বায়ুর উষ্ণতার পার্থক্যের কারণগুলাে কী কী ?
বায়ুর উষ্ণতার পার্থক্যের কারণ
উত্তরঃ বিভিন্ন কারণে বায়ুর উষ্ণতার পরিবর্তন হয়ে থাকে। যেমন—অক্ষাংশের প্রভাব, উচ্চতার প্রভাব, ভূমির ঢাল, ভূমির গঠন, মৃত্তিকার উপাদান, বৃষ্টিপাত, সমুদ্রস্রোতের প্রভাব, সমুদ্র থেকে দূরত্ব, গাছপালা ইত্যাদি।
তবে বায়ুর তাপমাত্রা পরিবর্তনে অক্ষাংশ এবং উচ্চতার প্রভাব সব থেকে বেশি লক্ষ্য করা যায় ।
অক্ষাংশের প্রভাবঃ সূর্যরশ্মির পতন কোণের ওপর নির্ভর করে ভূপৃষ্ঠকে কী হারে উত্তপ্ত করবে। সূর্যরশ্মি নিম্ন অক্ষাংশের ওপর লম্বভাবে পড়ে। এই রশ্মি যে স্থানে পড়ে সেটা অল্প স্থান জুড়ে পড়ে, ফলে ওই স্থান বেশি উত্তপ্ত হয়। আবার নিম্ন অক্ষাংশে তির্যকভাবে সৌররশ্মি পড়লে সৌররশ্মি অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। ফলে ওই স্থানের উষ্ণতা কম হয়। এ কারণে নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে যত উত্তর এবং দক্ষিণে যাওয়া যায় বায়ুর উষ্ণতা কমতে থাকে। সাধারণভাবে দেখা যায় প্রতি 2° উত্তর এবং দক্ষিণে অগ্রসর হলে বায়ুর উষ্ণতা প্রায় 1° সেন্টিগ্রেড হারে কম হয়। ক্রান্তীয় অঞ্চলে বছরের অর্ধেক সময় সূর্যের তাপমাত্রা প্রায় লম্বভাবে পড়ে বলে উষ্ণতা সবচেয়ে বেশি হয়। উষ্ণতা বেশি হওয়ার জন্য একে উষ্ণমন্ডল বলে। মধ্য সমাক্ষরেখাযুক্ত অঞ্চলে সূর্যরশ্মি তির্যকভাবে পড়ে বলে তাপমাত্রা মধ্যম হয়। তাপমাত্রা মধ্যম হওয়ার জন্য এই অঞ্চলকে নাতিশীতােষ্ণ অঞ্চল বলে এবং মেরু অঞ্চলে সূর্যরশ্মি আরাে তির্যকভাবে পড়ে বলে তাপমাত্রা। অত্যন্ত কম। এইজন্য একে হিমমণ্ডল বলে। হিমমণ্ডল অঞ্চলে প্রায় ছয় মাস অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকে। 21 শে জুন তারিখে সূর্যরশ্মি কর্কটক্রান্তি রেখার ওপর লম্বভাবে পড়ে এবং নিরক্ষরেখার ওপর 23½° কোণে পতিত হয়। আবার 22শে ডিসেম্বর তারিখে মকরক্রান্তি রেখার ওপর লম্বভাবে একং নিরক্ষরেখার ওপর 66½° কোণে পতিত হয়। এখন ওই দিনগুলিতে ক্রান্তীয় অঞ্চল নিরক্ষীয় অঞ্চল অপেক্ষা বেশি উষ্ণ হয়। আবার মেরুপ্রদেশে সূর্যরশ্মির পতন কোণ হ্রাস পাওয়ার জন্য মেরুপ্রদেশ বেশি উত্তপ্ত হয়।
উচ্চতার প্রভাব: বায়ুর উষ্ণতার পার্থক্য উচ্চতার প্রভাবের ওপরও নির্ভর করে। কোনাে স্থানের উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে ওই স্থানে উষ্ণতা কম হয়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ভূমির উচ্চতা যত বৃদ্ধি পায় উষ্ণতাও তত কমতে থাকে। সাধারণত প্রতি 1000 মিটার উচ্চতায় বায়ুর উষ্ণতা 6.4° সেন্টিগ্রেড হারে তাপমাত্রা কমে। এই কারণেই একই অক্ষাংশে অবস্থিত হলেও উচ্চতার তারতম্য অনুসারে দুই স্থানে উষ্ণতার পার্থক্য দেখা যায়। তাই পাহাড়ী জায়গায় উষ্ণতা কম হয় এবং সমুদ্রের নিকটাঞলে উষ্ণতা বেশি হয়।