সংখ্যাবাচক শব্দ কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি এবং সংখ্যাবাচক শব্দ ও পূরণবাচক শব্দের পার্থক্য
সংখ্যাবাচক শব্দ কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি এবং সংখ্যাবাচক শব্দ ও পূরণবাচক শব্দের পার্থক্য
যে শব্দ দ্বারা ব্যক্তি বা বস্তুর সংখ্যা বােঝানাে হয়, তাকে সংখ্যাবাচক শব্দ বলে।সংখ্যাবাচক শব্দ কত প্রকার ও কি কি?
বাংলা ভাষায় কিছু সংখ্যাবাচক শব্দ প্রচলিত আছে। এগুলিকে সাধারণত চার ভাগে ভাগ করা যায় যথা-
1. বিশুদ্ধ সংখ্যাবাচক শব্দ
2. ভগ্নাংশিক শব্দ
3. গুণিতক শব্দ
4. পূরণবাচক শব্দ।
বিশুদ্ধ সংখ্যাবাচক শব্দ
এই শব্দগুলি সাধারণত গণনার কাজে লাগে। যেমন—
এক, দুই, তিন,চার, পঁচিশ,...... ছিয়াত্তর, সাতানব্বই, একশ’ ইত্যাদি। ক্রমিক সংখ্যা শব্দগুলি বিশেষণরূপে ব্যবহৃত হয়। যেমন—সাতজন, পাঁচবার, তিন ঘর ইত্যাদি।
অনেক সময় সংখ্যা শব্দের নির্দেশক শব্দ অথবা প্রত্যয় যুক্ত বলে বিশেষণ রূপে ব্যবহৃত হয়। যেমন— তিন মিটার কাপড়; দশগজি শাড়ি; পাঁচ কিলাে চাল; বারাে হাত কাকুড়ের তের হাত বিচি ইত্যাদি।
ভগ্নাংশিক শব্দ
ভগ্নাংশিক শব্দ বলতে ভগ্নের অংশ বােঝায়। সাধারণতঃ আধ, দেড়, আড়াই, সাড়ে, সিকি, পােয়া ইত্যাদি শব্দ দ্বারা ভগ্নাংশিক শব্দ গঠিত হয়। যেমন-
1. আধ = অর্ধ (অর্ধেক) যেমন—আধখানা বিস্কুট; আধলা পয়সা; আধ পয়সা।
2. দেড় = যেমন—এখন দেড়টা বাজে; দেড়খানা ঘরে আমাদের বাস।
3. আড়াই = অর্ধ দ্বিতীয় যেমন—আড়াইটা বাজে; আড়াই সের দুধ।
4. সাড়ে = সার্ধ। যেমন—সাড়ে সাত। সাড়ে সাত গণ্ডার জমিদার।
5. সিকি = একের চার অর্থাৎ চারভাগের একভাগ। যেমন—এক সিকি দক্ষিণা দাও; পাঁচ সিকে মানসিক করবে; সাত সিকে দিয়ে এই খাতা কিনেছি।
6. পােয়া = চারভাগের একভাগ। তরল পদার্থ মাপার জন্য ব্যবহৃত হয়। যেমন—এক পােয়া দুধ। অনেক সময় গ্রামাঞ্চলে রাস্তার মাপ বােঝাবার জন্যও পােয়া ব্যবহৃত হয়।
যেমন—এক পােয়া রাস্তা। (অর্থাৎ এক মাইলের চার ভাগের একভাগ)
7. পৌণে = পাদোন। পৌনে একটায় আমি তােমার বাড়ি যাব।
8. আনা = ষোল ভাগের এক ভাগ। আনা আনা দরে পাওয়া যায় আনারস।
গুণিতক শব্দ
দুনা, তেগুণা, চৌগুণ ইত্যাদি শব্দযােগে গুণিতক শব্দগুলি গঠিত হয়।
যেমন—আয়ের চেয়ে ব্যয় দুননা (দু’গুণ)। লােকটি তেগুণ (তিন গুণ) খায়।
পূরণবাচক শব্দ
বাংলায় পূরণবাচক শব্দ সাধারণত মাসের তারিখ বােঝাবার জন্য ব্যবহৃত হয়। যেমন—পয়লা, দোসরা, তেসরা, চৌঠা, পাঁচই, ছয়ই, সাতই, আটই, নয়ই, দশই, এগারই, সাতাশে, আটাশে ইত্যাদি। এই শব্দগুলির গঠনের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত
নিয়মগুলি সাধারণত মানা হয়। যেমন—
ক. পয়লা = প্রথম + ইল = পহেলা
দোসরা = দ্বিসর ইত্যাদি।
খ.সংখ্যা শব্দের শেষে 'ই’যােগ করে, সাধারণতঃ মাসের তারিখ বােঝাতে ব্যবহৃত হয়।
যেমন—পাঁচই = পাঁচ + ই; ছয়ই = ছয় + ই; সাতই = সাত + ই।
গ. সংখ্যা শব্দের শেষে ‘এ’ যােগ করে। যেমন—
বাইশে = বাইশ + এ; তেইশে = তেইশ + এ; ত্রিশে = ত্রিশ + এ।
ঘ. আধুনিক বাংলায় ষষ্ঠী বিভক্তি র’এবং এর’ যােগে পূরণবাচক শব্দ গঠন করা হয়।
যেমন-
দুই-এর নামতা ; ষাটের দশক ; পাঁচের কোঠা। বারাের অধ্যায় ইত্যাদি।
সংখ্যাবাচক শব্দ ও পূরণবাচক শব্দের পার্থক্য
সংখ্যাবাচক শব্দ | পূরণবাচক শব্দ |
---|---|
1.সংখ্যাবাচক শব্দ কোন গণনাযােগ্য বিশেষ্যের সংখ্যা প্রকাশ করে। | 1. পূরণবাচক শব্দ কোন গণনাযােগ্য বিশেষ্যের ক্রমিক অবস্থান নির্ণয় করে। |
2.এক ছাড়া সকল সংখ্যাবাচক শব্দবহুবচন প্রকাশক। | 2. পূরণ বাচক শব্দে এক বচন সূচিত হয়। |
3. যে শব্দ দ্বারা ব্যক্তি বা বস্তুর সংখ্যা বােঝানাে হয়, সেটি সংখ্যাবাচক শব্দ। | 3. সংখ্যা বাচক শব্দ থেকেই পূরণবাচক শব্দ সৃষ্টি হয়। যেমন পাঁচ দিন (সংখ্যাবাচক শব্দ);পঞ্চম দিন (পূরণবাচক শব্দ) তিন দফা (সংখ্যাবাচক শব্দ); তৃতীয় দফা (পূরণবাচক শব্দ) ইত্যাদি। |