কারক কাকে বলে? কারক কত প্রকার ও কি কি? কারক চেনার সহজ উপায়

ক্রিয়ার সঙ্গে এই সম্পর্ক ছয় প্রকার এর নির্ধারিত হয় তাই কারক ছয় প্রকার যথা-

বাক্যের মূল ক্রিয়াকে প্রশ্ন করে এই ছয় রকম সম্পর্ক নির্ণয় করা হয়। যেমন-

"কে যায় কর্তা রূপে

কি কর্ম কাকে

দ্বারা দিয়ে করণ হবে

অপাদান হইতে থেকে

নিঃস্বার্থে যাকে দান

সেই সম্প্রদান।"

স্থান কালে হয় অধিকরণ।

উঃ বাক্য-মধ্যস্থ যে পদ ক্রিয়া সম্পাদন করে তাকে কর্তৃপদ বলে এবং ক্রিয়ার সঙ্গে তার যে সম্বন্ধ তাকে কর্তৃকারক বলে।

ক্রিয়াকে 'কে' বা 'কাকে' বা 'কারা' দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায় সেই কর্তা। 

যেমন—রামন বাজারে গেল। এই বাক্যের ক্রিয়া হচ্ছে ‘গেল। এখন ‘কে বাজারে গেল?' এই প্রশ্ন করা হলে তার উত্তর পাওয়া যায় 'রামন’। ফলে মদন এই বাক্যের কর্তা।

কর্তৃকারকে এক বচনে কে, এ, তে, এতে, অ (শূন্য বিভক্তি), র এবং বহুবচনে রা এবং এরা বিভক্তি যুক্ত হয়।

কর্তৃকারকে 'অ’ বিভক্তি যুক্ত হলে মূল কর্তৃপদের কোন পরিবর্তন বা রূপান্তর হয় না। এই কারণে এই বিভক্তিকে 'শূন্যবিভক্তি' বলে।

ক) শূন্য বিভক্তি বা অ বিভক্তিঃ অ-বিভক্তির সব সময় লােপ হয়। যথা-

1. ‘পাখি সব করে রব। - এখানে ক্রিয়া হচ্ছে 'করে'

ক্রিয়াকে প্রশ্ন করলে কে করে? উত্তর- পাখি কর্তৃকারকে শূন্য বিভক্তি।

2. ‘গােপাল গরুর পাল লয়ে যায় মাঠে।

উঃ গোপাল কর্তৃকারকে শূন্য বিভক্তি।

3. তাঁতি বসে তাঁত বােনে; জেলে ফেলে জাল।

উঃ তাঁতি কর্তৃকারকে শূন্য বিভক্তি।

1. আমাকে খেতে হবে।

উঃ আমাকে কর্তৃকারকে 'কে' বিভক্তি

2. মেয়েটিকে উজ্জ্বল দেখাচ্ছে।

উঃ মেয়েটিকে কর্তৃকারকে 'কে' বিভক্তি।

1. বুলবুলিতে ধান খেয়েছে, খাজনা দেব কিসে?

উঃ বুলবুলিতে কর্তৃকারকে 'তে' বিভক্তি।

2. দশে মিলি করি কাজ।

উঃ দশে কর্তৃকারকে 'এ' বিভক্তি

3. ধােপায় কাপড় কাচে।

উঃ ধােপায় কর্তৃকারকে 'য়' বিভক্তি

1.সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতা আরম্ভ হল।

উঃ অতিথির কর্তৃকারকে 'র' বিভক্তি

2. তােমার বই পড়া হল না।

উঃ তােমার কর্তৃকারকে 'র' বিভক্তি।

উঃ কর্তা যাকে আশ্রয় করে ক্রিয়া সম্পাদন করে তাকে কর্মকারক বলে। 

ক্রিয়াকে ‘কি’ বা 'কাকে' দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায় তাই কর্ম।

কর্মকারকে এ, য়, য়ে, কে, রে এবং বহুবচনে দিগকে, দেরকে, এদের, এদেরকে প্রভৃতি বিভক্তি যুক্ত হয়। অনেক ক্ষেত্রে এই সব বিভক্তির চিহ্ন অনুক্ত থাকে।

যেমন- সে বই পড়ে। 

এখানে ক্রিয়া পড়ে, এই ক্রিয়া কে কি দিয়ে প্রশ্ন করলে উত্তর পাওয়া যায় বই। অতএব

