রক্ত কাকে বলে? রক্তকে তরল যোগ কলা বলা হয় কেন? এবং রক্ত বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর
রক্ত ( Blood) - গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর
1. মানবদেহে কি পরিমাণ রক্ত থাকে?
উঃ একজন সুস্থ স্বাভাবিক 5 ফুট উচ্চতায় 70 কেজি ওজন বিশিষ্ট প্রাপ্তবয়স্ক লোকের দেহে রক্তের পরিমাণ 5 লিটার।
2. রক্তের রং লাল কেন?
উঃ রক্তে হিমোগ্লোবিন থাকায় রক্তের রং লাল হয়।
3. বর্ণহীন রক্ত কোন প্রাণীর?
উঃ পতঙ্গ শ্রেণীর প্রাণীদের রক্ত বর্ণহীন। পতঙ্গ যেমন - আরশোলা, ফড়িং, প্রজাপতি ইত্যাদি।
4. পতঙ্গদের রক্ত কী কারণে বর্ণহীন?
উঃ এই প্রাণীদের রক্তে কোন রঞ্জক পদার্থ না থাকায় এদের রক্ত বর্ণহীন।
5. কোন্ প্রাণীর রক্ত নীলাভ?
উঃ কবচী শ্রেণীর প্রাণীদের রক্ত নীলাভ। কবচী শ্রেণীর যেমন চিংড়ি কাকড়া ইত্যাদি।
6. চিংড়ির রক্ত নীলাভ কেন?
উঃ চিংড়ির রক্তে হিমোসায়ানিন নামে তাম্র ঘঠিত রঞ্জক পদার্থ থাকায় চিংড়ির রক্ত নীলাভ।
7.অমেরুদণ্ডী প্রাণিদের রক্তের কোন্ অংশে হিমােগ্লোবিন থাকে?
উঃ রক্তরসে।
8. মেরুদণ্ডী প্রাণিদের রক্তের কোন অংশে হিমােগ্লোবিন থাকে?
উঃ লোহিত রক্ত কণিকায়।
9. হিমােগ্লোবিন ও হিমােসায়ানিনের কাজ কি?
উঃ হিমোগ্লোবিনের প্রধান কাজ অক্সিজেন পরিবহন করা।
হিমোসায়ানিন এর প্রধান কাজ অক্সিজেন এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড পরিবহন করা।
10. হিমােগ্লোবিনের খনিজ উপাদানটি কি?
উঃ লৌহ
11. হিমােসায়ানিনের খনিজ উপাদানটি কি?
উঃ তামা।
12. মানবদেহে 100 c.c. রক্তে হিমােগ্লোবিনের পরিমাণ কত?
উঃ 14.5 gm
13. রক্তের প্রধান উপাদানটি কি কি?
উঃ রক্তরস এবং রক্ত কণিকা।
14. রক্তকণিকা ছাড়া রক্তের উপাদানটি কি?
উঃ রক্তরস।
15. রক্তরস ছাড়া রক্তের অপর উপাদান দুটি কি কি?
উঃ অজৈব এবং জৈব উপাদান।
16. কোন প্রাণীর পূর্ণাঙ্গ লােহিত রক্ত কণিকা নিউক্লিয়াসবিহীন ?
উঃ মানুষ।
17. কোন প্রাণীর লােহিতকণিকা ডিম্বাকার, দ্বিউত্তল এবং নিউক্লিয়াসযুক্ত ?
উঃ উট।
18. পতঙ্গদের বর্ণহীন রক্তকে কি বলে?
উঃ হিমোলিম্ফ বলে।
19. কোন প্রাণিদের রক্তকে হিমােসিলােমিক তরল বলে?
উঃ চিংড়ি কাকড়া প্রাণীদের রক্তকে হিমােসিলােমিক তরল বলে।
20. রক্তপূর্ণ দেহগহ্বরকে কি বলে?
উঃ রক্তপূর্ণ দেহগহ্বরকে হিমােসিল বলে।
21. কোন প্রাণীর দেহে হিমােসিল থাকে?
উঃ প্রজাপতি।
22. রক্তরসে জলের পরিমাণ কত?
উঃ 91 - 92% জল।
23. রক্তের দুটি জৈব উপাদানের নাম কি?
উঃ শর্করা, প্রোটিন, ফ্যাট
24. রক্তের দুটি অজৈব উপাদানের নাম কি?
উঃ সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম
25. রক্তস্থিত দুটি প্লাজমা প্রােটিনের নাম কি?
