ইসলাম ও তার প্রভাব - গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর

ইসলাম ও তার প্রভাব - গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর

1. আরব দেশের ভূপ্রকৃতি কেমন?
উত্তরঃ আরব একটি মস্ত বড়াে উপদ্বীপ। আরব কথার অর্থ শুষ্ক। গােটা দেশটাই‌ মরুভূমি। মাঝে মাঝে মরূদ্যান।
2. বেদুইনরা কীভাবে জীবন যাপন করত?
উত্তরঃ বেদুইনদের জীবনে লুঠতরাজ ও খুনজখম ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। তারা ছিল কষ্টসহিষ্ণু, সাহসী ও দুর্ধর্ষ।
3. আরব দেশের কোন অঞ্চলে জনবসতি গড়ে উঠেছিল ?
উত্তরঃ লােহিত সাগরের তীরবর্তী অঞ্চল উর্বর হওয়ায় এখানে জনবসতি স্থাপিত হয়। এখানকার অধিবাসীরা কৃষিকাজ ও ব্যাবসাবাণিজ্য করত।
4. লােহিত সাগর অঞ্চলের প্রধান দুটি শহরের নাম কী?
উত্তরঃ মক্কা ও মদিনা।
5. আরব সমাজে প্রথম চারজন নির্বাচিত খলিফার নাম কী?
উত্তর। আরব সমাজের প্রথম চারজন নির্বাচিত খলিফা হলেন-
(১) হজরত আবুবাকর (৬৩২-৬৩৪ খ্রিঃ)
(২) হজরত ওমর (৬৩৪-৬৪৪ খ্রিঃ)
(৩) হজরত ওসমান (৬৪৪-৬৫৬ খ্রিঃ)
(৪) হজরত আলি (৬৫৬-৬৬১ খ্রিঃ)
6. হজরত আলির মৃত্যুর পর কে খলিফা পদ গ্রহণ করেন?
উত্তরঃ হজরত আলির মৃত্যুর পর মােয়াবিয়া খলিফা পদ গ্রহণ করেন।
7. মােয়াবিয়ার মৃত্যুর পর কে খলিফা পদ গ্রহণ করেন?
উত্তরঃ মােয়াবিয়ার মৃত্যুর পর খলিফা পদ গ্রহণ করেন এজিদ।
8. উমাইয়া বংশের পর কারা খলিফার আসন দখল করেছিলেন?
উত্তরঃ উমাইয়া বংশের পর পাঁচশ বছরেরও বেশি (৭৫০-১২৫৮ খ্রিঃ) আব্বাস- বংশীয় সুলতানরা খলিফার আসন দখল করেছিলেন।
9. আব্বাস-বংশীয় সুলতানদের রাজধানী কোথায় ছিল?
উঃ আব্বাস-বংশীয় সুলতানদের রাজধানী ছিল বর্তমান ইরাকের রাজধানী বাগদাদ শহরে।
10. আরব দেশের পশ্চিমে কোন সাগর অবস্থিত?
উঃ আরব দেশের পশ্চিমে অবস্থিত লােহিত সাগর।
11. হজরত মহম্মদ (সাঃ) কত সালে জন্মগ্রহণ করেন?
উঃ হজরত মহম্মদ (সাঃ) জন্মগ্রহণ করেন ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে।
12. হিজরী সাল কবে থেকে গণনা শুরু হয়?
উত্তরঃ হিজরী সাল গণনা শুরু হয় হজরত মহম্মদ (সাঃ) মদিনায় গমন থেকে।
13. আনসার কাদের বলা হয়?
উত্তরঃ আনসার বলা হয় মদিনাবাসীদের।
14. খলিফা কাকে বলে?
খলিফা হলেন ইসলাম ধর্ম ও রাষ্ট্রের প্রতিনিধি।
15. কার্ডোভার সংস্কৃতির মূল বৈশিষ্ট্য কি ছিল?
উত্তরঃ কার্ডোভার সংস্কৃতির মূল বৈশিষ্ট্য ছিল খ্রিস্টান, ইহুদি ও মুসলমান সংস্কৃতির মিলন।
16. ইসলাম সংস্কৃতির প্রধান কেন্দ্র কি ছিল?
