নদী উপত্যকা - বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
নদী উপত্যকা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর
1. ব দ্বীপ দেখতে কেমন ?উত্তরঃ ব-দ্বীপ দেখতে বাংলা মাত্রাহীন ‘ব’ অক্ষরের মতাে।
2. পার্বত্য প্রবাহে নদীর কাজ কী ?
উত্তরঃ পার্বত্য প্রবাহে নদীর কাজ ক্ষয়সাধন করা।
3. মধ্যপ্রবাহে নদীর কাজ কী ?
উত্তরঃ মধ্যপ্রবাহে নদীর কাজ পরিবহন করা।
4. নদী কী ?
উত্তরঃ নদী একটি নির্দিষ্ট জলধারা ও জলপ্রবাহ।
5. গঙ্গা নদীর উৎস কী ?
উত্তরঃ গঙ্গোত্রী হিমবাহ।
6. গঙ্গার প্রধান উপনদী কী ?
উত্তরঃ যমুনা।
7. গঙ্গার প্রধান শাখানদী কী ?
উত্তরঃ ভাগীরথী।
8. জলপ্রপাত নদীর কোন গতিতে দেখা যায় ?
উত্তরঃ জলপ্রপাত নদীর পার্বত্য গতিতে দেখা যায়।
10. পৃথিবীর গভীরতম গিরিখাতের নাম কী ?
উত্তরঃ পৃথিবীর গভীরতম গিরিখাতের নাম গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন।
11. দোয়াব কাকে বলে ?
উত্তরঃ দুই নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলকে দোয়াব বলে।
12. নিত্যবহ নদী কাকে বলে ?
উত্তরঃ যে সব নদী বরফগলা জলে পুষ্ট এবং ওইসব নদীতে সারা বছর জল থাকে তাকে নিত্যবহ নদী বলে।
13. কী ধরনের নদীতে সারাবছর জল থাকে ?
উত্তরঃ নিত্যবহ নদীতে।
14. গিরিখাতের আকৃতি কেমন ?
উত্তরঃ গিরিখাতের আকৃতি ইংরেজি 'V' অক্ষরের মতাে।
15. পৃথিবীর গভীরতম গিরিখাত কোনটি ?
উত্তরঃ কলােরাডাে নদীর গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন পৃথিবীর গভীরতম গিরিখাত।
16. পৃথিবীর সবচেয়ে বড়াে জলপ্রপাত কোনটি ?
উত্তরঃ কানাডার সেন্ট লরেন্স নদীর নায়েগ্রা পৃথিবীর সবচেয়ে বড়াে জলপ্রপাত।
17. কাবেরী নদীর জলপ্রপাতটির নাম কী?
উত্তরঃ শিবসমুদ্রম বা যােগ জলপ্রপাত।
18. নদীর কোন প্রবাহে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদের সৃষ্টি হয় ?
উত্তরঃ উচ্চ সমভূমি প্রবাহে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদের সৃষ্টি হয়।
19. অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ কেন বলে ?
উত্তরঃ ঘােড়ার ক্ষুরের মতাে বাঁকা দেখতে হয় বলে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ বলে।
20. পৃথিবীর বৃহত্তম ত্রিকোণ ব দ্বীপ কোনটি ?
উত্তরঃ ভাগীরথী-হুগলি এবং পদ্মার মধ্যবর্তী ত্রিকোণ ভূ-ভাগ হল পৃথিবীর বৃহত্তম ত্রিকোণ ব দ্বীপ।
21. ভারতের উচ্চতম জলপ্রপাতটির নাম কী ?
উত্তরঃ যােগ জলপ্রপাতটি ভারতের উচ্চতম জলপ্রপাত।
22. মন্থকূপ কী ?
উত্তরঃ পার্বত্য প্রবাহে স্রোতের টানে পরিবাহিত শিলাখণ্ডের আঘাতের ফলে নদীখাতে সৃষ্ট গােলাকার গর্তই হল মথকূপ।
23. পলিমঞ্চ কী ?
উত্তরঃ নদীর সঞ্চয় কাজে শিলাখণ্ড, নুড়ি, পলি, কাদা, বালি সঞ্চিত হয়ে ত্রিকোণাকৃতি ভূমিরূপ গঠন করে, একে পলিশঙ্কু বলে। কয়েকটি পলিশঙ্কু গঠিত হয়ে পলিমঞ্চ গঠিত হয়। এটি মঞ্চের মতাে দেখতে বলে পলিমঞ্চ বলা হয়।
24. ভাবর কোথায় সৃষ্টি হয় ?
উত্তরঃ শিবালিক পর্বতের পাদদেশে ভাবর সৃষ্টি হয়।
25. কোর বা তাল বলতে কী বােঝাে ?