উঃ প্রোথ্রমবিন, ফাইব্রিনোজেন।
26. রক্তে অবস্থিত দুটি ফ্যাটের নাম কি?
উঃ কোলেস্টেরল, লেসিথিন, প্রশমিত ফ্যাট।
27. রক্তের দুটি প্রােটিনবিহীন নাইট্রোজেন ঘটিত পদার্থের নাম কি?
উঃ ইউরিয়া, অ্যামোনিয়া, ইউরিক অ্যাসিড ইত্যাদি।
28. R.B.C.র পুরাে নাম কি?
উঃ Red Blood Corpuscles.
29. W.B.C.র পুরাে নাম কি?
উঃ White Blood Corpuscles.
30. প্রতি ঘন mm. রক্তে লােহিত কণিকার স্বাভাবিক পরিমাণ কত?
উঃ 4.5 - 5 million/cmm.
31. প্রতি ঘন mm. রক্তে অণুচক্রিকার সংখ্যা কত?
উঃ 150000 - 250000/cmm
32. প্রতি ঘন mm. রক্তে শ্বেত কণিকার সংখ্যা কত?
উঃ 5000 - 8000/cmm
33. রক্তকণিকার প্রধান উৎসস্থল কোথায় ?
উঃ লাল অস্থিমজ্জা।
34. রক্তকণিকার ধ্বংসের স্থান কোথায় ?
উঃ যকৃত ও প্লীহায়।
35. কোন্ প্রকার রক্তকণিকা শ্বাস বায়ু পরিবহন করে?
উঃ লোহিত রক্তকণিকা।
36. কোন্ প্রকার রক্তকণিকা দেহপ্রবিষ্ট রােগ জীবাণুদের ধ্বংস করে?
উঃ শ্বেত রক্তকণিকা।
37. কোন্ রক্তকণিকা থেকে থ্রম্বােকাইনেজ নিঃসৃত হয় ?
উঃ অনুচক্রিকা।
38. রক্ততঞ্চনে সহায়ককারী রক্তকণিকা কোনটি ?
উঃ অনুচক্রিকা।
39. মানুষের লােহিত কণিকার আয়ু কত দিন?
উঃ মানুষের লােহিত কণিকার আয়ু 120 দিন।
40. কোন্ প্রকার শ্বেতকণিকা থেকে হেপারিন নিঃসৃত হয়?
উঃ বেসোফিল শ্বেত কণিকা থেকে হেপারিন নিঃসৃত হয়।
41. কোন্ শ্বেতকণিকা এলার্জি প্রতিরােধ করে?
উঃ ইওসিনোফিল ও বেসোফিল শ্বেত কণিকা হিস্টামিন নিঃসরণ করে দেহে এলার্জি প্রতিরোধ করে।
42. দেহে অনাক্রম্যতা রক্ষায় সাহায্য করে কোন্ শ্বেতকণিকা?
উঃ লিম্ফোসাইট শ্বেত কণিকা।
43. কোন্ বিজ্ঞানী রক্তের শ্রেণীবিভাগ করেন?
উঃ ল্যান্ড স্টেইনার।
44. রক্তের শ্রেণীগুলি কি কি?
উঃ A, B, AB এবং O.
45. কোন্ বিভাগকে সার্বিকদাতা বলে?
উঃ O বিভাগকে সার্বিকদাতা বলে।
46. রক্ত জমাট বাঁধতে কত মিনিট সময় লাগে?
উঃ মানুষের দেহে রক্ত জমাট বাঁধতে প্রায় 3 থেকে 8 মিনিট সময় লাগে। তবে মনে রাখবে রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষেত্রে সব প্রাণীর সমান নয়।
47. রক্ততঞ্চনে সহায়ককারী খনিজ ও ভিটামিনের নাম কি?
উঃ রক্ততঞ্চনে সহায়ককারী খনিজ হল. ক্যালসিয়াম। এবং
রক্ততঞ্চনে সহায়ককারী ভিটামিন হল ভিটামিন K.
48. কোন উৎসেচক রক্ততঞ্চনে সাহায্য করে?
উঃ থ্রম্বোপ্লাসটিন বা থ্রম্বোকাইনেজ।
49. রক্ততঞ্চনের পর তঞ্চিত রক্ত থেকে যে জলীয় রস নিঃসৃত হয় তাকে কি বলে?
উঃ রক্ততঞ্চনের পর তঞ্চিত রক্ত থেকে যে জলীয় রস নিঃসৃত হয় তাকে সিরাম বলে।
50. রক্তচাপ পরিমাপক যন্ত্রের নাম কি?