উত্তরঃ ইসলাম সংস্কৃতির প্রধান কেন্দ্র ছিল বােগদাদ।
17.  আরব দেশের অধিকাংশ স্থলভূমি কী ধরনের?
উত্তরঃ আরব দেশের অধিকাংশ স্থলভূমি মরুপ্রকৃতির।
18. মরুভূমির অধিবাসীদের কী বলা হয় ?
উর। মরুভূমির অধিবাসীদের বেদুইন বলা হয়।
19. জমজম কী?
উত্তরঃ মক্কায় অবস্থিত একটি কূপ। এই কূপের জল আরবদের কাছে খুব পবিত্র।
20. ভারতের সঙ্গে আরবদের কোন সূত্রে পরিচয় হয় ?
উত্তরঃ ব্যাবসাবাণিজ্যের সূত্রে।
21. হজরত মহম্মদ বাণিজ্য উপলক্ষে কোথায় গিয়েছিলেন?
উত্তরঃ হজরত মহম্মদ বাণিজ্য উপলক্ষে সিরিয়া সহ আরবের বিভিন্ন অঞ্চলে পরিভ্রমণ করেছিলেন।
22. হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ) কত বছর বয়সে আল্লার বাণী লাভ করেন?
উত্তরঃ চল্লিশ বছর বয়সে তিনি আল্লার বাণী লাভ করেন।
23. মুহাজির কাদের বলা হয় ?
উত্তরঃ জন্মভূমি ও আত্মীয়-স্বজন পরিত্যাগ করে যারা মহম্মদের সঙ্গে মদিনায় আসেন তাদের মুহাজির বলে।
24. জাকাত কাকে বলে?
উত্তরঃ সঙ্গতিসম্পন্ন মুসলমানকে তার আয়ের 2½ ভাগ দুঃস্থদের মধ্যে বিতরণ করাকে জাকাত বলে।
25. মুসলিমদের পবিত্র গ্রন্থের নাম কী? 
উত্তরঃ কোরআন।
26. হােদায়রিয়ার সন্ধির প্রধান গুরুত্ব কী?
উত্তরঃ হােদায়রিয়ার সন্ধির প্রধান গুরুত্ব হল কোরায়েশ ও মহম্মদ বাহিনীর মধ্যে দশ বছরের জন্য যুদ্ধ বিরতি পালন।
27. প্রথম খলিফা কে ছিলেন?
উত্তরঃ প্রথম খলিফা ছিলেন হজরত আবুবকর (৬৩২-৬৩৪ খ্রিঃ)।
28. উমাইয়া শাসনকালে রাজধানী কোথায় ছিল?
উত্তরঃ উমাইয়া শাসনকালে রাজধানী ছিল দামাস্কাসে।
29. হারুণ-উর-রসিদ কে ছিলেন?
উত্তরঃ হারুণ-উর-রসিদ ছিলেন আব্বাস বংশীয় খলিফাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ।
30. কার্ডোভা কোথায় অবস্থিত ছিল?
উত্তরঃ কার্ডোভা অবস্থিত ছিল স্পেনে।
31. আলহামরা কীজন্য বিখ্যাত ছিল?
উত্তরঃ আলহামরা বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস, দর্শন ও বিজ্ঞান চর্চার কেন্দ্র হিসেবে বিখ্যাত ছিল।
32. আল তাবারি / আল মাসুদি / ইবনে সিনা / আলবেরুণী / ইবনে রুশদ কী জন্য বিখ্যাত?
উত্তরঃ ইরানের বাসিন্দা আল তাবারি (৮৩৮-৯২৩ খ্রিঃ) বহু পরিশ্রম করে বিশ্ব ইতিহাস রচনা করেন।
বােগদাদের অধিবাসী পর্যটক আল মাসুদি বিশ্বকোশ রচনা করে খ্যাতি অর্জন করেন।
মধ্য এশিয়ার অফসনা অঞ্চলের অধিবাসী ইবনে সিনা (৯৮০-১০৩৭ খ্রিঃ) কবি, সঙ্গীতজ্ঞ, চিকিৎসক ও বিজ্ঞানী হিসেবে খ্যাতিমান ছিলেন। তার রচিত চিকিৎসা শাস্ত্র-বিষয়ক গ্রন্থ কয়েক শতাব্দী ধরে ইউরােপে সমাদৃত ছিল।
মধ্য এশিয়ার বাসিন্দা আলবেরুণী (৯৭৩-১০৪৮ খ্রিঃ) বিশ্ববিখ্যাত পণ্ডিত ছিলেন। তিনি ভারতীয় জীবনের নানা দিকের ওপর ইতিহাস রচনা করেন। কার্ডোভার অধিবাসী রুশদ অ্যারিস্টটলের ভাষ্যকার ছিলেন।
33. বেদুইনরা কীভাবে জীবন কাটাত?
