তাং যুগের বাণিজ্য, কৃষিকাজ, মুদ্রণ, শিক্ষা, অঙ্কন ও আইনসংক্রান্ত সংস্কার লেখাে
তাং যুগের বাণিজ্য, কৃষিকাজ, মুদ্রণ, শিক্ষা, অঙ্কন ও আইনসংক্রান্ত সংস্কার সম্পর্কে লেখাে।
উত্তর: বাণিজ্যঃ তাং যুগে ব্যাবসা-বাণিজ্যের যথেষ্ট উন্নতি হয়। রাজধানী চাং-আন ছিল আমদানি ও রপ্তানির প্রধান কেন্দ্র। সেখানে বিদেশের অনেক বণিক আসত। ক্যান্টন ও অন্যান্য বন্দরেও পারস্য ও ভারত থেকে অনেক জাহাজ আসত। স্থলপথে মধ্য ও পশ্চিম এশিয়ার সঙ্গে ব্যাবসাবাণিজ্য চলত। বিদেশের বাজারে চিনা রেশম বস্ত্র ও চিনামাটির বাসনের খুব চাহিদা ছিল। চিন থেকে রােম সাম্রাজ্য এবং ভারতবর্ষেও প্রচুর পরিমাণে রেশম রপ্তানি হত। বিদেশ থেকে চিনে আমদানি হত হাতির দাঁত, তামা, ধূপ, প্রবাল ও মুক্তা ব্যবসা-বাণিজ্যে চিন সমৃদ্ধির শিখরে উঠেছিল বলে তাং যুগকে বলা হয়েছে চিনের স্বর্ণযুগ।
কৃষিকাজঃ কৃষি ছিল চিনবাসীদের প্রধান উপজীবিকা। শতকরা আশি ভাগ লােক চাষের নানা কাজে নিযুক্ত থাকত। ধান, গম, ভুট্টা প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হত। তুলা ও রেশমের চাষও হত।
মুদ্রণ শিল্প: বিশ্বের দরবারে চিনের আর একটি অবদান–মুদ্রণ শিল্প। হান রাজাদের সময়েই চিনে কাগজের ব্যবহার ছিল। তাং যুগে ছাপার প্রচলন ছিল। পৃথিবীর সবচেয়ে পুরােনাে ছাপা বই উদ্ধার হয়েছে চিনের একটি গুহা থেকে। বইখানি তাং যুগের, কাঠের ব্লক থেকে ছাপা। তখন কাঠে খােদাই করে ছাপা হত।
শিক্ষাঃ তাং যুগে শিক্ষাদীক্ষাতেও যথেষ্ট উন্নতি হয়। ছাত্রজীবন সহজ ছিল না। ছাত্রদের কঠোর পরিশ্রম করতে হত। কনফুসীয়র দর্শন পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত ছিল। ছাত্রকে সে বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞানলাভ করতে হত। বৌদ্ধ ধর্মশাস্ত্রে শিক্ষাদানের জন্যও অনেক বিদ্যালয় ছিল। ছাত্রদের সরকারি পরীক্ষায় উপযুক্ত করে তােলা শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল। রাজধানী চাং-আন শহরে এই ব্যাপারে শিক্ষার জন্য একটি বিরাট শিক্ষায়তন ছিল। প্রায় আট হাজার ছাত্র সেখানে পড়ত। অনেকেই ছাত্রাবাসে থাকত। শিক্ষার মূল বিষয় ছিল ইতিহাস, আইন, গণিত, সাহিত্য ও কনফুসিয়াসের দর্শন।
অঙ্কনঃ তাং-যুগ অঙ্কন শিল্পে যথেষ্ট কৃতিত্ব প্রদর্শন করেছিল। এই যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ চিত্রকর ছিলেন তাও-জু। তিনি সম্রাট মিং হুয়াং-এর রাজসভার গৌরব ছিলেন। প্রাকৃতিক দৃশ্য অঙ্কনে তিনি পারদর্শী ছিলেন।
আইন-সংস্কারঃ তাং যুগেই চিনের প্রচলিত আইনগুলিকে সংশােধন করে কঠিনভাবে বলবৎ করার চেষ্টা হয়। কনফুসিয়াসের দর্শনের ওপর ভিত্তি করে আইন রচিত হয়েছিল। চিন সমাজের প্রচলিত প্রথাকে এবং কনফুসিয়াসের পালনীয় আচরণ বিধিকে একসঙ্গে করে এই আইন রচিত হয়েছিল। এই আইনকে বলবৎ করেছিলেন সম্রাট তাই সুং। তিনি রাজকর্মচারীদের কাজকর্ম তদারক পরিদর্শক নিযুক্ত করেন। তিনি কঠোর হাতে শাসন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন।