কুবলাই খান কে ছিলেন? কুবলাই খান বিখ্যাত কেন? কুবলাই খানের কৃতিত্ব ও শাসনকাল

কুবলাই খান ও তাঁর কৃতিত্ব

কুবলাই খান কে ছিলেন?

উঃ কুবলাই খান ছিলেন চেঙ্গিস খাঁর পৌত্র।

কুবলাই খানের শাসনকাল ও কৃতিত্ব

কুবলাই খান ১২১৫ খ্রিস্টাব্দে মঙ্গোলিয়ান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ছিলেন তলুই এবং মাতা সরঘাঘতানি বেকি। তিনি ছিলেন বাবা মার দ্বিতীয় পুত্র। মংকে খান ছিলেন তাঁর বড় ভাই এবং তার ছোট ভাই ছিলেন আরিক বোকে (১২১৯-১২৬৬)। মঙ্গোল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা চেঙ্গিস খানের নাতি ছিলেন কুবলাই খান। কুবলাই খানের বয়স যখন ১২ বছর তখন তার দাদু চেঙ্গিস খান মারা যান। কুবলাইয়ের বড় ভাই মংকে (১২৫১-১২৫৯) মঙ্গোল সাম্রাজ্যের শাসক থাকাকালীন কুবলাইকে মঙ্গোল-নিয়ন্ত্রিত উত্তর চীনের ভাইসরয় ( ইলখান ) পদ দেওয়া হয়েছিল। কুবলাই খান সেখানে সমর্থনের একটি নেটওয়ার্ক এবং প্রতিভাবান উপদেষ্টাদের একটি দল তৈরি করার সুযোগ করেন। তখন দক্ষিণ চীনে তখন সং রাজবংশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল। কুবলাই খান এবং তার ভাই মংকে-এর সাথে ব্যক্তিগতভাবে দক্ষিণ চীনে প্রচারণা চালায়। সং রাজবংশের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে মঙ্গোল বাহিনী তিব্বতের মধ্য দিয়ে এবং ইউনানে চলে যায়, ১২৫৭ সালে ডালি রাজ্যকে পরাজিত করে। তারপর দক্ষিণ ও পশ্চিম দিক থেকে আক্রমণ করার জন্য চার-মুখী আক্রমণের পরিকল্পনা করা হচ্ছিল কিন্তু ১১ আগস্ট ১২৫৯-এ অসুস্থতা থেকে মংকে-এর অপ্রত্যাশিত ভাবে মৃত্যু হলে পরিকল্পনা বন্ধ হয়ে যায়। ১২৫৯ সালে মংকে মারা গেলে উত্তরসূরি কে হবে সে নিয়ে মঙ্গোল সেনাপতিদের মধ্যে কোলাহল শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত দুটি প্রধান প্রার্থীর মধ্যে একটি গৃহযুদ্ধ শুরু হয়: কুবলাই এবং তার ছোট ভাই আরিক বোকে দুজনেই নিজেদের নতুন খান ঘোষণা করেছিলেন। আরিক বোকে কাছে কারাকোরাম নিয়ন্ত্রণ ছিল কিন্তু মধ্য এশিয়ার রাজকুমারদের সমর্থন, মঙ্গোল সাম্রাজ্যের দেহরক্ষীর উপর তার নিয়ন্ত্রণ এবং চীনের ভাইসরয় হিসাবে তার হাতে থাকা বিশাল উন্নত সম্পদের জন্য ১২৬০ সালে মঙ্গোল উপজাতি প্রধানদের একটি বৈঠকে কুবলাইকে মঙ্গোল সাম্রাজ্যের মহান খান ('সর্বজনীন শাসক') ঘোষণা করে। এরপর ১২৭৯ খ্রিস্টাব্দে কুবলাই খাঁ সুং সম্রাটকে পরাজিত করে একচ্ছত্র অধিপতিরূপে চিনে ইউয়ান বংশের প্রতিষ্ঠা করেন। তার ফলে প্রায় নব্বই বছর ধরে চিনে মোঙ্গল আধিপত্য বজায় ছিল। চিন দেশ কুবলাই খাঁর ভালো লেগেছিল। তিনি কারাকোরাম থেকে চিনের পিকিং-এ তাঁর রাজধানী স্থানান্তরিত করেন। কুবলাই খাঁ এক বিশাল সাম্রাজ্যের অধীশ্বর ছিলেন। তিনি তিব্বত, ইন্দোচিন ও ব্রহ্মদেশ জয় করেন। তিনি জাপান ও মালয়ে অভিযান পাঠিয়েছিলেন। চিনে আসার পদ্ধতি তিনি গ্রহণ করেছিলেন। চিনারাও তাঁকে নিজেদেরই একজন মনে করত। কুবলাই খান তিব্বতি সামানপন্থী বৌদ্ধ ছিলেন। তিনি সকল ধর্মের প্রতি উদার মনোভাব পোষণ করতেন। কুবলাই খান বাস্তববুদ্ধি-সম্পন্ন সুশাসক ছিলেন। খাদ্যের সুষম বণ্টনের জন্য তিনি সরকারি শস্যভাণ্ডার নির্মাণ করেছিলেন। নতুন রাস্তাঘাট নির্মাণ করে তিনি যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটান। অন্য ধর্মের প্রতি সহিষ্ণুতা দেখিয়ে তিনি এক বিরল শাসন দক্ষতার নজির রেখেছিলেন। তাঁর রাজত্বকালকে (১২৬০-১২৯৪ খ্রিঃ) মোঙ্গল শাসনের স্বর্ণযুগ বলা হয়।