উঃ স্ফিগমোম্যানোমিটার।
51. হৃৎপিণ্ডের আবরণীকে কি বলে?
উঃ পেরিকার্ডিয়াম।
52. হৃদপেশী কে কি বলে?
উঃ মায়োকার্ডিয়াম।
53. পেরিকার্ডিয়াল রস কোথায় অবস্থিত?
উঃ ভিসেরাল স্তর এবং পেরিটোনিয়াল স্তরের মাঝখানে পেরিকার্ডিয়াল রস থাকে।
54. শ্বেত কণিকার আয়ু কত দিন?
উঃ শ্বেত কণিকার আয়ু 1- 15 দিন।
55. অনুচক্রিকার আয়ু কত দিন?
উঃ অনুচক্রিকার আয়ু 3 দিন।
রক্তের গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
রক্ত কি ?
উঃ রক্ত হলো বহু জৈব ও অজৈব পদার্থের সমন্বয়ে গঠিত অস্বচ্ছ, লবণাক্ত, আঠালো, ক্ষারধর্মী ও লাল বর্ণের ঘন তরল পদার্থ যা হৃদপিন্ড, শিরা, ধমনি, ও জালিকার মধ্য দিয়ে নিয়মিত প্রবাহিত হয়। রক্ত একরকমের তরল যোগকল।
রক্তের বৈশিষ্ট্য গুলি কি কি?
উঃ 1. রক্ত এক ধরনের বিশেষ তরল যােগ কলা।
2. রক্তে কোষীয় উপাদানের তুলনায় ধাত্রের পরিমাণ বেশী।
3. রক্ত ঈষৎ লবণাক্তধর্মী।
4. রক্ত ক্ষারধর্মী।
5. মাছ, উভচর ও সরীসৃপ প্রাণীদের রক্ত শীতল এবং পক্ষী ও স্তন্যপায়ী প্রাণীদের রক্ত উষ্ণ।
6. রক্ত মেসােডার্ম থেকে উৎপত্তি লাভ করে।
রক্তকে তরল যোগ কলা বলা হয় কেন?
উঃ রক্ত ভ্রূণজ মেসোডার্ম থেকে উৎপত্তি লাভ করে। রক্তে কোষীয় উপাদানের তুলনায় ধাত্রের পরিমাণ বেশী এবং রক্ত দেহের বিভিন্ন কলার মধ্যে সংযােগসাধন করে বলে, তাই রক্তকে তরল যােগ কলা বা বিশেষ কলা বলে।
মানবদেহে রক্তের পরিমাণ কত?
উঃ একজন সুস্থ স্বাভাবিক ওজন বিশিষ্ট ( উচ্চতায় 5 ফুট এবং ওজনের 70 কেজি) প্রাপ্তবয়স্ক লোকের দেহে রক্তের পরিমাণ 5000cc বা 5 লিটার।
রক্তের অবস্থান কোথায়?
উঃ বদ্ধ সংবহনতন্ত্র বিশিষ্ট প্রাণীদের রক্ত হৃৎপিণ্ডের প্রকোষ্ঠে এবং রক্তবাহে অবস্থান করে এবং মুক্ত সংবহনতন্ত্র বিশিষ্ট প্রাণীদের রক্ত হিমােসিল, ল্যাকুনা এবং হৃৎপিণ্ডের গহ্বরে থাকে।
রক্তের রং লাল হয় কেন?
উঃ রক্তে হিমােগ্লোবিন নামে লৌহঘটিত প্রােটিন জাতীয় রঞ্জক পদার্থ থাকায় রক্তের রঙ লাল হয়। বিশেষ করে মেরুদণ্ডী প্রাণীদের রক্তের রঙ লাল। মেরুদণ্ডী প্রাণীদের ক্ষেত্রে লোহিত রক্তকণিকায় হিমােগ্লোবিন থাকে।
কোন প্রাণীর রক্ত বর্ণহীন বা সাদা রক্ত ?
উঃ পতঙ্গ শ্রেণীর প্রাণীদের রক্তে কোন রঞ্জক পদার্থ না থাকায় এদের রক্ত বর্ণহীন বা সাদা রক্ত। যেমন - আরশোলা, ফড়িং, প্রজাপতি ইত্যাদি পতঙ্গ শ্রেণীর প্রাণীর রক্ত বর্ণহীন।
কোন প্রাণীর রক্ত নীলাভ ?
