ধাতু কাকে বলে? ধাতু কত প্রকার ও কি কি? মৌলিক ধাতু কাকে বলে? যৌগিক ধাতু কাকে বলে?

ধাতু কাকে বলে? ধাতু কত প্রকার ও কি কি? মৌলিক ধাতু কাকে বলে? যৌগিক ধাতু কাকে বলে?

ধাতু কাকে বলে? ধাতু কত প্রকার ও কি কি?

উঃ ক্রিয়াপদকে বিশ্লেষণ করলে বা ভাঙলে যে মৌলিক অংশটি পাওয়া যায় তাকে ধাতু বা ক্রিয়া-প্রকৃতি বলে। 
আসলে ক্রিয়ার মূলকেই ধাতু বলে। 
যেমন—আমি খাই ; তুমি খাও; আপনি খান ; সে খায়—এই বাক্যগুলিতে পুরুষ অনুযায়ী ক্রিয়ার নানা রূপ প্রকাশ পেয়েছে। ক্রিয়াগুলিকে ভাঙলে দেখা যাবে
খা + ই = খাই ; খা + অ (ও) = খাও; খা + এন = খান ; খা + এ (আয়) = খায়।
কিন্তু সব ক্রিয়ার মূল ‘খা’-কে আর ভাঙা যাচ্ছে না। সেজন্যে এটিই ধাতুর মূল। এই মূল ধাতুর উত্তর ই’, ‘অ (ও)’, ‘এন’ ‘এ (আ)' প্রভৃতি যুক্ত হয়ে বিভিন্ন ক্রিয়াপদ গঠিত হয়েছে।

ই’, ‘অ’ (ও), ‘এন’, ‘এ’ (আয়) এগুলিই বিভক্তি। ক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বলে এগুলি ক্রিয়া-বিভক্তি। ধাতুর উত্তর ক্রিয়া-বিভক্তি যােগে ‘ক্রিয়াপদ’ গঠিত হয়।

ধাতুর শ্রেণিবিভাগ

প্রকৃতি অনুসারে ধাতুকে বাংলায় সাধারণত চার শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যেমন—
1. মৌলিক ধাতু বা সিদ্ধ ধাতু
2. সাধিত ধাতু 
3. সংযােগ মূলক ধাতু 
4. যৌগিক ধাতু।

মৌলিক ধাতু কাকে বলে?

যেসব ধাতুকে বিশ্লেষণ করা যায় না, তাদের মৌলিক ধাতু বা সিদ্ধ ধাতু বলে।
যেমন—খা, যা, চল, মর, পড়, দে, শুন, বল্ ইত্যাদি।

সাধিত ধাতু কাকে বলে?

যে ধাতুকে বিশ্লেষণ করলে মূল ধাতু ও প্রত্যয় পাওয়া যায় তাকে সাধিত ধাতু বলে।
যেমন—পড় + আ = পড়া ; দেখ + আ = দেখা, কর + আ = করা ইত্যাদি।
সাধিত ধাতু তিন প্রকার। যেমন—
1. প্রয়ােজক বা ণিজন্ত ধাতু, 
2. ধ্বন্যাত্মক এবং 
3. নাম ধাতু।
এছাড়া আর এক প্রকার সাধিত ধাতু আছেঃ কর্মবাচ্যের ধাতু বা কর্মকর্তৃবাচ্যের ধাতু।
প্রযােজক ধাতু কাকে বলে?
কর্তার প্রেরণায় এবং প্রযােজনায় অন্যের দ্বারা ক্রিয়ার কার্য সম্পন্ন হলে তাকে প্রযােজক ধাতু অথবা ণিজন্ত ধাতু বলে। 
মৌলিক ধাতুর সঙ্গে ‘আ’ প্রত্যয় যােগ করে প্রযােজক ধাতু গঠিত হয়। এই ‘আ’ প্রত্যয়ান্ত ধাতু হতে ধাতু বিভক্তি যােগে যে ক্রিয়া পদ গঠিত হয়, তাকে প্রযােজক ক্রিয়া বলে। যেমন—
মৌলিক ধাতু--> কর্ + আ = করা, করায়। এর সঙ্গে ইতেছ, ইতেছি প্রভৃতি বিভক্তি যােগ করলে প্রয়ােজক ক্রিয়া গঠিত হয়। যেমন—করা (প্রযােজক ধাতু) + ইতেছি = করাইতেছি
(প্রযােজক ক্রিয়া)। 
অনুরূপভাবে লেখা, লেখাইতেছি লেখাচ্ছি; পড়া, পড়াইতেছি পড়াচ্ছি ইত্যাদি। এগুলিকে বাক্যে প্রয়ােগ করলে --
1. তিনি ছেলেটিকে দিয়া কাজটি করাইতেছেন করাচ্ছেন।
2. মাতা শিশুকে চাঁদ দেখাইতেছেন দেখাচ্ছেন।
ধ্বন্যাত্মক ধাতু কাকে বলে?
ধ্বন্যাত্মক বা অনুকার ধ্বনি যুক্ত শব্দের সঙ্গে ‘আ’-প্রত্যয় যােগে আবার কখনাে কখনাে প্রত্যয় ছাড়া যে ধাতু গঠিত হয় তাকে ধ্বন্যাত্মক ধাতু বলে।
ধ্বন্যাত্মক শব্দগুলি বাংলায় অব্যয়। অব্যয়গুলি নাম পদের অন্তর্ভুক্ত। সে জন্যে এই ধাতুগুলির সঙ্গে নাম ধাতুর যােগ আছে, যেমন কন কন + আ = কনকনা, (পা কনকনায়; হাত কনকনায়); হাঁফ + আ = হাঁফা (ছেলেটি হাঁফায়); মচ মচ + আ = মচমচা (জুতাটি মচমচায়); ফুস + আ = ফুসা।
নাম ধাতু কাকে বলে?
নাম পদ হতে গঠিত ধাতুকে নামধাতু বলে। সাধারণতঃ বিশেষ্য ও বিশেষণ শব্দের উত্তর আ-প্রত্যয় যােগে নামধাতু গঠিত হয়। বিশেষ্য, বিশেষণ, সর্বনাম ও অব্যয় পদকে নাম পদ বলে। চলতি শব্দে আ-প্রত্যয় যােগে ধাতু গঠিত হয়। যেমন-
জুত্ + আ = জুতা (জুতিয়ে ছাড়বাে); বেত + আ বেতা (বেতিয়ে তবে ছাড়বাে)। কোন কোন স্থানে প্রত্যয় যুক্ত না হলেও নাম শব্দটি ধাতুরূপে ব্যবহৃত হয়। যেমন-
ঘাম—ঘামে ; জম-- জমে।
মর্মরিয়া ওঠে তরুলতা।
এতক্ষণে অরিন্দম কহিলা বিষাদে।
নামধাতু হতে উৎপন্ন ক্রিয়াপদকে নামধাতুজ ক্রিয়া বলে। যেমন—জিরা—জিরায় ;
গজা—গজায়।
কর্মবাচ্যের বা কর্তৃবাচ্যের ধাতু : কর্মবাচ্য ও ভাববাচ্যের ধাতু মূল ধাতুর সঙ্গে। আ-প্রত্যয় যােগে গঠিত হয়।
যেমন—দেখ + আ= দেখা (কাজটি ভাল দেখায় না)।

