পদার্থের ভৌত ধর্ম কাকে বলে? কয়েকটি ভৌত ধর্ম উল্লেখ করে আলােচনা করাে।
পদার্থের ভৌত ধর্ম
উত্তরঃ ভৌত ধর্ম : যে ধর্ম থেকে পদার্থের বাহ্যিক অবস্থা ও গুণের পরিচয় জানা যায়, তাকে ভৌত ধর্ম বলে।
কয়েকটি ভৌত ধর্ম হল-
(i) ভৌত অবস্থা : সাধারণ অবস্থায় সব পদার্থ একই অবস্থায় থাকে না। এরা কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় অবস্থায় থাকে। যেমন—কয়লা, সােনা, রুপাে, তামা, লােহা, গন্ধক, সাধারণ লবণ, কুঁতে প্রভৃতি কঠিন ; ব্রোমিন, পারদ, জল, দুধ, তেল প্রভৃতি তরল ; অক্সিজেন, হাইড্রোজেন অ্যামােনিয়া, কার্বন ডাই অক্সাইড, বায়ু প্রভৃতি গ্যাস।
(ii) বর্ণ: বর্ণ দেখে অনেকগুলাে পদার্থকে চেনা যায়। যেমন—সােনার বর্ণ উজ্জ্বল হলুদ, তামা লালচে, আয়ােডিন বেগুনি, তঁতের রং নীল, কয়লার বর্ণ কালাে, অ্যালুমিনিয়াম, রুপাে সাদা, গন্ধক হলুদ। ব্রোমিনের লাল, দুধ সাদা, পারদ রুপাের মতাে চকচকে, জল বর্ণহীন, অক্সিজেন, হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন বর্ণহীন, ক্লোরিনের বর্ণ সুবজ ও হলুদ, নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইডের বর্ণ বাদামি, আয়ােডিন বাষ্প বাদামি।
(iii) গন্ধ: গন্ধ দ্বারা কতকগুলােকে সনাক্ত করা যায়। ন্যাপথ্যালিন ও কপূরের বিশিষ্ট গন্ধ আছে। সােনা, রুপাে, খাদ্যলবণের গন্ধ নেই, কেরােসিন, পেট্রোল, বেঞ্জিন, অ্যালকোহলের বিশিষ্ট গন্ধ আছে। হাইড্রোজেন সালফাইডের
গন্ধ পচা ডিমের মতাে, সালফার ডাই-অক্সাইড পােড়া সালফারের গন্ধ, অ্যামােনিয়ার গন্ধ ভীষণ ঝাঁঝালাে, ক্লোরিনের গন্ধ ব্লিচিং পাউডারের মতাে।
(iv) ঘনত্ব : পদার্থের একক ভরের আয়তনকে ঘনত্ব বলে। সুতরাং
ঘনত্ব = বস্তুর ভর/ আয়তন
C. G. S. পদ্ধতিতে ঘনত্বের একক গ্রাম/ঘন সেমি। S.I.পদ্ধতিতে ঘনত্বের
একক কিলােগ্রাম/ঘন মিটার। বিভিন্ন পদার্থের ঘনত্ব বিভিন্ন। যেমন, 4°C উষ্ণতায় জলের ঘনত্ব 1 গ্রাম/সিসি। পারদের ঘনত্ব 13.6 গ্রাম/সিসি, লােহার ঘনত্ব 7:85 গ্রাম/সিসি, সােনার ঘনত্ব 19 গ্রাম/ঘন সেমি।
(v) কাঠিন্য : সব পদার্থের কাঠিন্য সমান নয়। সাধারণ উষ্ণতায় সােনা, রুপাে, তামা, সীসা, লােহা, ক্যালসিয়াম, হীরক, গ্রাফাইট, কাচ কঠিন পদার্থ। কিন্তু লােহা, সােনা, রুপাে, হীরক খুব কঠিন। সােডিয়াম, সীসা, মােম ছুরি দিয়ে
কাটা যায়। এদের কাঠিন্য কম। সােনা, রুপাে, লােহা কঠিন হলেও প্রয়ােজন মতাে আকৃতি দেওয়া যায়। সালফার, কাচ, কঠিন হলেও ভঙ্গুর।
(vi) আয়তন: সব পদার্থই কিছু না কিছু জায়গা দখল করে থাকে। কোনাে বস্তু যতখানি জায়গা দখল করে থাকে তাকে তার আয়তন বলে। কঠিন ও তরলের নির্দিষ্ট আয়তন আছে। গ্যাসীয় পদার্থের কোনাে নির্দিষ্ট আয়তন নেই। নির্দিষ্ট জ্যামিতিক আকার বিশিষ্ট পদার্থের আয়তন বিভিন্ন সূত্র
যেমন আয়তঘনক = দৈর্ঘ্য x প্রস্থ x উচ্চতা,
চোঙ = π × ব্যাসার্ধ x উচ্চতা,
গােলক = 4/3π(ব্যাসার্ধ)³
এই সূত্র দ্বারা আয়তন নির্ণয় করা যায়।
যে সব পদার্থের নির্দিষ্ট জ্যামিতিক আকার নেই তাদের আয়তন তরল পদার্থের অপসারণ দ্বারা নির্ণয় করা হয়।
(vii) ওজন: সব বস্তুরই ভর আছে। কোনাে বস্তুকে পৃথিবী যে বল দ্বারা নিজ কেন্দ্রের দিকে আকর্ষণ করে, তাকে ওর ওজন বলে। সুতরাং সব বস্তুর ওজন আছে।
viii) গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক: প্রত্যেক বিশুদ্ধ কঠিন পদার্থের নির্দিষ্ট গলনাঙ্ক, বিশুদ্ধ তরলের স্ফুটনাঙ্ক ও হিমাঙ্ক আছে। স্ফুটনাঙ্ক, হিমাঙ্ক, গলনাঙ্ক দ্বারা বিভিন্ন পদার্থকে সনাক্ত করা যায়।