উঃ কবচী শ্রেণীর প্রাণীদের রক্তরসে হিমোসায়ানিন নামে তাম্রঘঠিত রঞ্জক পদার্থ থাকায় এদের রক্তের বর্ণ নীলাভ। কবচী শ্রেণীর প্রাণী যেমন- চিংড়ি, কাকড়া ইত্যাদির রক্তের বর্ণ নীলাভ।
রক্তের কাজ কি?
উঃ রক্তের কাজ গুলি হল-
1. শ্বাসবায়ু পরিবহণ: রক্তের রক্তরস এবং লােহিত রক্তকণিকার মাধ্যমে রক্ত ফুসফুস থেকে অক্সিজেন কলাকোশে বহন করে নিয়ে যায় এবং কলাকোশ থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইডকে ফুসফুসে বহন করে আনে।
2. খাদ্য পরিবহণ: ক্ষুদ্রান্ত্রের ভিলাই-এর সাহায্যে শােষিত খাদ্যবস্তু বা সঞ্চয়ী অঙ্গ থেকে সঞ্চিত খাদ্যবস্তুকে কলাকোশে পরিবহণ করে।
3. রেচন পদার্থ পরিবহণ: কলাকোশের বিপাক ক্রিয়ায় উৎপন্ন বিভিন্ন প্রকার রেচন পদার্থগুলােকে রক্ত কলাকোশ থেকে গ্রহণ করে রেচন অঙ্গে প্রেরণ করে।
4. হরমােন পরিবহণ: বিভিন্ন প্রকার অনাল গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমােনকে তাদের টার্গেট কোশ বা অঙ্গে (target cell or organ) প্রেরণ করে।
5. দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ: দেহের তাপমাত্রা বজায় রাখতে শ্বসনে উৎপন্ন তাপশক্তিকে রক্ত দেহের সর্বত্র পরিবহণ করে।
6. জলসাম্য নিয়ন্ত্রণ: কোশের প্রােটোপ্লাজম ও দেহের বিভিন্ন তরল অংশে (যথা— কলারস) রক্ত জল সরবরাহ করে। আবার দেহে জলের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে দেহের অতিরিক্ত জলকে রক্ত বৃক্ক ও ত্বকে প্রেরণ করে দেহের বাইরে নির্গত হতে সাহায্য করে দেহে জলসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে।
7. pH এবং আয়নের সমতা বজায় রাখা: ত্বক, ফুসফুস, বৃক্ক প্রভৃতি এবং হিমােগ্লোবিন, প্লাজমা প্রােটিন প্রভৃতির বাফার ক্রিয়ার মাধ্যমে রক্ত দেহের অম্ল ও ক্ষারের ভারসাম্য বজায় রাখে এবং pH নিয়ন্ত্রণ করে। রক্তে pH এর মান 7.4 এছাড়া রক্ত দেহের কোশ ও কলারসের মধ্যে আয়নের সমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
8. দেহ প্রতিরক্ষা: রক্ত বিভিন্নভাবে দেহ প্রতিরক্ষায় সাহায্য করে, যেমন—(i) নিউট্রোফিল এবং মনােসাইট ফ্যাগােসাইটোসিস পদ্ধতিতে দেহে প্রবিষ্ট রােগ-জীবাণুকে ধ্বংস করে।
(ii) লিম্ফোসাইট শ্বেত রক্তকণিকা অ্যান্টিবডি সংশ্লেষ ও ক্ষরণ করে দেহে প্রবিষ্ট রােগ-জীবাণুকে ধ্বংস করে।
(iii) ইওসিনােফিল শ্বেত রক্তকণিকা হিস্টামিন ক্ষরণ করে অ্যালার্জী প্রতিরােধ করে।
হিমােগ্লোবিন কি?
উঃ হিমােগ্লোবিন অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের রক্তরসে এবং মেরুদণ্ডী প্রাণীদের লােহিত রক্তকণিকায় অবস্থিত একরকমের লৌহঘটিত, প্রােটিন জাতীয় রঞ্জক পদার্থ, যা প্রধানত অক্সিজেন পরিবহন করে। হিমােগ্লোবিন একরকমের সংযুক্ত প্রােটিন যা হিম (haem) নামে লৌহঘটিত রঞ্জক এবং গ্লোবিন (globin) নামে প্রােটিন নিয়ে গঠিত। এটি বেশিরভাগ প্রাণীর প্রধান শ্বাস রঞ্জক।
রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়া কি ?