উত্তরঃ বিহার ও উত্তরপ্রদেশে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদকে কোর বা তাল বলে।
26. নদীর কাজ কয় প্রকার ?
উত্তরঃ নদীর কাজ তিন প্রকার—(i) ক্ষয়সাধন, (ii) বহন, (iii) সঞ্চয়।
27. নদীর প্রবাহের পরিমাপের একককে কী বলে ?
উত্তরঃ নদীর প্রবাহের পরিমাপের একককে কিউসেক বলে।
28. সমভূমিতে নদীর গতিশক্তি হ্রাস পায় কেন ?
উত্তরঃ সমভূমিতে ভূমির ঢাল খুব কমে যায় বলে নদীর গতিশক্তি হ্রাস পায়।
29. নদী কী সঞ্চয় করে ?
উত্তরঃ উচ্চপ্রবাহে পর্বতের ক্ষয়প্রাপ্ত নুড়ি, কাঁকড়, বালি প্রভৃতি নদীর তলদেশে এবং দুই পাড়ে সঞ্চিত করে।
30. নদী সঞ্চয় করে কেন ?
উত্তরঃ নিম্নগতিতে নদীর ঢাল কমে যায়, বহন ক্ষমতা হ্রাস পায় তাই সঞ্চয় করে।
31. গঙ্গার মধ্যগতি কোথায় দেখা যায় ?
উত্তরঃ হরিদ্বার থেকে মুর্শিদাবাদের ধূলিয়ান পর্যন্ত গঙ্গার মধ্যগতি দেখা যায়।
32. পৃথিবীর গভীরতম গিরিখাতের নাম কী ?
উত্তরঃ কল্কা নদীর গিরিখাত পৃথিবীর গভীরতম গিরিখাত। এটি দক্ষিণ পেরু অঞ্চলে অবস্থিত।
33. পৃথিবীর বৃহত্তম নদী মধ্যবর্তী দ্বীপের নাম কী ?
উত্তরঃ ব্ৰক্ষ্মপুত্র নদের মাজুলী দ্বীপ।
34. নদী যেখান থেকে উৎপন্ন হয় তাকে কী বলে ?
উত্তরঃ উৎস।
35. নদী কোথায় গিয়ে মেশে ? এই স্থানকে কী বলে ?
উত্তরঃ নদী হ্রদ বা সাগরে গিয়ে মেশে। এই স্থানকে মােহনা বলে।
36. পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকে ছােটো ছােটো নদী বা জলধারা প্রবাহিত হয়ে বড়াে নদীতে মিশলে ওইসব জলধারাকে কী বলে ?
উত্তরঃ উপনদী।
37. মূল নদী থেকে জলধারা বেরিয়ে সমুদ্রে বা হ্রদে পড়লে তাকে কী বলে ?
উত্তরঃ শাখানদী।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর
1. নদীর উৎপত্তি কী ভাবে হয় ?
উত্তরঃ বৃষ্টির জল, ঝরনার জল, বরফগলা জল, পাহাড়-পর্বতের গা বেয়ে অসংখ্য ধারায় ঢালু পথে নীচের দিকে নেমে আসে। পরে এরা যখন মিলিত হয়ে একটি ধারায় পরিণত হয় তখন তাকে নদী বলে।
2. নদীর উৎস কাকে বলে ?
উত্তরঃ যে স্থান হতে নদী নিয়মিতভাবে বেশি পরিমাণ জল পায়, তাকে নদীর উৎস বলে। হিমবাহ, হ্রদ, বৃষ্টিবহুল অঞ্চল, প্রস্রবণ প্রভৃতি নদীর প্রধান উৎস।
3. নদীর মােহনা কাকে বলে ?
উত্তরঃ নদী তার গতিপথের শেষে যখন সমুদ্র, হ্রদ বা কোনাে জলাশয়ের সঙ্গে মিলিত হয় তখন তাকে নদীর মােহনা বলে। যেমন—হুগলি নদীর মােহনা গঙ্গাসাগর।
4. উপনদী কাকে বলে ?
উত্তরঃ মূল নদীর দু'পাশ থেকে যে সব ক্ষুদ্র নদী মূল নদীতে পড়ে তাদের মূল নদীর উপনদী বলে।
5. শাখানদী কাকে বলে ?
উত্তরঃ মূল নদী হতে যে সব ক্ষুদ্র নদী বের হয়ে সাগর বা হ্রদে পড়ে তাদের ওই মূল নদীর শাখানদী বলে।
6. পার্বত্য প্রবাহে নদী কী কী সৃষ্টি করে এগিয়ে চলে ?
উত্তরঃ পার্বত্য প্রবাহে নদী প্রথমে I-আকৃতির গিরিখাত, পরে V-আকৃতির গিরিখাত ও জলপ্রপাতের সৃষ্টি করে এগিয়ে চলে।
7. একটি নদীকে কখন আদর্শ নদী বলা হবে ?