সংযােগ মূলক ধাতু কাকে বলে?

কর, হ, পা, দে প্রভৃতি ধাতুর সঙ্গে বিশেষ্য, বিশেষণ অথবা ধ্বন্যাত্মক শব্দ যােগ করে সংযােগমূলক ধাতু গঠিত হয়। যেমন—
কর যােগে: রক্ষা করাে, ত্যাগ কারাে, যােগ কারাে, গান করাে।
হ-যােগে : সুখী হ (হও), রাজী হ।
পা-যােগে : টের পা, দুঃখ পা, লজ্জা পা।
দে-যােগে : জবাব দে, দোল দে, ঠেলে দে।
যুক্ত ধাতু কাকে বলে?
 বহুপদ বা সংযােগমূলক ধাতুর একটি শ্রেণি। বিশেষ্য, বিশেষণ বা ধ্বন্যাত্মক অব্যয় শব্দের সঙ্গে বাস্, যা, কর, হ, দে, পা, বাড়, যা ইত্যাদি মৌলিক বা একদল ধাতু ব্যবহার করে যে নতুন ধাতু তৈরি হয় তাকে যুক্ত ধাতু বলে। 
উদাহরণ : সে খুব কষ্ট পাচ্ছে। 
সূর্য অস্ত যাচ্ছে। 
তারাগুলাে জ্বল জ্বল করছে।
পঙ্গু ধাতু কাকে বলে?
কতকগুলি মৌলিক ধাতু আছে, যার সঙ্গে বিভক্তি যুক্ত করে ক্রিয়াপদ গঠন করলে, সেই ক্রিয়াপদের সর্বকালের (অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ) রূপ পাওয়া যায় না,—সেই ধাতুগুলিকে পঙ্গু ধাতু বা অসম্পূর্ণ ধাতু বলে। 
যথা : বাংলায় আছ, নহ, থাক, যা, বট প্রভৃতি। এই ধাতুগুলির সঙ্গে বিভক্তি যুক্ত করে যে ক্রিয়াপদ গঠিত হয়, তাকে পঙ্গু ক্রিয়া বলে। উদাহরণ : কে বট আপনি?

যৌগিক ধাতু কাকে বলে?

‘এ’ (ইয়া) বা 'তে’ (ইতে) প্রত্যয়ান্ত অসমাপিকা ক্রিয়ার সঙ্গে কোনাে ধাতু যুক্ত করে যখন আর একটি ধাতু গঠন করা হয়, তাকে যৌগিক বা মিশ্র ধাতু বলে। 
যৌগিক ধাতু অসমাপিকা ক্রিয়ার অর্থটিই প্রধানভাবে প্রকাশ করে এবং সমাপিকা ক্রিয়া কালভেদে ও পুরুষভেদে পরিবর্তিত হয়। 
যথা : লিখিয়া ফেল, দৌড়াইয়া চল, বলিতে লাগ, খাইতে বস্ প্রভৃতি যৌগিক ধাতুর সঙ্গে বিভক্তি যুক্ত করে যে ক্রিয়াপদ গঠন করা হয় তাকে যৌগিক ক্রিয়া বা মিশ্র ক্রিয়া বলে। যৌগিক ক্রিয়ার প্রথম পদ অসমাপিকা ক্রিয়া এবং দ্বিতীয় পদ সমাপিকা ক্রিয়া এবং সমাপিকা ক্রিয়াটি অসমাপিকা ক্রিয়ার অর্থকে সম্পূর্ণ করে। 
যথা : লিখিয়া ফেল্ + ইল = লিখিয়া ফেলিল; 
খাইতে বস্ + ইতেছে = খাইতে বসিতেছে। 
হরি হেসে উঠল। সে গাছটা কেটে ফেলল (কাটিয়া ফেলিল)। মেয়েটা পড়তে লাগল (পড়িতে লাগিল)।

আরো পড়ুন-
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url