উঃ মানুষের 100 ml রক্তে হিমােগ্লোবিনের পরিমাণ 14.5 gm রক্তে হিমােগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গেলে অ্যানিমিয়া বা রক্তহীনতা বা রক্তশূন্যতা রােগ হয়। নিম্নলিখিত চার ধরনের অ্যানিমিয়া লক্ষ্য করা যায় -
1. সিকল সেল অ্যানিমিয়া : লােহিত কণিকার অত্যধিক হারে বিনাশের ফলে সৃষ্টি হয়।
2. নরমােসাইটিক অ্যানিমিয়া : অত্যধিক রক্তপাতের ফলে লৌহের অভাবে সৃষ্টি হয়।
3. পারনিসিয়াস অ্যানিমিয়া : ভিটামিন B12 এবং ফলিক অ্যাসিডের অভাবে সৃষ্টি হয়।
4. অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া : অস্থিমজ্জার ত্রুটির ফলে সৃষ্টি হয়।
লেগহিমােগ্লোবিন কি?
উঃ লেগ হিমােগ্লোবিন হল লেগুমিনেসি গােত্রভুক্ত উদ্ভিদের অকুঁদে অবস্থানকারী একধরনের লৌহ-প্রােটিন ঘটিত রঞ্জক, লেগ হিমােগ্লোবিন প্রধান কাজ হল নাইট্রোজেন সংবদ্ধনে সহায়তা করা।
হিমােসায়ানিন কি?
উঃ হিমােসায়ানিন চিংড়ি কাকড়া শামুক-ঝিনুক ইত্যাদি প্রাণীর শ্বাস রঞ্জক যা কেবল প্রাণীর রক্তরসে উপস্থিত এবং একধরনের তাম্র ঘটিত শ্বাস রঞ্জক। হিমোেসায়ানিন তামা এবং প্রােটিনের সমন্বয়ে গঠিত যৌগ। হিমোসায়ানিন এর প্রধান কাজ হল O2 এবং CO2 পরিবহন করা।
হিমোগ্লোবিন ও হিমোসায়ানিন এর পার্থক্য কি ?
বৈশিষ্ট্য | হিমোগ্লোবিন | হিমোসায়ানিন |
---|---|---|
1. প্রকৃতি | 1. হিমোগ্লোবিন লৌহঘঠিত প্রোটিনজাতীয় রঞ্জক পদার্থ। | 1. হিমোসায়ানিন তাম্র ঘটিত শ্বাস রঞ্জক পদার্থ। |
2. অবস্থান | 2. মেরুদন্ডী প্রাণীদের ক্ষেত্রে লোহিত রক্ত কণিকায় এবং অমেরুদন্ডী প্রাণীদের ক্ষেত্রে রক্তরসে হিমোগ্লোবিন থাকে। | 2. সাধারণ কবচি শ্রেণীভুক্ত অমেরুদন্ডী প্রাণীদের রক্তরসে হিমোসায়ানিন থাকে। কবচি শ্রেণীর প্রাণী যেমন চিংড়ি, কাকড়া, শামুক-ঝিনুক। |
3. বর্ণ | 3. হিমোগ্লোবিন থাকার জন্য রক্তের বর্ণ লাল হয়। | 3. হিমোসায়ানিনের উপস্থিতিতে রক্ত নীলাভ বর্ণ হয়। |
রক্তের কয়টি উপাদান কি কি?
উঃ রক্ত প্রধানত রক্তরস বা প্লাজমা (plasma) এবং রক্তকণিকা বা করপাস (corpuscles) দু ।
রক্তের কয়টি উপাদান কি কি ইটি উপাদান নিয়ে গঠিত। রক্তে রক্তরস থাকে 55% এবং রক্তকণিকা থাকে 45%।
রক্তরস কি ?
উঃ রক্তের ঈষৎ হরিদ্রাভ, ক্ষারধর্মী ও তঞ্চনে সক্ষম তরল অংশকে প্লাজমা বা রক্তরস বলে। রক্তরস 91-92% জল, 8-9% কঠিন পদার্থ নিয়ে গঠিত। যার মধ্যে 8-9% জৈব এবং 0.9-1.9% অজৈব পদার্থ থাকে। এছাড়া বিলুরুবিন, ক্যারােটিন এবং জ্যানথােফাইলিন প্রভৃতি রঞ্জক কণা থাকায় প্লাজমা বা রক্তরস হলুদ বর্ণের হয়।
রক্তরসের কাজ কি?
উঃ 1. রক্তরস অক্সিজেন এবং কার্বন ডাই অক্সাইড পরিবহনে সাহায্য করে।
2. রক্তরস খাদ্য উপাদান, হরমােন, উৎসেচক ইত্যাদি পরিবহন করে।
3. রক্তরস বিপাকজাত বর্জ্য বস্তু পরিবহন করে।
4. রক্তরসে অবস্থিত ফাইব্রিনােজেন রক্ত তঞ্চনে সহায়তা করে।
রক্তের উপাদান গুলি কি কি ?