উত্তরঃ বেদুইনরা ছিল যাযাবর। তাদের কোনাে স্থায়ী বাসস্থান ছিল না। তারা উট আর ঘােড়ায় চড়ে একস্থান থেকে অন্যস্থানে যাতায়াত করত। লুটতরাজ ও খুনজখম ছিল তাদের নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। তারা ছিল কষ্টসহিষ্ণু, সাহসী ও দুর্ধর্ষ।
34. বাইরের দেশের সঙ্গে আরবদের কীভাবে পরিচয় ঘটে ?
উত্তরঃ বাণিজ্য উপলক্ষে আরব দেশের লােকের সঙ্গে বাইরের দেশের লােকের পরিচয় ঘটে।
35. হজরত মহম্মদের কোথায়, কবে আবির্ভাব ঘটে ?
উত্তরঃ ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে আরবের মক্কা নগরীতে হজরত মহম্মদের আবির্ভাব ঘটেছিল।
36. ঈশ্বরের চিন্তায় ধ্যানমগ্ন থেকে হজরত মহম্মদ কী জ্ঞান লাভ করেছিলেন ?
উত্তরঃ হজরত মহম্মদ ধ্যানমগ্ন থেকে দিব্যজ্ঞান লাভ করেন যে, আল্লাই এক এবং মহম্মদ তাঁর প্রেরিত দূত বা পয়গম্বর।
37. আরব দেশটি কোথায় অবস্থিত?
উত্তরঃ পশ্চিমে লােহিত সাগর, পূর্বে পারস্য উপসাগর এবং দক্ষিণে আরব সাগর বেষ্টিত দেশটির নাম আরব।
38. অতি প্রাচীনকালে আরব দেশে কী কী সভ্যতার আবির্ভাব ঘটেছিল?
উত্তরঃ অতি প্রাচীনকালে আরব দেশে সুমেরীয়, ব্যাবিলনীয় ও ফিনিসীয় সভ্যতার আবির্ভাব ঘটে।
39. বেদুইন কাদের বলা হত ?
উঃ আরব দেশের যাযাবর অধিবাসীদের বেদুইন বলা হত।
40. আরবরা কয়টি শাখায় বিভক্ত ছিল ? তাদের সম্পর্কে যা জানাে সংক্ষেপে লেখাে।
উঃ আরবরা প্রধান দুটি শাখায় বিভক্ত ছিল। যথা-
(১) শহরবাসী, বাণিজ্যজীবী আরব এবং 
(২) মরুভূমির যাযাবর বা বেদুইন আরব। 
শহরবাসী বাণিজ্যজীবী আরবেরা চাষবাস করত। ঘর বেঁধে এরা বসবাস করত এবং পশুর পিঠে করে অথবা পশুর টানা গাড়িতে করে এরা জিনিসপত্র নিয়ে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় গিয়ে ব্যাবসাবাণিজ্য করত। এরা ব্যাবসাবাণিজ্যের ফলে বেশ বড়ােলােক বা ধনী হয়ে ওঠে। তবে আরবদের কোনাে শাখাই ঐক্যবদ্ধ জাতি হিসেবে গড়ে ওঠেনি।
বেদুইন বা যাযাবর শ্রেণির আরবেরা পশুপালন করত এবং কোনাে নির্দিষ্ট জায়গাতেই স্থায়িভাবে বাস করত না। এরা টাটু ঘােড়া এবং উট পুষত। উটই ছিল এদের প্রধান সম্পত্তি। যুদ্ধ-বিগ্রহ, লুঠতরাজ প্রভৃতি কাজে এরা খুব পটু ছিল। খেজুর, উটের দুধ ও উটের মাংস খেয়ে এরা জীবনধারণ করত।
41. কাবা শরিফ কী?
