বায়ুমণ্ডলে কটি স্তর আছে ? প্রত্যেকটি স্তরের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
বায়ুমণ্ডলের স্তর
উত্তরঃ বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা দ্বারা জানা গেছে ভূ-পৃষ্ঠ থেকে যত উপরের দিকে উঠা যায় দেখা যায় বায়ুর উষ্ণতা, ঘনত্ব, চাপ ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য যেমন—তড়িৎ ধর্ম, চৌম্বক ধর্ম ইত্যাদির যে পরিবর্তন ঘটে তার উপর নির্ভর করে বিজ্ঞানীরা বায়ুমণ্ডলকে 7টি ভাগে ভাগ করেছেন। যথা-
(i) ঘনমণ্ডল বা ট্রপােস্ফিয়ার,
(ii) শান্তমণ্ডল বা স্ট্রাটোস্ফিয়ার,
(iii) ওজোনমণ্ডল বা ওজোনােস্ফিয়ার,
(iv) মেসােস্ফিয়ার ও থার্মোস্ফিয়ার,
(v) আয়নমণ্ডল বা আয়নােস্ফিয়ার,
(vi) বহির্মণ্ডল বা এক্সোস্ফিয়ার,
(vii) ম্যাগনেটোস্ফিয়ার।
(i) ঘনমণ্ডল বা ট্রপােস্ফিয়ার : মেরু অঞ্চলে ভূ-পৃষ্ঠের উপর ৪ কিমি এবং নিরক্ষীয় অঞ্চলে ভূ-পৃষ্ঠের উপর 18 কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত বায়ুস্তরকে ঘনমণ্ডল বা ট্রপােস্ফিয়ার বলে। এখানকার সবচেয়ে ভারী ও ঘন। এখানকার আবহাওয়া জীবনযাত্রার অনুকূল হওয়ায় এই স্তরে আমরা বাস করি। ওজন হিসেবে 75 ভাগ বায়ু এই অঞ্চলে অবস্থিত। এই স্তরের বায়ুতে ভাসমান ধূলিকণা, জলীয় বাষ্প, মেঘ, কুয়াশা দেখা যায়। এজন্য এখানে ঝড়, বৃষ্টি, বজ্রপাত প্রভৃতি প্রাকৃতিক ঘটনাগুলাে ঘটে। ভূ-পৃষ্ঠ থেকে যত উপরে উঠা যায় বায়ুর ঘনত্ব ও উষ্ণতা- ততই কমতে থাকে। দেখা যায় প্রতি কিলােমিটার উচ্চতা বৃদ্ধিতে বায়ুর তাপমাত্রা প্রায় 6.5°C থেকে 10°C হারে কমে। এই স্তরের সর্বনিম্ন উষ্ণতা –56°C। এইজন্য হিমালয়ের এভারেস্ট, কাঞ্চনজঙ্ঘা, ধবলগিরি ইত্যাদি গিরিশৃঙ্গগুলাে বরফে ঢাকা থাকে। ট্রপােস্ফিয়ারের
সর্বোচ্চ অংশে 3-4 কিলােমিটার পর্যন্ত উষ্ণতার কোনাে পরিবর্তন হয় না। এই সমউষ্ণ অঞ্চলকে ট্রলােপজ বলে।
(ii) স্ট্রাটোস্ফিয়ার বা শান্তমণ্ডল: ট্রপােস্ফিয়ার বা ঘনমণ্ডলের উপর থেকে 46 কিমি উচ্চ পর্যন্ত বিস্তৃত স্তরকে শান্তমণ্ডল বা স্ট্রাটোস্ফিয়ার বলে। এখানকার বায়ু খুব পাতলা এবং অক্সিজেন কম থাকে। এজন্য এ স্তরে গেলে শ্বাস-প্রশ্বাসের কষ্ট হয়। এই অঞ্চলে ধূলিকণা, জলীয় বাষ্প, মেঘ নেই।
সেইজন্য ঝড়, বৃষ্টি ও বজ্রপাত হয় না। এখানকার বায়ুর উষ্ণতা –56°C থেকে –60°C পর্যন্ত ওঠা-নামা করে। এ স্তরের সর্বোচ্চ অঞ্চলকে স্ট্রাটোপজ বলে। এ অঞল ওজোনােস্ফিয়ারের কাছে থাকায় এই স্তরের শেষ অংশের উষ্ণতা বেড়ে 0°C হয়। এ স্তর দিয়ে জেটবিমানগুলাে যাতায়াত করে ।