উঃ রক্ত বিভিন্ন উপাদান যেমন অজৈব, জৈব এবং গ্যাসীয় উপাদান নিয়ে গঠিত। রক্তে অজৈব পদার্থ থাকে 0.9% এবং জৈব পদার্থ থাকে 8-9%।
অজৈব পদার্থ: রক্তের মধ্যে যেসব অজৈব উপাদান উপস্থিত সেগুলি হল সােডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, আয়রন বা লৌহ, তামা, আয়ােডিন ইত্যাদি।
জৈব পদার্থ: রক্তের মধ্যে যেসব জৈব উপাদানগুলি উপস্থিত সেগুলি হল-
1. শর্করা : যেমন- গ্লুকোজ।
2. প্রােটিন : রক্তের মধ্যে উপস্থিত প্রোটিনগুলি হল অ্যালবুমিন, গ্লোবিউলিন, প্রােথ্রমবিন, ফাইব্রিনােজেন।
3. ফ্যাট : রক্তের মধ্যে বিভিন্ন ফ্যাট উপস্থিত যেমন- প্রশমিত ফ্যাট, কোলেস্টেরল, লেসিথিন।
4. প্রােটিনবিহীন নাইট্রোজেন ঘটিত পদার্থ : রক্তের মধ্যে বিভিন্ন প্রোটিন বিহীন নাইট্রোজেনঘটিত জৈব পদার্থ উপস্থিত। যেমন- ইউরিয়া, ইউরিক অ্যাসিড, অ্যামােনিয়া,
ক্রিয়েটিনিন, ক্রিয়েটিন, জ্যানথিন ইত্যাদি।
5. রঞ্জক পদার্থ : রক্তের মধ্যে উপস্থিত রঞ্জক পদার্থ গুলি হল বিলিরুবিন, বিলিভারডিন ইত্যাদি।
6. ক্ষরিত পদার্থ : রক্তে উপস্থিত ক্ষরিত পদার্থ গুলি হল হরমােন, উৎসেচক ইত্যাদি।
গ্যাসীয় পদার্থ : রক্তের মধ্যে উপস্থিত যেসব গ্যাসীয় উপাদান গুলি হল - অক্সিজেন, কার্বন ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেন প্রভৃতি।
রক্তকণিকা কয় প্রকার কি কি?
উঃ রক্তে রক্তকণিকা তিন রকমের হয়ে থাকে; যথা :
1. লােহিত রক্তকণিকা বা R.B.C বা এরিথ্রোসাইট
2. লিউকোসাইট বা শ্বেত রক্তকণিকা, বা W.B.C.
3. থ্রম্বােসাইট বা প্লেটলেট বা অণুচক্রিকা।
লােহিত রক্তকণিকা কাকে বলে এবং লোহিত রক্তকণিকার আকার কেমন?
উঃ হিমোগ্লোবিন নামে শ্বাস রঞ্জক যুক্ত অক্সিজেন পরিবহনে সক্ষম লাল রক্ত কণিকাকে লোহিত রক্তকণিকা বলে।
লোহিত রক্তকণিকার আকার: মানুষের পরিণত লােহিত রক্তকণিকা গােলাকার, দু-পাশ চ্যাপটা, চাকতির মতাে হয়। পরিণত লোহিত রক্ত কণিকায় নিউক্লিয়াস না থাকায় লোহিত রক্তকণিকা দ্বি-অবতল বা দুপাশ চ্যাপ্টা হয়।
লোহিত রক্তকণিকা দ্বি অবতল আকারের জন্য সুবিধা হল-
লোহিত রক্তকণিকা দ্বি অবতল আকৃতির জন্য এদের তলীয় ক্ষেত্রফল অনেক বেশি হয় , ফলে বিভিন্ন ব্যাসের রক্তনালীর মধ্য দিয়ে যাতায়াতের জন্য আর বেশি পরিমাণ অক্সিজেন পরিবহন করতে পারে।
লোহিত রক্ত কণিকা কি ভাবে উৎপত্তি হয়?
উঃ লোহিত রক্তকণিকা ভ্রণ অবস্থায় ভ্রণের ভাসকুলােসা (vasculosa) অঞ্চল থেকে উৎপত্তি হয় এবং জন্মের একমাস পর্যন্ত লোহিত রক্তকণিকা যকৃৎ ও প্লীহা থেকে সৃষ্টি হয়। জন্মের পর লােহিত কণিকার উৎপত্তিস্থল হয় লাল অস্থি মজ্জা। লাল অস্থি মজ্জার হিমােসাইটোব্লাস্ট কোষ থেকে লােহিত রক্তকণিকা সৃষ্টি হয়।
লোহিত রক্ত কণিকার কাজ কি?
