ভারতের জাতীয় পতাকা রচনা

ভারতের জাতীয় পতাকা রচনা

ভূমিকা

পৃথিবীর প্রতিটি দেশেরই আছে তাদের নিজস্ব জাতীয় পতাকা। ভারতেরও আছে নিজস্ব জাতীয় পতাকা। এই জাতীয় পতাকা প্রতিটি ভারতবাসীর কাছে অতি পবিত্র। এই পতাকা ভারতের সভ্যতা, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির প্রতীক।

জাতীয় পতাকার ইতিহাস

ভারতে প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলিত হয়েছিল কলকাতার পার্শীবাগানে ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের ৭ই আগস্ট। এর রং ছিল সমান্তরালভাবে লাল, হলুদ এবং সবুজ। এই পতাকার লাল অংশে ছিল ৮টি পদ্ম, হলুদ অংশে লেখা ছিল ‘বন্দেমাতরম্’ এবং সবুজ অংশে সূর্য, অর্ধচন্দ্র এবং তারা। ভারতের বাইরে প্যারিসে, নির্বাসিত বিপ্লবীরা ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে যে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিলেন সেটির রং ছিল আগের পতাকার মতোই তবে ভিতরে সামান্য পরিবর্তন ছিল। ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটি কর্তৃক যে জাতীয় পতাকাটি উত্তোলিত হয়, তাতে সমান্তরালভাবে গেরুয়া সাদা এবং সবুজ রঙ ছিল। এবং সাদা রঙের মাঝখানে চরকা আঁকা ছিল। এরপর ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই আগস্ট স্বাধীন ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলিত হয়।

বর্তমান জাতীয় পতাকার বর্ণনা  

স্বাধীন ভারতের জাতীয় পতাকায় সমান্তরালভাবে তিনটি রঙ আছে। উপরে আছে গেরুয়া রঙ, মাঝখানে সাদা এবং নীচে সবুজ রঙ। মাঝখানে সাদা অংশে আছে গাঢ় নীল রঙ-এ অশোক চক্র। অশোক চক্রের মাঝে আছে ২৪টি দণ্ড। এটি স্বাধীনতা, ঐক্য ও মর্যাদার প্রতীক। জাতীয় পতাকার নকশা করেন পিঙ্গালি ভেঙ্কাইয়া। ১৯৪৭ সালের ২২ জুলাই কেন্দ্রীয় সংবিধান সভায় প্রথম নতুন পতাকা অনুমোদিত হয়। ত্রিবর্ণ রঞ্জিত পতাকা প্রথম উত্তোলিত হয় ৩১ ডিসেম্বর ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে।

পতাকার রঙ ও চক্রের অর্থ

জাতীয় পতাকার রঙগুলি বিভিন্ন আদর্শের প্রতীক। গেরুয়া রঙ ত্যাগ, সেবা এবং সাহসের প্রতীক। সাদা রঙ শান্তি, পবিত্রতা এবং সত্যের প্রতীক। সবুজ রঙ জীবনধর্ম এবং কর্মশক্তির প্রতীক। অশোক চক্র উন্নতি এবং প্রগতির প্রতীক। ২৪টি দণ্ড দিবারাত্রি কর্মব্যস্ততার প্রতীক।

জাতীয় পতাকা ব্যবহারের নিয়ম

জাতীয় পতাকা ব্যবহারের নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। কেবলমাত্র জাতীয় উৎসবের দিনগুলিতে প্রত্যেকের বাড়ীতে এই পতাকা তোলা চলবে, পরে সন্ধ্যার সময় নামিয়ে নিতে হবে। জাতীয় পতাকার মর্যাদা এবং স্থান অন্য সমস্ত পতাকার ঊর্ধ্বে। ছেঁড়া কিংবা ময়লা পতাকা তোলা চলবে না। ব্যবসায়িক বা অন্য কোন কারণে জাতীয় পতাকা ব্যবহার করা চলবে না। শোক পালনের উদ্দেশ্যে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখতে হবে। জাতীয় পতাকা কোন ব্যক্তি বা বস্তুর সামনে নত করা চলবে না। সরকারী প্রধান প্রধান অফিসগুলিতে জাতীয় পতাকা উত্তোলিত থাকে। জাতীয় পতাকাকে যথোচিত মর্যাদা দিতে হবে।

উপসংহার

বহু আত্মত্যাগ এবং রক্তক্ষয়ের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা লাভ করেছি। সেই স্বাধীনতার প্রতীক হল জাতীয় পতাকা। জাতীয় পতাকাকে সম্মান জানানোর অর্থ দেশকে সম্মান জানানো। কোন ভাবেই, কোন কারণেই যাতে জাতীয় পতাকার অমর্যাদা না হয় সেবিষয়ে প্রত্যেক ভারতবাসীকে সতর্ক থাকতে হয়।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url