শব্দ কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি উদাহরণ দাও।

শব্দ ও শব্দের প্রকারভেদ

শব্দ কাকে বলে?

অর্থ যুক্ত ধ্বনি ও ধ্বনি সমষ্টিকে শব্দ বলা হয়। 

শব্দের প্রকারভেদ 

শব্দ সাধারণত দু’প্রকার
1. মৌলিক শব্দ
2. সাধিত শব্দ বা যৌগিক শব্দ

মৌলিক শব্দ কাকে বলে উদাহরণ দাও।

যে শব্দকে ভাঙা যায় না তাকে মৌলিক শব্দ বলে। মৌলিক শব্দগুলি শব্দের মূল হতে উৎপন্ন হয়। মৌলিক শব্দের অর্থ বিশ্লেষণ করা যায় না। মৌলিক শব্দ দ্বারা প্রকাশিত অর্থ সম্পূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। যেমন—গরু, মা, মেঘ, গাছ, হাত ইত্যাদি।

সাধিত শব্দ কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি  উদাহরণ দাও।

নাম বা ধাতুর সঙ্গে প্রত্যয় যােগ করে যে সব শব্দ গঠিত হয় অথবা সমাসের ফলে যে শব্দ গঠিত হয় তাকে সাধিত শব্দ বলে। 
যেমন—গায়ক, গান। এই শব্দ দুটি 'গৈ’এই ধাতুর সঙ্গে প্রত্যয় যুক্ত হয়ে তৈরি হয়েছে। 
সাধিত বা যৌগিক শব্দ দু'প্রকার। যথা-
1. প্রত্যয় নিষ্পন্ন সাধিত শব্দ
2. সমাস নিষ্পন্ন সাধিত শব্দ

1. প্রত্যয় নিষ্পন্ন সাধিত শব্দের উদাহরণঃ 
গম + তব্য = গন্তব্য এখানে গম্ ধাতুর সঙ্গে ‘তব্য' প্রত্যয় যুক্ত হয়ে ‘গন্তব্য’ শব্দটি গঠিত হয়েছে। 
অনুরূপভাবে, 
দৃশ + অন = দর্শন; পা + অনীয় = পানীয় ; বাঁধ + আই = বাঁধাই।
2. সমাস নিষ্পন্ন সাধিত শব্দের উদাহরণঃ 
বিদ্যার আলয় = বিদ্যালয় ; ভাই ও বােন = ভাইবােন; সিংহ চিহ্নিত আসন = সিংহাসন ইত্যাদি।

অর্থ অনুসারে শব্দের প্রকারভেদ

অর্থ অনুসারে শব্দকে আবার তিন ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন-
1. যৌগিক শব্দ
2. রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ
3. যােগরূঢ় শব্দ

যৌগিক শব্দ কাকে বলে উদাহরণ দাও।

প্রকৃতি প্রত্যয় দ্বারা যে সব শব্দের অর্থ নির্ণয় করা হয় তাদের যৌগিক শব্দ বলে।
যেমন-জলজ (জলে জন্মে যাহা); দাতা (দান করেযে); ঘুম+অন্ত = ঘুমন্ত ইত্যাদি।

রূঢ় শব্দ কাকে বলে?

প্রকৃতি ও প্রত্যয় গত অর্থের অপেক্ষানা করে যে শব্দ কোন লােক প্রচলিত অর্থ প্রকাশ করে তাকে রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ বলা হয়। 
যেমন—সন্দেশ (মিষ্টান্ন ; আসল অর্থ সংবাদ), ঘর, পাতা, ছেলেমি (বালক সুলভ ব্যবহার) ইত্যাদি।

যােগরূঢ় শব্দ কাকে বলে?