কুবলাই খান কীভাবে মোঙ্গল শক্তিকে সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেন?

উত্তরঃ ১২৬০ খ্রিস্টাব্দে কুবলাই খান মোঙ্গল সাম্রাজ্যের সম্রাট হন ও সম্পূর্ণ চিন অধিকার করে মোঙ্গল শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি পিকিংয়ে রাজধানী স্থানান্তরিত করেন এবং চিনা সম্রাটদের অনুকরণে 'স্বর্গপুত্র’ উপাধি গ্রহণ করেন। কুবলাই খাঁ বাস্তববুদ্ধিসম্পন্ন সুশাসক ছিলেন। খাদ্যের সুষম বণ্টনের জন্য তিনি সরকারি শস্য ভাণ্ডার নির্মাণ করেছিলেন। নতুন রাস্তাঘাট নির্মাণ করে তিনি যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটান। অন্য ধর্মের প্রতি সহিষ্ণুতা দেখিয়ে তিনি এক বিরল শাসন দক্ষতার নজির রেখেছিলেন। তাঁর রাজত্বকাল (১২৬০-১২৯৪ খ্রিঃ) মোঙ্গল শাসনের স্বর্ণযুগ।

প্রশ্ন উত্তর পর্ব

১. মোঙ্গল কারা?
উত্তরঃ মোঙ্গল হল মধ্য এশিয়ার রুক্ষমাটি, বৃক্ষবিরল ঊষর অঞ্চলে যে দুর্ধর্ষ যাযাবর জাতির বাস ছিল তাদের মোঙ্গল বলা হত। মোঙ্গলরা ছিল ভ্রাম্যমান ও বর্বর।
২. মোঙ্গলদের নেতা কে ছিলেন?
উত্তরঃ মোঙ্গলদের নেতা ছিলেন তেমুজিন। তিনি চেঙ্গিস খাঁ নামে ইতিহাসে পরিচিত।
৩. চেঙ্গিস খাঁ কত খ্রিস্টাব্দে পিকিং অধিকার করেন?
উত্তরঃ চেঙ্গিস খাঁ ১২১৪ খ্রিস্টাব্দে পিকিং অধিকার করেন।
৪. কুবলাই খান বিখ্যাত কেন?
উঃ কুবলাই খান ছিলেন একমাত্র মঙ্গোল সম্রাট যিনি ১২৭৯ সালে চীন জয় করেন, সমগ্র চীনের প্রথম ইউয়ান শাসক হন। শাসক হিসেবে তিনি কাগজের টাকাকে বিনিময়ের একমাত্র মাধ্যম বানিয়েছিলেন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url