উঃ লােহিত কণিকার প্রধান কাজ হল -
1. অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইড পরিবহন করা।
2. রক্তের সক্রিয়তা বজায় রাখা।
3. অম্ল বা ক্ষারের সমতা বজায় রাখা।
4. রক্তের পজিটিভ বা ধনাত্মক ও নেগেটিভ বা ঋণাত্মক আয়নের সাম্যবস্থা বজায় রাখতে সাহায্য করা।
হিমােলাইসিস কাকে বলে?
উঃ লােহিত কণিকা 0.9 gm% NaCl দ্রবণে অভিস্রবণসাম্যে অবস্থান করে। লােহিত কণিকাগুলি যখন লঘুসারক দ্রবণে অবস্থান করে তখন ফুলে-ফেঁপে উঠে এবং হিমােগ্লোবিন নির্গত হয়ে যায়। এই প্রক্রিয়াকে হিমােলাইসিস বলে।
শ্বেত রক্তকণিকা কি?
উঃ রক্তে অবস্থিত নিউক্লিয়াসযুক্ত, বর্ণহীন ও অনিয়তাকার রক্তকণিকাদের শ্বেত রক্তকণিকা বা লিউকোসাইট বলে।
শ্বেত কণিকার আকৃতি কেমন?
উঃ শ্বেত কণিকার আকার : শ্বেত রক্ত কণিকা দেখতে
অনেকটা অ্যামিবার মত হয় শ্বেত কণিকার নির্দিষ্ট আকার নেই ।
কোথা থেকে শ্বেত রক্তকনিকা উৎপত্তি হয়?
উঃ শ্বেত রক্তকণিকা অস্থিমজ্জা, প্লীহা এবং লসিকাপিণ্ড থেকে উৎপত্তি হয়। শ্বেতকণিকার মাতৃকোষগুলি হল মায়েলােব্লাস্ট, লিম্ফোব্লাস্ট এবং মনােব্লাস্ট।
শ্বেত রক্ত কণিকার কাজ কি?
উঃ শ্বেতকণিকার প্রধান কাজগুলি হল -
1. অ্যান্টিবডি উৎপাদন: লিম্ফোসাইট শ্বেতকণিকা অ্যান্টিবডি(গামা-গ্লোবিউলিন) উৎপাদন করে বিশেষতঃ ব্যাটিরিয়া সংক্রামণের বিরুদ্ধে দেহের প্রতিরক্ষার কাজে নিযুক্ত থাকে।
2. আগ্রাসন : নিউট্রোফিল, ইওসিনােফিল, মনােসাইট শ্বেতকণিকা ফ্যাগােসাইটোসিস পদ্ধতিতে ব্যাটিরিয়াকে গ্রাস করে।
3. হেপারিন নিঃসরণ : বেসােফিল শ্বেতকণিকা হেপারিন নিঃসরণ করে রক্তবাহে রক্ত তঞ্চন রােধ করে।
4. এলার্জি প্রতিরােধ : ইওসিনােফিল ও বেসসাফিল শ্বেতকণিকা হিস্টামিন নিঃসরণ করে দেহে এলার্জি প্রতিরােধ করে।
5. ট্রিফোন সৃষ্টি: মনােসাইট শ্বেতকণিকা প্লাজমা প্রােটিন থেকে ট্রিফোন নামে রাসায়নিক পদার্থ সৃষ্টি করে কলাকোষের পুষ্টি ও বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
অনুচক্রিকা কাকে বলে?
উঃ রক্ত তঞ্চনে সহায়ককারী নিউক্লিয়াস বিহীন ক্ষুদ্র রক্তকণিকাকে অনুচক্রিকা বা প্লেটলেট বা থ্রম্বােসাইট বলে।
অণুচক্রিকার কাজ কি?
উঃ অণুচক্রিকার কাজ : 1. অণুচক্রিকার প্রধান কাজ হল রক্ত তঞ্চনে সাহায্য করা। রক্তক্ষরণের সময় অণুচক্রিকা থ্রম্বোপ্লাস্টিন নিঃসরণ করে, যা প্রােথ্রমবিনকে থ্রমবিনে পরিণত করে ।
2. অণুচক্রিকা রক্তজালিকার ক্ষতিগ্রস্ত অন্তঃআবরণীর গায়ে এঁটে গিয়ে মেরামতির কাজকে দ্রুততর করে।
অনাক্রম্যতা কাকে বলে?