উঃ মক্কার প্রধান ধর্মমন্দির। এই মন্দিরে একটি কৃষ্ণশিলা আছে। আরবরা এই পাথরখানিকে আল্লাহর প্রতীক মনে করে। আরববাসী ও মুসলিম জগতের কাজে এই পাথরখানি পবিত্র বস্তু। এই, পাথরখানি দর্শন করবার জন্য ও তার চারদিক প্রদক্ষিণ করবার জন্য অগণিত ধর্মপ্রাণ মুসলিম
কাবা মসজিদ তীর্থযাত্রী প্রতি বছর মক্কায় আসেন। একে বলা হয় হজ।
42. আইয়ামে জাহেলিয়াৎ কী ?
উত্তরঃ হজরত মহম্মদের আবির্ভাবের প্রাক্কালে প্রায় এক হাজার বছর ছিল আরব জাতির অন্ধকার যুগ। কোরআন শরীফে ওই সময়কে আইয়ামে জাহেলিয়াত বলে।
43. শেখ কাহাকে বলে ?
উত্তরঃ কয়েকটি জ্ঞাতি পরিবার নিয়ে এক একটি ফৌজ গড়ে ওঠে। প্রতি ফৌজের একজন করে নেতা ছিল। তাদের শেখ বলা হত।
44. হিজরত কেন ঘটে?
উত্তরঃ ইসলাম ধর্ম প্রচারের ফলে ধীরে ধীরে পবিত্র কাবায় তীর্থানুরাগীদের ভিড় কমতে থাকে। তাদের বিপুল পরিমাণ তীর্থকর থেকে প্রাপ্ত, আয়ে টান পড়ে। ফলে মহম্মদ ও তার সহযাত্রীদের ওপর আব্বাতের মাত্রা এত তীব্র হয়ে উঠল যে,
আত্মরক্ষার স্বার্থে মহম্মদকে ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মক্কা ছেড়ে মদিনায় আশ্রয় গ্রহণ করতে হয়। তাঁর এই মদিনা গমন আরবী ভাষায় হিজরত নামে পরিচিত। তাই এই দিন থেকে হিজরী সাল গণনা করা হয়।
45. মদিনা সনদের গুরুত্ব কোথায় ?
উত্তরঃ মুসলমান ও ইহুদিরা যাতে শান্তিতে মদিনায় বসবাস করতে পারে তার জন্য মহম্মদ একটি সনদ প্রদান করেন। এই সনদই মদিনা সনদ নামে খ্যাত।
46. মহরম কী?
উত্তরঃ মােয়াবিয়ার মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র এজিদ খলিফা হয়ে হজরত মহম্মদের দৌহিত্র ইমাম হােসেনের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। বীরের ন্যায় যুদ্ধ করেও ইমাম হােসেন তার দুই শিশুপুত্র ও ভ্রাতুস্পুত্র সহ কারবালার মরুপ্রান্তরে মৃত্যুবরণ করেন। এই মর্মান্তিক স্মৃতি বহন করে মুসলমানরা আজও পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে মহরম পালন করেন।
47. বাগদাদ কীভাবে সংস্কৃতির কেন্দ্র হয়েছিল?
উত্তরঃ উমাইয়া বংশের পর পাঁচশ বছরেরও বেশি (৭৫০-১২৫৮ খ্রিঃ) আব্বাস বংশীয় সুলতানরা খলিফার আসন দখল করেছিলেন। তাদের রাজধানী ছিল বর্তমান ইরাকের রাজধানী বাগদাদ শহরে। আব্বাস বংশীয় সুলতানের আমলে আরব সভ্যতা চরম উন্নতি লাভ করে। এই বংশের খলিফাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রসিদ্ধ ছিলেন হারুণ-উল-রসিদ। ঐশ্বর্য ও জাকজমকে তার রাজধানী বােগদাদ ছিল সেই সময়কার শ্রেষ্ঠ নগরী। ওই যুগের আফ্রিকা, ইউরােপ ও এশিয়া মহাদেশের জ্ঞানবিজ্ঞানের চর্চার কেন্দ্র ছিল ওই শহর।

আরো পড়ুন-
2. মুসলিম ধর্মের দ্রুত প্রসারের কারণগুলি কি কি?
3. ইসলাম ধর্মের মূল আদর্শ গুলি কি কি?
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url