বই হচ্ছে কর্মকারক।

1. গরু গাড়ি টানে।

উঃ গাড়ি কর্মকারকে শূন্য বিভক্তি।

2. দশে মিলি করি কাজ। 

উঃ কাজ কর্মকারকে শূন্য বিভক্তি।

3. মিষ্টি মধুর গল্প বল। 

উঃ গল্প কর্মকারকে শূন্য বিভক্তি।

1. সারা বিকেল তার খবর নেই।

উঃ তার কর্মকারকে র বিভক্তি

1. সাপুড়েকে ডাক। ভজুকে খেতে বল।

উঃ সাপুড়েকে কর্ম কারকে কে বিভক্তি। ভজুকে কর্ম কারকে কে বিভক্তি।

2. দূর করে দিনু তােরে - রবীন্দ্রনাথ।

উঃ তোরে কর্ম কারকে রে বিভক্তি

3. ‘রেখ মা দাসেরে মনে’—মধুসূদন।

উঃ দাসেরে কর্ম কারকে রে বিভক্তি।

4. ঘৃণা করিয়াছ তুমি মানুষের প্রাণের ঠাকুরে।

উঃ ঠাকুরে কর্ম কারকে রে বিভক্তি।

কর্তা যার সাহায্যে ক্রিয়া সম্পাদন করে, তাকে করণকারক বলে।

ক্রিয়া পদকে ‘কিসের দ্বারা’এই প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায় তাই করণকারক। 

করণ কারকে সাধারণতঃ এ, য়, তে, এতে বিভক্তি এবং দ্বারা, দিয়া (কর্তৃক) প্রভৃতি অনুসর্গ যুক্ত থাকে। 

করণ কারকের উদাহরণঃ 

আমি কলম দিয়া লিখি। হাত দিয়ে কাজ করি।

উঃ কলম করণ কারক।

1. তাস খেলছে। 

উঃ তাস দ্বারা খেলছে। এখানে তাস করণ কারকে শূন্য বিভক্তি।

2. বাবা ছেলেকে বেত মারছে। 

উঃ বেত দ্বারা মারছে। বেত করণ কারকে শূন্য বিভক্তি।

1. এ কলমে ভাল লেখা যায়।

উঃ কলমে করণ কারকে 'এ' বিভক্তি।

2. কথায় কথা বাড়ে।

উঃ কথায় করণ কারকে 'য়' বিভক্তি।

3. বুদ্ধিতে যার ব্যাখ্যা নেই।

উঃ বুদ্ধিতে করণ কারকে তে বিভক্তি।

1. চাদির চশমা। খাঁড়ার ঘা।

উঃ চাদির, খাঁড়ার করণ কারকে র বিভক্তি।

2. জলের দাগ।

উঃ জলের করণ কারকে র বিভক্তি।

3. ‘ছেলের হাতের আগুন, সে কি কম কথা!'—শরৎচন্দ্র

উঃ ছেলের হাতের করণ কারকে র বিভক্তি।

যখন কোনাে ব্যক্তি, প্রাণী বা বস্তুর নিমিত্ত বা জন্য কোনাে ক্রিয়া সম্পাদন করা হয়, তখন যার নিমিত্ত করা হয়, তাকে নিমিত্তকারক বা নিমিত্ত কর্মকারক বলে। যথা-

সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে আমরা পরের তরে। 

এখানে সকলের তরে অর্থাৎ সকলের জন্য এবং পরের তরে' অর্থাৎ পরের জন্য-বােঝান হয়েছে। ফলে, সকলের তরে, পরের তরে নিমিত্ত কারক।

1. 'জন্য' বােঝাতে নিমিত্ত কারক হয়। যেমন- কিছু বলব ব'লে এসেছিলাম। এখানে 'বলে’ অর্থাৎ বলার জন্য।

2. লাগিয়া/ লেগে অর্থে নিমিত্ত কারক হয়। যেমন : ‘সুখের লাগিয়া এ ঘর বাঁধিনু'।

3. উদ্দেশ্য অর্থে নিমিত্ত কারক হয়। যেমন—তিনি বাজারে গেছেন। অর্থাৎ বাজার করার উদ্দেশ্যে বাজারে গেছেন।

4. 'উদ্দেশ’ বােঝাতে নিমিত্ত কারক হয়। যেমন—তার উদ্দেশে অপেক্ষা করাই সার হলাে।

5. নিমিত্ত অনুসর্গ যােগে নিমিত্ত কারক হয়। যেমন—সে কিসের নিমিত্ত রােজ রােজ আমার কাছে আসছে?

নিমিত্ত কারকে এ(য়), কে বিভক্তি চিহু ব্যবহৃত হয় যেমন-

আমি স্নানে যাছি-(এ)

'জলকে চল’-কে)

কোনাে কিছু থেকে, চলিত, ভীত, পতিত, চ্যুত, রক্ষিত, বঞ্চিত, মুক্ত, গৃহীত, জাত ইত্যাদি বােঝালে, তাকে অপাদানকারক বলে। যথা : 

মেঘে বৃষ্টি হয়। 

'বিপদে মােরে রক্ষা কর”। 

চোখ দিয়ে জল পড়ে।

'মেঘে’, ‘বিপদে’ এবং ‘চোখ’ অপাদানকারক।

ক্রিয়াকে ‘কিসে' বা ‘কোথা হতে’ প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায় তাই অপাদান কারক। 

