বিজ্ঞান বিকাশে প্রাচীন ভারতীয় বিজ্ঞানীদের অবদান
বিজ্ঞান বিকাশে প্রাচীন ভারতীয় বিজ্ঞানীদের অবদান সম্বন্ধে আলােচনা করাে।
উত্তরঃ প্রাচীনকাল থেকে ভারতে যথেষ্ট বিজ্ঞান চর্চা হত। তা হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারাের খনন কার্য থেকে নিদর্শন পাওয়া যায়। প্রাচীন যুগে ভারত জ্যোতিবিদায়, গণিতবিদ্যায়, ধাতুবিদ্যায়, চিকিৎসাবিদ্যায় এবং সংগীত শাস্ত্রে প্রভূত উন্নতি করেছিল।
সিন্ধু সভ্যতার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, চিকিৎসাবিদ্যার পুরােনাে পুঁথি হাজার হাজার বছর ধরে রােদে, জলে পড়ে থাকা দিল্লির লৌহস্তম্ভ, প্রাচীন মূর্তি, মুদ্রা, অজন্তা, ইলােরা, কোণারক মন্দিরের স্থাপত্য শিল্প, গুপ্ত ও কুষান যুগের মূর্তি, মুদ্রা থেকে জানা যায় প্রাচীন যুগে ভারত কারিগরিবিদ্যায় প্রভূত উন্নত ছিল।
সিন্ধু এবং বৈদিক সভ্যতার যুগে উন্নত নগর পরিকল্পনা, পূর্তবিদ্যা, পয়ঃপ্রণালী প্রভৃতি ক্ষেত্রে এমন কিছু কৌশল আয়ত্ত করেছিল যা এখনাে পর্যন্ত আধুনিক বিজ্ঞান আয়ত্ত করতে পারেনি। ভারতীয় ঋষি কণাদই বিশ্বকে পদার্থের
ক্ষুদ্রতম কণা পরমাণুর কথা জানান। শক্তির রূপান্তর তাঁরই আবিষ্কার। প্রাচীন ভারতের সাংখ্যদর্শন থেকে প্রথম জানা যায় যার অস্তিত্ব আছে তার সম্পূর্ণ ধ্বংস কখনাে সম্ভব নয়। বর্তমানে এই তত্ত্বটিই ভরের নিত্যতা সূত্র নামে পরিচিত। প্রাচীন ভারতে প্রথম দশ ধরে গণনা পদ্ধতি ও গণনায় শূন্যের (0) ব্যবহার শুরু হয়। প্রাচীন যুগে ভারতীয়রা তামা ও ব্রোঞ্জের ব্যবহার জানত। আকরিক থেকে ধাতু নিষ্কাশন ও ধাতু সংকর তৈরি করতে পারত। প্রাচীন পুঁথি থেকে জানা যায় তখনকার ভারত উধ্বপাতন, পরিস্রাবণ, তির্যক পাতন ইত্যাদি প্রণালী জানত। বিভিন্ন রত্ন, সনাক্ত করতে পারত। ওই সময় ভারতীয় বিজ্ঞানীরা ত্রৈরাশিক, জ্যামিতি, বীজগণিত, পরিমিতি, ত্রিকোণমিতিতে অসামান্য পারদর্শিতা দেখিয়েছেন।
আর্যভট্ট (476 খ্রিঃ): আর্যভট্ট প্রাচীন ভারতের একজন শ্রেষ্ঠ গণিতবিদ, জ্যোতির্বিদ ছিলেন। তাঁর লেখা বই আর্যভট্টিয়ের থেকে বর্গমূল, ঘনমূল, সমীকরণের শ্রেণি বিষয় জানা যায়। সূর্য স্থির এবং পৃথিবী সূর্যের চারধারে নির্দিষ্ট কক্ষে ঘুরছে সর্বপ্রথম তিনিই বলেন।
বরাহমিহির: বরাহমিহির প্রাচীন ভারতের গণিত, জ্যোতিষ, ভূগােল ও প্রাণিবিদ্যার সুপণ্ডিত। পঞ্চ সিদ্ধান্তিকা এবং বৃহৎ সংহিতা তাঁর লেখা দুটি বিখ্যাত বই। পৃথিবী সমস্ত বস্তুকে নিজ কেন্দ্রের দিকে আকর্ষণ করে তিনি বলেছিলেন।
ব্ৰহ্মগুপ্ত: ব্ৰহ্মগুপ্ত ছিলেন প্রাচীন ভারতের একজন গণিতজ্ঞ। বৃত্তস্থ চতুর্ভুজের নানা ধর্ম, পিরামিড, ফ্রাসট্রামের আয়তন নির্ণয় সূত্র তিনি আবিষ্কার করেন। তাঁর লেখা বই ব্ৰহ্মস্ফুট সিদ্ধান্ত।
শ্রীধর : শ্রীধর ছিলেন প্রাচীন ভারতের অপর একজন গণিতবিদ। দ্বিঘাত সমীকরণের সমাধান সূত্র তিনি আবিষ্কার করেন এবং শূন্যে তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন।
ভাস্করাচার্য : ভাস্করাচার্য ছিলেন বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ। তাঁর লেখা সিদ্ধান্ত শিরােমণি জ্যোতির্বিদ্যার অমূল্য সম্পদ। লীলাবতির নাম পাটিগণিতে বিখ্যাত।
ব্ৰহ্মবৈবর্ত পুরাণে ধন্বন্তরী নামে একজন বিখ্যাত চিকিৎসকের নাম জানা যায়।
জীবক ছিলেন বুদ্ধের আমলের শ্রেষ্ঠ চিকিৎসক। প্রাচীন ভারতের বিখ্যাত রসায়নবিদরা হলেন চরক, সুশ্রুত, ভাগবত, বৃন্দা, চক্ৰপানি দত্ত ও নাগার্জুন কুষান আমলের রাজবৈদ্য চরকের লেখা চরক সংহিতা এবং গুপ্ত যুগের শ্রেষ্ঠ চিকিৎসক সুশ্রতের লেখা সুশ্রুত সংহিতা থেকে জানা যায় সােনা, রুপাে, তামা, সীমা, টিন, লােহার কতকগুলাে লবণ ও ক্ষারের প্রস্তুতি ও নানা বিক্রিয়া জানা যায়। এই দুটি বই থেকে বিভিন্ন রােগের কারণ ও রােগ নিরাময়ের পদ্ধতি জানা যায়। বিভিন্ন অস্ত্র চিকিৎসার পদ্ধতি সুশ্রুত সংহিতা থেকে জানা যায়।
আরো পড়ুন-