কম্বােজ হিন্দুরাজ্য কোথায় ছিল? কম্বােজ রাজাদের সর্বশ্রেষ্ঠ কী এবং কেন?
কম্বােজ হিন্দুরাজ্য
উত্তরঃ এখন যে দেশকে বলা হয় কম্বােডিয়া তার পুরাতন নাম ছিল কম্বােজ। এখন দেশে বাণিজ্য উপলক্ষে বহু ভারতীয় বসবাস স্থাপন করে। এই দেশের অধিবাসীরা তাদের প্রভাবে হিন্দুধর্মে দীক্ষিত হয়। কিংবদন্তী হতে জানা যায় যে, কৌটিল্য নামে এক ব্রাহ্মণ এই দেশে এসে কম্বােজের নাগবংশীয় রাজকন্যাকে বিবাহ করেন। তার প্রভাবে কম্বােজে হিন্দু সভ্যতার প্রসার হয়।
ষষ্ঠ শতাব্দীর শেষ দিক থেকে কম্বােজের গৌরবের যুগ আরম্ভ হয়। দ্বিতীয় জয়বর্মন ছিলেন কম্বােজের রাজা। তিনি আঙ্কোর অঞ্চলে এই রাজ্যের রাজধানী স্থাপন করেন। তিনি আঙ্কোর নগরকে হ্রদ ও প্রাসাদ দ্বারা সাজান। এর পর যশােবর্মন কম্বােজের সিংহাসনে (৮৫৪ খ্রিঃ) বসেন। তিনি যশােধরপুর নগরে তার রাজধানী স্থাপন করেন। তার নাম অনুসারে রাজধানীর নাম হয় যশােধরপুর। এই নগরের অপর নাম ছিল আঙ্কোরথােম। এই নগর নির্মাণ করে যশােবর্মন স্থায়ী কীর্তি অর্জন করেন। আঙ্কোরথােমের মাঝখানে ছিল একটি পিরামিডের মতাে মন্দির। স্তরে স্তরে পাথর সাজিয়ে মন্দির তৈরি করা হয়। এই মন্দিরের চূড়াটি মুকুটের মতাে দেখতে ছিল। মন্দিরের চারদিকে তােরণ ছিল। তােরণের উপর ব্রহ্মার চতুর্মুখ খােদাই করা ছিল। মন্দিরের প্রাচীরের গায়ে পুরাণের কাহিনি খােদাই করা ছিল। আঙ্কোরথােম বা যশােধরপুরে নগরটিকে ঘিরে চারদিকে চওড়া পরিখা ছিল। পরিখার পর শহর রক্ষার জন্য উঁচু প্রাচীর ছিল। শহরের ভিতরে ছিল প্রাসাদ ও বাগান। শহরে ১০ লক্ষ লােক বাস করত। শহরের হ্রদে লােক নৌকোয় বেড়াত। রাজপথে পাল্কি ও হাতিতে চড়ে যাতায়াত করত। শহরে বহু শিব ও বিষ্ণু মন্দির ছিল। চিন সম্রাট কুবলাই খানের এক দূত এক সময় যশােধরপুরে বা আঙ্কোরথােমে আসেন। তিনিও এই শহরের প্রশংসা করেন।
কম্বােজের রাজা সূর্যবর্মন আঙ্কোরভাট নামে এক বিষ্ণু মন্দির নির্মাণ করেন। এই মন্দির তৈরির সময় একে ধাপে ধাপে উঁচু করা হয়। মন্দিরের গায়ে পুরাণের কাহিনি খােদাই করা ছিল। মন্দিরের প্রাচীরের গায়ে বিশ্রামাগার ছিল। মন্দিরের চূড়াটি প্রায় ২০০ ফুট উঁচু ছিল। কম্বােজরাজ সপ্তম জয়বর্মন আঙ্কোরথােমের সংস্কার করে ১০২টি হাসপাতাল ও ৭৯৮টি নতুন মন্দির নির্মাণ করেন।