উঃ ব্যাকটিরিয়া, ভাইরাস এবং তাদের অধিবিষ ও যে কোন বিজাতীয় প্রােটিনের বিরুদ্ধে দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার পদ্ধতিকে অনাক্রম্যতা বা ইমিউনিটি বলে।
টক্সিন কি?
উঃ মানবদেহে যে কোন জীবাণু সংক্রমণ হলে জীবাণুর দেহ থেকে নানারকম রাসায়নিক পদার্থ নিঃসৃত হয়ে দেহকে বিষাক্ত করে তােলে। জীবাণুর দেহ নিঃসৃত ঐ সমস্ত বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থকে অধিবিষ বা টক্সিন বলে।
অ্যান্টিটক্সিন কি ?
উঃ দেহে টক্সিনের আবির্ভাব হলে শ্বেতকণিকা থেকে একপ্রকার প্রােটিন নিঃসৃত হয়ে অধিবিষকে প্রশমিত করে। শেষােক্ত পদার্থকে প্রতিবিষ বা অ্যান্টিটক্সিন বলে।
রক্ত তঞ্চন কাকে বলে?
উঃ যে প্রক্রিয়ায় রক্ত জমাট বেঁধে অর্ধ কঠিন জেলির মত পদার্থে পরিণত হয় তাকে রক্ত তঞ্চন বলে।
রক্তবাহে রক্ত তঞ্চিত হয় না কেন?
উঃ নিম্নলিখিত কারণগুলির জন্য রক্তবাহে রক্ত জমাট বাঁধে না।
1. রক্তে রক্ত-তঞ্চকরােধক পদার্থ হেপারিন থাকে।
2. রক্তবাহের অন্তঃপ্রাচীর মসৃণ হওয়ায় অণুচক্রিকার ভাঙ্গন ঘটে না। ফলে থ্রম্বােপ্লাস্টিন
নিঃসৃত হয় না।
3. রক্তবাহে অবিরাম রক্তস্রোত থাকায় রক্ত জমাট বাঁধতে পারে না।
সিরাম কি?
উঃ রক্ত জমাট বাঁধার পর রক্তের জমাট অংশ থেকে যে হালকা হলুদ বা খড়ের মত রঙের একরকম স্বচ্ছ রস নিঃসৃত হয় তাকে সিরাম বলে।
রক্ত আমাশয় কেন হয়?
উঃ জীবাণু বা ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা অন্ত্রের ঝিল্লিতে ক্ষতবিক্ষত হলে রক্তস্রাবের কারণে মলের সঙ্গে রক্ত নির্গত হয় তখন এই রোগকে রক্ত আমাশয় বলে। বহুদিন ধরে এই রোগ হলে রক্ত শূন্যতা সৃষ্টি হয়।
স্বামী স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ এক হলে কি কোনো সমস্যা হয়?
উঃ জানতে ক্লিক করুন- Click
পিতা-মাতার রক্তের গ্রুপের ওপর নির্ভরশীল সন্তানের গ্রুপের রক্ত
পিতামাতার রক্তের গ্রুপ | সন্তানের সম্ভাব্য রক্তের গ্রুপ | সম্ভব নয় |
---|---|---|
A × A | A, O | B, AB |
A × B | O, A, B, AB | --- |
A × AB | A, B, AB | O |
A × O | O, A | B, AB |
B × B | B, O | A, AB |
B × AB | A, B, AB | O |
B × O | O, B | A, AB |
AB × AB | A, B, AB | O |
AB × O | A, B | O, AB |
O × O | O | A, B, AB |
যে বিভাগে রক্ত যাকে দান করতে পারবেে
পিতামাতার রক্তের গ্রুপ | সন্তানের সম্ভাব্য রক্তের গ্রুপ | সম্ভব নয় |
---|---|---|
A × A | A, O | B, AB |
A × B | O, A, B, AB | --- |
A × AB | A, B, AB | O |
A × O | O, A | B, AB |
B × B | B, O | A, AB |
B × AB | A, B, AB | O |
B × O | O, B | A, AB |
AB × AB | A, B, AB | O |
AB × O | A, B | O, AB |
O × O | O | A, B, AB |
Thank you
Good job
বাংলায় খুব সুন্দর ভাবে প্রশ্ন উত্তর দেওয়া রয়েছে। তাই examone কে অনেক ধন্যবাদ।
দারুন
Darun