প্রকৃতি প্রত্যয় অনুসারে যত প্রকারের অর্থ হতে পারে তার মধ্যে একটিমাত্র বিশেষ অর্থে যে শব্দ ব্যবহৃত হয় তাকে যােগরূঢ় শব্দ বলে। 
যেমন—পঙ্কজ (পদ্ম; মূল অর্থ পঙ্কে যা জন্মে)।এখানে পঙ্কে অনেক কিছু জন্মায়; যেমন শালুক,শ্যাওলা ইত্যাদি, কিন্তু পঙ্কজ বলতে কেবলমাত্র পদ্মকে বােঝানাে হয়। তাই পঙ্কজ যােগরূঢ় শব্দ। তেমনি জলদ, রাজপুত ইত্যাদি।

শব্দের উৎস অনুসারে শব্দের প্রকারভেদ

শব্দের উৎস অনুসারে শব্দকে পাঁচ শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। যেমন—
1. তৎসম 
2. অর্ধ-তৎসম 
3. তদ্ভব 
4. দেশী 
5. বিদেশী শব্দ।

তৎসম কাকে বলে?

যেসব শব্দ মূলত সংস্কৃত তাদের তৎসম শব্দ বলে। যেমন—চন্দ্র, সূর্য, পুষ্প,বৃক্ষ, লতা, বধূ ইত্যাদি।

অর্ধ তৎসম কাকে বলে?

যেসব শব্দ তৎসম শব্দের উচ্চারণের ক্ষেত্রে কিছুটা বিকৃত তাকে অর্ধ-তৎসম বা ভগ্ন তৎসম শব্দ বলে। 
যেমন—সমুদ্র (সমুদ্র), সূর্যি (সূর্য), যন্তর (যন্ত্র), মন্তর (মন্ত্র) ইত্যাদি।

তদ্ভব শব্দ কাকে বলে?

যেসব শব্দ সংস্কৃত হতে প্রাকৃত ভাষার মধ্য দিয়ে পরিবর্তন লাভ করে বাংলা ভাষায় তা এসেছে তাদের তদ্ভব শব্দ বলে। 
যেমন—ভাত (ভত্ত-ভক্ত)নাচ (নচ্চ-নৃত্য) বৌ(বহুবধূ), কাজ (কজ্জ-কাৰ্য) ইত্যাদি।

দেশী শব্দ কাকে বলে?

যেসব শব্দ বাংলা ভাষার নিজস্ব, যা সংস্কৃত অথবা প্রাকৃত হতে বাংলা ভাষায় আসে, তাদের দেশী শব্দ বলে। 
যেমন—ডােবা, ডিঙি, টেকি, কুলাে, মেঝে ইত্যাদি।
বিদেশী শব্দ কাকে বলে?
বিদেশী ভাষা হতে যেসব শব্দ বাংলা ভাষায় এসেছে এবং স্থায়ী হয়েছে তাদের বিদেশী শব্দ বলে। বাংলা ভাষায় এরূপ বহু বিদেশী শব্দ রয়েছে। যেমন—
ইংরেজি শব্দ : চেয়ার, টেবিল, গ্লাস, লাইট।
ফারসি শব্দ : কার্তুজ, কূপন।
ওলন্দাজ শব্দ : হরতন, রুইতন, ইস্কাপন, তুরুপ।
ইতালিয় শব্দ : গেজেট, কোম্পানী।
রাশিয়ান শব্দ : সােভিয়েত, বলশেভিক।
বর্মী শব্দ : লুঙ্গি, ঘুগনি।
চিনা শব্দ : চা, চিনি।

উপরের বর্ণনা থেকে যেসব প্রশ্ন হতে পারে-
1. শব্দ কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি?
2. মৌলিক শব্দ কাকে বলে?
3. সাধিত শব্দ কাকে বলে?
4. অর্থ অনুসারে শব্দ কত প্রকার ও কি কি?
5. রূঢ় শব্দ কাকে বলে?
6. শব্দের উৎস অনুসারে শব্দ কয় প্রকার কি কি?
7. তৎসম শব্দ কাকে বলে উদাহরণ দাও।
8. তদ্ভব শব্দ কাকে বলে?
9. দেশি শব্দ কাকে বলে?
10. বিদেশি শব্দ কাকে বলে? কয়েকটি বিদেশি শব্দের উদাহরণ দাও?

আরো পড়ুন-
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url