সুলতানি যুগের সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবন বর্ণনা করাে।
সুলতানি যুগের সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবন বর্ণনা করাে।
উত্তরঃ সুলতানি যুগের সমাজ জীবনঃ সুলতানি যুগে গ্রামে জাতিভেদ প্রথা প্রবল ছিল। ইসলামের প্রভাব থেকে বাঁচবার জন্য প্রথম দিকে হিন্দু সমাজ বর্ণ ব্যবস্থাকে কঠোর করেছিল এবং মেয়েদের পর্দার আড়ালে নিয়ে গিয়েছিল। এর সঙ্গে সতীদাহ, বাল্যবিবাহ প্রভৃতি কু-প্রথাগুলি বলবৎ থাকায় নারীর মর্যাদা অনেকখানি হ্রাস হয়েছিল। অভিজাত পরিবার ছাড়া নারীর উচ্চশিক্ষার কোনাে ব্যবস্থাই এই সময় ছিল না।
হিন্দু সমাজে ব্রাত্মণদের প্রাধান্য ছিল, মুসলমান সমাজে ছিল উলেমাদের। মুসলমানদের মধ্যে শিয়া ও সুন্নী এই দুটি ভাগ ছিল। সুলতানরা ছিলেন ‘গোঁড়া মুসলমান। তাঁদের সময়ে হিন্দুরা নানারকম বিশেষ কর দিতে বাধ্য হত। হিন্দুদের উচ্চপদে নিযুক্ত করা হত না। আবার তার পাশে মহম্মদ বিন-তুঘলকের মতাে শাসকও ছিলেন যিনি হিন্দুদের প্রতি সহনশীলতা দেখিয়েছিলেন।
সুলতানি যুগের অর্থনৈতিক জীবনঃ ভারত ছিল গ্রাম প্রধান। তার জীবন ছিল কৃষিভিত্তিক। সমাজ স্পষ্টত দুটি ভাগে বিভক্ত ছিল। সমাজের নীচের তলায় ছিল কৃষক, শ্রমিক ও নিম্নবিত্ত মানুষ। আর উপরের তলায় ছিল আমীর, উলেমা ও শাসক শ্রেণির মানুষ। কৃষকরা শ্রম দিয়ে ফসল ফলাত আর তাদের শােষণ করে বেঁচে থাকত উপরতলার সুবিধাভােগী মানুষেরা। আমীর খসরু লিখেছেন যে সুলতানের মুকুটের প্রতিটি মণি হচ্ছে জমাট বাঁধা কৃষকের চোখের জল। নিদারুণ শােষণের ফলে কৃষকদের দারিদ্র্য চরমে উঠেছিল।
জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির কথা সুলতানরা ভাবতেন না। সুলতানি শাসন কোনােদিন জনগণের সমর্থন ও সহযােগিতা নিয়ে গড়ে ওঠেনি। সামরিক শক্তিই ছিল তার ভিত্তি। মহম্মদ বিন-তুঘলকের শাসনকালে রাজস্বের হার বৃদ্ধি করা হয়। তার ফলে কৃষকদের দুরবস্থা বেড়ে যায়। তাছাড়া ছিল জায়গীরদারদের অত্যাচার।