যেমন—গাছ হইতে/হতে ফল পড়ে।

অপাদান কারকে এ, তে, য়, কে বিভক্তি এবং দিয়া, হইতে, থেকে, নিকটে ইত্যাদি উপসর্গ যুক্ত থাকে।

1. অফিস পালিয়ে লােকটি সিনেমায় গেল। [অফিস হতে]

1. বিপদে মােরে রক্ষা কর এ নহে মাের প্রার্থনা। রবীন্দ্রনাথ

2. তােমার চিঠিতে সব কিছু অবগত হলাম।

1. তাকে আমি ভয় পাই না। মাস্টারকে লজ্জা কী ?

2. বইটি রাস্তায় পেয়েছি।

1. যেখানে বাঘের ভয়, সেখানে সন্ধ্যা হয়।—প্রবচন

কোনাে বাক্যে ক্রিয়ার আধারকে অধিকরণকারক বলে। ক্রিয়ার আধার সব সময় উল্লিখিত হয় না। যখন এই আধার উল্লিখিত হয় তখন সেই আধার অধিকরণ কারক হয়। 

ক্রিয়াকে 'কোথায়' বা 'কখন' প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায় তাকে অধিকরণ কারক বলে। যেমন-

জলে কুমীর থাকে। 

এখানে থাকে এই ক্রিয়ার আধার হচ্ছে জলে। 

অধিকরণ কারকে এ, তে, এতে, কে, য়, র বিভক্তি হয়।

অধিকরণ কারক তিন ভাবে বিভক্তঃ

ক. কালাধিকরণ। যেমন--তুমি সকালে যাবে।

খ. আধার অধিকরণ। যেমন—গাছে ফুল ফুটেছে।

গ. ভাবাধিকরণ। যেমন—সুখের মধ্যে কাল কেটে গেল।

1. বনে বাঘ থাকে।

2. নদীতে কুমির আছে।

৩. তিলেতে তেল হয়।

1. আজিকে যতেক বনস্পতির ভাগ্য দেখি যে মন্দ।

2. পড়াশুনায় মন দাও।

3. খাঁচার পাখিটিকে ছেড়ে দাও। গুদামের মাল সাফ করাে।

1. তিনি বাড়ি ছিলেন না। মাদ্রাজ চল।

যে বিশেষ্য বা সর্বনাম পদের অন্য বিশেষ্য বা সর্বনাম পদের সঙ্গে সম্বন্ধ থাকে, কিন্তু ক্রিয়ার সঙ্গে কোন সম্বন্ধ থাকে না তাকে সম্বন্ধ পদ বলে। 

সম্বন্ধ পদের সঙ্গে ক্রিয়ার কোন সম্পর্ক না থাকার জন্য সম্বন্ধ পদ কারক নয়। অথচ কারকের ক্ষেত্রে ক্রিয়ার সঙ্গে বিশেষ্য বা সর্বমান পদের সম্পর্ক নিশ্চিত। কয়েকটি উদাহরণসহ আলােচনা করলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। যেমন-

বালিকাটির কলম হারিয়েছে। 

এই বাক্যে হারিয়েছে ক্রিয়া পদের সঙ্গে 'কলম’-এর সম্পর্ক আছে। কিন্তু 'হারিয়েছে’ ক্রিয়াপদের সঙ্গে বালিকাটির কোন সম্বন্ধ নেই। কারণ, কি হারিয়েছে? 'কলম'। ফলে 'হারিয়েছে' ক্রিয়ার সঙ্গে কলমের সম্পর্ক, এখানে কারক হয়েছে। যেহেতু বালিকাটির সঙ্গে এই ক্রিয়ার কোন সম্পর্ক নেই, তাই 'বালিকাটির' সম্বন্ধ পদ।

ক্রিয়াপদকে 'কার' বা 'কিসের' দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যাবে সেটি সম্বন্ধ পদ হবে।

যেমন-

1. গুরুর কথা ফলবে।

উঃ গুরুর সম্বন্ধ পদ।

2. ভোরের আলোয় মাঠ ভরেছে।

উঃ ভোরের সম্বন্ধ পদ।

যে পদের দ্বারা কাউকে ডাকা হয় বা কাউকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলা হয়, সেই পদকে সম্বােধন পদ বলে।

যেমন- হে, ওহে, ওগো, ও, মামা, কাকা, বাবা, মা, ইত্যাদি এ গুলো ডাকা বোঝালে  সম্বােধন পদ হয়।

যথা : ‘হে অতীত! কথা কও'। 

ওলাে সই! চল যমুনায়। 

'ওগাে! আজ তােরা যানে ঘরের বাহিরে।' 

হে বন্ধু! শােন। 

ওহে! তুমি কোথায় যাও।