(ii) ওজোনমণ্ডল বা ওজোনােস্ফিয়ার : শান্তমণ্ডলের ঠিক উপরেই ওজোনমণ্ডল অবস্থিত। এর বিস্তার শান্তমণ্ডলের ঠিক উপর থেকে প্রায় 30 কিমি উপর পর্যন্ত। এই স্তরে ওজোন (O3) গ্যাস থাকে এজন্য এই স্তরকে ওজোনােস্ফিয়ার বলে। অন্য গ্যাসের থেকে ওজোন গ্যাসের তাপ শােষণ করার ক্ষমতা বেশি। এইজন্য এই স্তর দিয়ে সূর্যরশ্মির তাপ এবং অতিবেগুনি রশ্মি শােষিত হয়। এজন্য এই স্তরের উষ্ণতা বেশি। শান্তমণ্ডলের শেষ থেকে 22 কিমি উপর পর্যন্ত ওজোনমণ্ডলের উষ্ণতা প্রায় 20°C, এর উচ্চতা বাড়ার সাথে ওজোনমণ্ডলের উষ্ণতা কমতে থাকে। এখানে শব্দ প্রতিফলিত হয়।
(iv) মেসােস্ফিয়ার ও থার্মোস্ফিয়ার: শান্তমণ্ডলের উপর থেকে প্রায় 85 কিমি উচ্চ বায়ুস্তরকে মেসােস্ফিয়ার বলে। এখানে উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উষ্ণতা কমতে থাকে। এই স্তরের সর্বোচ্চ উচ্চতায় উষ্ণতা কমে প্রায় –90°C হয়। এই অঞল বায়ুমণ্ডলের শীতলতম অঞ্চল একে মেসােপজ বলে।
মেসােস্ফিয়ারের উপরের বিস্তৃত অঞ্চলকে থার্মোস্ফিয়ার বলে। এই স্তরে উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উষ্ণতা বাড়ে। এই স্তরের সবচেয়ে উঁচু অংশের উষ্ণতা 1200°C-এর বেশি। থার্মোস্ফিয়ারের যে উচ্চতায় উষ্ণতা আর বাড়ে না তাকে থার্মোপজ বলে।
(v) আয়নমণ্ডল বা আয়নােস্ফিয়ার : ওজোনমণ্ডলের উপর থেকে উপরের দিকে প্রায় 400 কিমি বিস্তৃত। এখানে বেতার তরঙ্গ প্রতিফলিত হয়। এ স্তরের নীচের অংশে নাইট্রোজেন, অক্সিজেন ও ওজোন গ্যাসের অণুগুলাে আয়নিত অবস্থায় থাকে, উপরের অংশে হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাসের আয়নগুলাে থাকে। সূর্যরশ্মি ও সূর্য থেকে আসা এক্স-রশ্মি ও গামা-রশ্মি এ অঞ্চলে থাকা গ্যাস অণুগুলােকে আয়নিত করে। এ স্তরের গড় উষ্ণতা 1100°C এবং উপরের অংশের উষ্ণতা 1300°C। মেরু অঞ্চলে যখন একটানা ছয়মাস রাত থাকে তখন ওই অঞ্চলের আকাশে মেরুপ্রভা বা মেরুজ্যোতি নামে আলাে দেখা যায়।
(vi) বহির্মণ্ডল বা এক্সোস্ফিয়ার: এখানকার বায়ুর উষ্ণতা 2000°C। এখানে বায়ুর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া কঠিন।
(vi) ম্যাগনেটোস্ফিয়ার: বহির্মণ্ডলের উপর স্তরটি প্রায় বায়ুশূন্য। এই অঞ্চলকে ম্যাগনেটোস্ফিয়ার বলে।