হুসেন শাহর শাসনকালকে বাংলার ইতিহাসে এক গৌরবময় যুগ বলা হয় কেন?
হুসেন শাহর শাসনকালকে বাংলার ইতিহাসে এক গৌরবময় যুগ বলা হয় কেন?
উত্তরঃ বাংলার স্বাধীন সুলতানদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ছিলেন হুসেন শাহ। ইলিয়াস শাহ্ এবং হুসেন শাহর রাজত্বকালকে বাংলার ইতিহাসের এক উজ্জ্বল যুগ বলা হয়। হুসেন শাহ্ ছিলেন উদার ও ন্যায়পরায়ণ এরং একই সঙ্গে শিল্প ও সংস্কৃতির পৃষ্ঠপােষক। তাঁর শাসনকালে বাঙালি জাতি তার সৃজন-ক্ষমতার পরিচয় দিতে পেরেছিলেন। হুসেন শাহর আমলে বাংলা সাহিত্যের বিশেষ উন্নতি হয়। যশােরাজ খান, দামােদর, কবিরঞ্জন প্রমুখ কবি হুসেন শাহর কর্মচারি ছিলেন। জ্ঞানদাস, গােবিন্দদাস তাঁর আমলেই বৈষ্ণব পদাবলী রচনা করেন। মালাধর বসু, বিজয় গুপ্ত, রূপ গােস্বামী তাঁদের সাহিত্য রচনায় হুসেন শাহর উৎসাহ ও সাহায্য পেয়েছিলেন।
হুসেন শাহ নিজে চৈতন্যদেবের গুণগ্রাহী ছিলেন। হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে এক ভ্রাতৃসুলভ মনােভাব তাঁরই আমলে জেগে উঠেছিল। তিনি হিন্দু ও মুসলমান সমাজকে একত্রে গ্রথিত করবার উদ্দেশেই সত্যপীরের পুজো প্রচলন করেছিলেন। হিন্দু দেবতা সত্যনারায়ণেরই এক নতুন রূপ এই সত্যপীর। তিনি প্রজাদের মধ্যে কোনাে পার্থক্য করতেন না। তাই সহজেই প্রজারা তাঁর প্রতি অনুগত ও শ্রদ্ধাশীল ছিল।
রাজ্যের প্রতি জেলায় একটি করে মসজিদ ও হাসপাতাল হুসেন শাহ নির্মাণ করেছিলেন। গৌড়ের ছােটো সােনা মসজিদ তার শাসনকালে তৈরি হয়েছিল। এ সময় বাংলার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিও ঘটেছিল। শ্রীচৈতন্যদেব হুসেনের আমলেই হরিনামের। মাহাত্ম প্রচার করেছিলেন। এ সকল নানা কারণে এই সময়কে বাংলার ইতিহাসে এক গৌরবময় যুগ বলা হয়।
আরো দেখুন-
1. ভক্তিবাদ কাকে বলে? ভক্তিবাদ প্রচারকদের কয়েকজন নাম করো এবং তাদের সম্পর্কে আলোচনা করো।
2. সুলতানি যুগের সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবন বর্ণনা করো।
3. ভক্তিবাদ ও সুফিবাদ আন্দোলন দেখা দিয়েছিল কেন?
4. ভক্তিবাদী আন্দোলনে শ্রীচৈতন্য ও গুরু নানকের অবদান কি ছিল?