পাইক বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল এবং পাইক বিদ্রোহ বিষয়ে প্রশ্ন উত্তর
পাইক বিদ্রোহ
ভূমিকা
জমিদার বা ভূস্বামীর শান্তিরক্ষার কাজে নিয়োজিত আধাসামরিক কর্মীদের পাইক বলা হয়। ব্রিটিশ কোম্পানির রাজস্বনীতির চাপে পড়ে বহু জমিদার তাঁদের জমিদারিস্বত্ব হারালে পাইকরা কর্মচ্যুত হয়ে পড়ে। পাইকরা ছিল প্রধানত কৃষক সম্প্রদায়ের কর্মঠ একদল তথাকথিত নিম্নবর্গের মানুষ। এই পাইকরা ওড়িশার খুরদা জেলার রাজার কর্মচ্যুত সেনাপতি বিদ্যাধর মহাপাত্রের নেতৃত্বে 1817 খ্রিস্টাব্দে যে বিদ্রোহ সংঘটিত করে ভারতের ইতিহাসে তা পাইক বিদ্রোহ নামে পরিচিত।
পাইক বিদ্রোহের কারণ
পাইক বিদ্রোহের উল্লেখযোগ্য কারণগুলি হল—
(i) কোম্পানির ভূমিরাজস্বনীতির ফলে বহু জমিদার তাদের জমিদারিস্বত্ব হারাতে থাকেন। ফলে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা পাইকরাও কর্মচ্যুত হয়ে পড়ে। এই কর্মহীন পাইকরা বুঝতে পারে তাদের দুর্দশার জন্য প্রধান দায়ী ব্রিটিশ কোম্পানি। ফলে স্বাভাবিক কারণেই পাইকরা ব্রিটিশ-বিরোধী বিদ্রোহ করে।
(ii) শুধু ভূমিরাজস্ব নীতির কারণেই নয়, কোম্পানির বিরোধিতা করায় বহু জমিদারকে চরম শাস্তিস্বরূপ তার জমিদারি কেড়ে নেয় কোম্পানি। ফলে পাইকরাও কর্মচ্যুত হয়ে পড়ে এবং তাদের ক্ষোভ তীব্র আকার ধারণ করে বিদ্রোহের রূপ নেয়।
(iii) পাইকরা ছিল মূলত বেতনভোগী কর্মচারী। অনেকেই আবার বেতনের পরিবর্তে জমিদারির কিছু অংশ জায়গির হিসাবে পেত এবং সেই জায়গির পাওয়া জমির খাজনা বা রাজস্ব তারা ভোগ করত। জমিদারি হারানোর ফলে তারাও কর্মচ্যুত হয়ে পড়ে এবং বিদ্রোহে সামিল হয়।
পাইক বিদ্রোহের ফলাফল
পাইক বিদ্রোহ দেখা দিয়েছিল প্রধানত ওড়িশা অঞ্চলে। খুরদার রাজর কর্মচ্যুত সেনাধ্যক্ষ বিদ্যাধর মহাপাত্র অন্যান্য কর্মচ্যুত পাইকদের নিয়ে এই বিদ্রোহ সংঘটিত করে। খুরদার অঞ্চলে প্রথম এই বিদ্রোহ সংঘটিত হয় বলে এর অপর নাম খুরদার বিদ্রোহ। যাইহোক বিদ্রোহীরা প্রথমে কোম্পানির অফিস আদালতে আক্রমন চালায় এবং পরে পুলিশ ফাঁড়িতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এই তীব্র আক্রমনে প্রায় একশো জন ব্রিটিশ কর্মী মারা যায় এবং আহত হয় বেশ কয়েকজন। এই মৃত্যু ও আহতের রক্ত যেন বিদ্রোহের আন্দোলনে আরও গতিসঞ্জার করে। বিদ্রোহীরা সরকারি কোশাগার লুঠ করে তাতে অগ্নিসংযোগ করে। কোশাগারের আগুনের লেলিহান শিখার মতো দিকে দিকে বিদ্রোহের আগুন ছড়িয়ে পড়ে। একসময় সমগ্র দক্ষিণ ওড়িশায় বিদ্রোহের ছায়া পড়ে। পর্যুদস্ত ব্রিটিশ কোম্পানি বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সেনা সমাবেশ করে নির্মম ভাবে পাইক বিদ্রোহ দমন করেছিল।
পাইক বিদ্রোহের গুরুত্ব
ভারতের ইতিহাসে পাইক বিদ্রোহের গুরুত্ব অকিঞ্চিৎকর নয়। এর যেমন ইতিবাচক দিক আছে, তেমনই আছে কিছু নেতিবাচক দিকও। ইতিবাচক দিক হল প্রধানত ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনের ক্ষেত্রে একটি নতুন দিকচিহ্ন রচনা করা। পাইক সম্প্রদায়ের মতো বঞ্চিত পেশার একদল পদচ্যুত কর্মীও যে আন্দোলন করতে পারে তা দেখিয়ে দিয়েছিল পাইকরা। আর নেতিবাচক দিকটি হল— এই ঘটনার পর থেকে ব্রিটিশ কোম্পানি ভারতীয় পাইক বা সিপাহিদের সন্দেহের চোখে দেখত। এই সন্দেহই একসময় ভারতে সিপাহি বিদ্রোহের পথ রচনা করে।
পাইক বিদ্রোহ বিষয়ে প্রশ্ন উত্তর
1. পাইক বিদ্রোহের দুজন নেতার নাম কি?
উঃ বিদ্যাধর মহাপাত্র
2. পাইক কারা?
উঃ জমিদার বা ভূস্বামীর শান্তিরক্ষার কাজে নিয়োজিত আধাসামরিক কর্মীদের পাইক বলা হয়।
3. পাইক বিদ্রোহ কবে হয়েছিল?
উঃ 1817 খ্রিস্টাব্দে পাইক বিদ্রোহ সংঘটিত হয়।
4. পাইক বিদ্রোহ কোথায় হয়েছিল?
উঃ ওড়িশা রাজ্যের খুরদা জেলার প্রথম হয়েছিল।
5. পাইক কাদের বলা হয়?
উঃ জমিদার বা ভূস্বামীর শান্তিরক্ষার কাজে নিয়োজিত আধাসামরিক কর্মীদের পাইক বলা হয়।