটুকু পড়ে মনে হয়েছে পোষ মানাতে পারলে চিতাবাঘও পোষা বিড়াল-কুকুরের মতো নিরীহ আচরণ করতে পারে।
২। (ক) না। (খ) হ্যাঁ। (গ) হ্যাঁ। (ঘ) হ্যাঁ। (ঙ) হ্যাঁ।
৩। (ক) মুসলমান। 
(খ) একদিন। 
(গ) মেম। 
(ঘ) বিড়াল।
(ঙ) আনাচে-কানাচে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url