বিজ্ঞান চর্চার আবশ্যিক পদ্ধতি

বিজ্ঞান চর্চার আবশ্যিক পদ্ধতিগুলো আলোচনা করো।
উত্তরঃ প্রকৃতিতে বিভিন্ন ঘটনা ঘটে। এই ঘটনাকে বৈজ্ঞানিক সত্য হিসেবে গ্রহণ করতে হলে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হয়। এইজন্য একই রকম পরিবেশ বা ভিন্ন পরিবেশে একই ঘটনা সৃষ্টি করে তার ফলাফল লক্ষ্য করে তার কার্যকারণ নির্ণয় করতে হয়। সবসময় সাধারণ পর্যবেক্ষণের উপর নির্ভর না করে সূক্ষ্ম যন্ত্রপাতি দ্বারা নিখুঁত পর্যবেক্ষণ ও পরিমাপ প্রয়োজন। এবার নিজের বিচার ও বুদ্ধি দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় প্রাপ্ত সমস্ত তথ্যের মধ্যে পারস্পরিক যোগসূত্র খুঁজে বের করে সঠিক সিদ্ধান্তে আসতে হয়।
সুতরাং বিজ্ঞান চর্চার মূল ধাপগুলো হল –
(i) পরীক্ষা
(ii) পর্যবেক্ষণ 
(iii) পরিমাপ
(iv) সিদ্ধান্ত
পরীক্ষা : পরীক্ষা হল বিজ্ঞান চর্চার প্রথম ধাপ। প্রত্যেক প্রাকৃতিক ঘটনার কোনো-না-কোনো কারণ থাকে। একই রকম পরিবেশে বা ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশে একই ঘটনা সৃষ্টি করে তার ফলাফল ভালোভাবে লক্ষ্য করা হয়। কৃত্রিম উপায়ে ঘটনা ঘটানোকে পরীক্ষা বলে।
পর্যবেক্ষণ: পর্যবেক্ষণ হল বিজ্ঞান চর্চার দ্বিতীয় ধাপ। কোনো পরীক্ষার বিভিন্ন ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণ করতে পঞ্চ ইন্দ্রিয় ব্যবহার করি। সবক্ষেত্রে শুধু ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে পর্যবেক্ষণ সম্ভব হয় না। সে সব ক্ষেত্রে যন্ত্রের সাহায্য নিতে হয়। গ্রহ, নক্ষত্র সম্বন্ধে জানার জন্য দূরবীন ব্যবহার করা হয়; খুব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা বা জীবাণুকে নিরীক্ষণ করার জন্য অণুবীক্ষণ যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। পর্যবেক্ষণ করে যে সব তথ্য পাওয়া যায় তাদের সাজিয়ে নিয়ে তথ্যগুলোর মধ্যে সম্পর্ক গঠন করা হয়।
পরিমাপ: পরিমাপ বিজ্ঞান চর্চার আর একটি ধাপ। সবকিছু ঘটনা শুধু পর্যবেক্ষণ করলেই হয় না। আমাদের চারপাশে যে সব রাশি আছে তাদের পরিমাপ প্রয়োজন। যেমন—হকি বল ও কিক্রেট বল দেখতে প্রায় একই রকম, কোন বলটি বড়ো চোখে দেখে বলা কঠিন। এজন্য ওদের ভর পরিমাপ করা প্রয়োজন। নির্ভুল পরিমাপের জন্য যন্ত্র ব্যবহার করা হয়; যেমন—দৈর্ঘ্য পরিমাপ করার জন্য সাধারণ স্কেল, ভর পরিমাপের জন্য সাধারণ তুলা, সময় পরিমাপের জন্য ঘড়ি, ওজন পরিমাপের জন্য স্প্রিং তুলা। আয়তন মাপার জন্য মাপনী চোঙ, তাপ পরিমাপ করা হয় ক্যালোরি মিটারে। রাশিগুলো মাপার জন্য আছে এক-একটি একক ; যেমন-C.G.S.-এ দৈর্ঘ্যের একক—সেমি,
ভরের একক—গ্রাম
সময়ের একক—সেকেন্ড। 
S.I. পদ্ধতিতে দৈর্ঘ্য—মিটার,
ভর—কিলোগ্রাম
সময়—সেকেন্ড
তড়িৎপ্রবাহ মাত্রা-অ্যাম্পিয়ার
তাপমাত্রা —কেলভিন,
আলোক দীপ্তি—ক্যান্ডেলা
সিদ্ধান্ত : বিজ্ঞান চর্চার শেষ ধাপ হল সিদ্ধান্ত। সিদ্ধান্তে আসার আগে পরীক্ষা, পর্যবেক্ষণ ও পরিমাপ থেকে পাওয়া ফলগুলোকে ঠিকমতো সাজিয়ে সত্য নির্ণয় করা হয়। তবে সঠিক সিদ্ধান্তে আসার জন্য একই পরীক্ষা কয়েকবার করতে হবে এবং দেখতে হবে বিভিন্ন ধাপে যে সব তথ্যগুলো পাওয়া যাচ্ছে তা আগে পাওয়া তথ্যের সঙ্গে সঠিক কিনা। যদি সঠিক হয় তবে ওই সত্যকে সিদ্ধান্তরূপে প্রকাশ করা হয় এবং বলা হয় এটি বৈজ্ঞানিক সত্য।

উপরে বর্ণনা থেকে যেসব প্রশ্নের উত্তর করা যাবে-
1. বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি কি
2. বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি
3. পদ্ধতি বলতে কি বুঝায়
4. বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের বিভিন্ন স্তরগুলি ব্যাখ্যা কর

আরো পড়ুন-
1. বিজ্ঞান ও বিজ্ঞান বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর
2. কয়েকজন ভারতীয় বিজ্ঞানীর জীবনী
3. জীবন বিজ্ঞানের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার ও আবিষ্কারকের নাম
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url