উত্তরঃ নদী সাধারণত কোনাে পর্বত হতে উৎপন্ন হয়ে প্রথমে পার্বত্য অঞ্চল ও পরে সমভূমির উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সমুদ্রে পড়লে তাকে আদর্শ নদী বলে।
8. অবক্ষেপণ কাকে বলে ?
উত্তরঃ নদীর জলের পরিমাণ ও স্রোতের বেগ কমে গেলে কিংবা ক্ষয়িত পদার্থের পরিমাণ বেড়ে গেলে নদী আর বহন করতে পারে না এবং সেগুলি নদীগর্ভে উপত্যকার দু'পাশে বা নদীমুখের নীচে পরিত্যক্ত হতে থাকে। একে নদীর অবক্ষেপণ বলে।
9. অববাহিকা কাকে বলে ?
উত্তরঃ প্রধান নদী ও উপনদী এবং শাখানদী দ্বারা যে ভূভাগের জলরাশি বাহিত হয়, সেই ভূভাগকে নদীর অববাহিকা বা পর্যঙ্ক বলে।
10. মন্থকূপ কাকে বলে ?
উত্তরঃ নদীর উচ্চগতিতে প্রবল স্রোতের বেগে পরিবাহিত শিখাখণ্ডগুলি নদীখাতের সঙ্গে ধাক্কা খেতে খেতে ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়, এই সময় নদীখাতে গােলাকার গর্তের সৃষ্টি করে, এই গর্তগুলিকে মন্থকূপ বলে।
11. মিয়েন্ডার গতি কাকে বলে ?
উত্তরঃ নদীর মধ্যগতিতে নদীর তলদেশের ক্ষয় থেকে দুই তীর বেশি ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়ায় নদী উপত্যকা ক্রমশ চওড়া হয়, ফলে গতি হ্রাস পায়। এখন কোনাে বাধার সৃষ্টি হলে নদী সেই বাধা সরাসরি অতিক্রম করতে না পেরে আঁকাবাঁকা পথে এগােতে থাকে, এরূপ অবস্থাকে নদীপ্রবাহের মিয়েন্ডার গতি বলে।
12. দোয়াব কাকে বলে ?
উত্তরঃ দুটি নদীর মধ্যবর্তী সমভূমিকে দোয়াব বলে। দোয়াব (দো = দুই + আব = জল) অর্থ—যে সমভূমির দুই দিকে জলধারা বিদ্যমান।
13. জল বিভাজিকা কাকে বলে ?
উত্তরঃ একটি নদীর অববাহিকা অন্য একটি নদীর অববাহিকা হতে উচ্চভূমির দ্বারা পৃথক হলে, সেই উচ্চভূমিকে জলবিভাজিকা বলে। যেমন—ভারতের আরাবল্লী পর্বত গঙ্গা ও সিন্ধুর জলবিভাজিকা।
14. খরস্রোত কাকে বলে ?
উত্তরঃ পার্বত্য অঞ্চলে উলম্বভাবে অবস্থিত কঠিন, কোমল শিলাস্তরের মধ্যে কোমল শিলা দ্রুত ক্ষয় হলে এবং ধাপযুক্ত হলে নদীর গতি প্রবলভাবে জলস্রোতের সৃষ্টি করে, একে খরস্রাত বলে।
15. নদী কীভাবে ক্ষয়সাধন করে ?
উত্তরঃ পর্বতের ঢাল বেয়ে নদী যখন ঘন্টায় 30-32 কিলােমিটার বেগে। উপর থেকে নীচে নেমে আসে, তখন তার সামনে বা পাশে যে সব শিলাখণ্ড তার পথরােধ করে, নদী তাকে স্থানচ্যুত করে এবং ক্রমে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে ক্ষয় করে ফেলে। এইভাবে সে নিজ পথ করে নিয়ে অগ্রসর হয়।
16. স্বাভাবিক বাঁধ কীভাবে সৃষ্টি হয় ?
উত্তরঃ সমভূমি অঞ্চলে ভূমির ঢাল কম থাকায়, নদীর বহন করা কাদা,বালি, পাথর ইত্যাদি নদীগর্ভে সঞ্চয় হয়। ফলে নদীর গভীরতা হ্রাস পায়। একারণে বর্ষাকালে অতিরিক্ত জলরাশি নদীতে পড়লে জলরাশি দুকুল প্লাবিত করে বন্যার সৃষ্টি হয়। বন্যার ফলে পলি, বালি, কাদা নদীর উভয় তীরে সঞ্চিত হয়ে উঁচু বাঁধের সৃষ্টি করে, একে স্বাভাবিক বাঁধ বলে।