বংশগতি এবং মানবদেহের কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ ( বংশগত রোগ)
বংশগতি এবং মানবদেহের কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ বা অটোজোম বাহিত বংশগত রোগ
কয়েকটি বংশগত রোগের নাম বলুন ?
অথবা
বংশগত রোগ কি কি ?
অথবা
কিছু অটোজোম বাহিত বংশগত রোগের নাম কি ?
উঃ বংশগত রোগ হলো যে রোগ পিতা বা মাতার কাছ থেকে সন্তান মধ্যে সঞ্চারিত হয়। যেমন কয়েকটি বংশগত রোগ হলো-
1. অ্যালবিনিজম (Albinism): এটি মানুষের অটোজোমবাহিত প্রচ্ছন্ন জিনঘটিত রোগ। এই রোগটি ফিনাইল অ্যালানিন এবং টাইরােসিন অ্যামাইনাে অ্যাসিডের বিপাকজনিত ত্রুটির ফলে সৃষ্টি হয়। এই রােগে চর্মে মেলানিন রঞ্জক সৃষ্টি হয় না। ফলে ত্বক, চুল ইত্যাদি সব বর্ণহীন হয়।
2. অ্যালকাটোনিউরিয়া (Alkaptonuria): এটি অটোজোমবাহিত একটি জিনঘটিত অস্বাভাবিকতা। এক্ষেত্রে ফিনাইল অ্যালানিন ও টাইরােসিনের অসম্পূর্ণ। জারণ হওয়ায় মূত্রে অ্যালকাটোন (alkapton) নিঃসৃত হয়।
3. ব্রাকিড্যাক্টাইলি (Brachydactyly): এটিও অটোজোমবাহিত একটি জিনঘটিত অস্বাভাবিকতা। এই রােগে হাত ও পায়ের আঙুল খুব ছােটো আকৃতির হয়।
4.হিমােফিলিয়া বা খ্রিস্টমাস রােগ (Haemophilia or Christmas disease): এটি X-ক্রোমােজোমবাহিত প্রচ্ছন্ন
জিনঘটিত রােগ। এটি রক্তে নবম ফ্যাক্টর (খ্রিস্টমাস ফ্যাক্টর)-এর অভাবে প্রকাশ পায়। এই রােগে রক্ত তঞ্চিত হয় না। এই রােগটি মা বহন করে এবং পুত্রে প্রকট হয়।
5. বর্ণান্ধতা বা অ্যাক্রোম্যাটোপসিয়া (Colour-blindness or Acromatopsia): এটিও X-ক্রোমােজোমবাহিত প্রচ্ছন্ন জিনঘটিত রােগ। এই রােগে মানুষ লাল-সবুজ বর্ণ পার্থক্য করতে পারে না।
6. সহজাত বধিরতা (Congenital deafness): অটোজোমবাহিত বিশেষ প্রচ্ছন্ন জিনের উপস্থিতিতে শিশু জন্ম থেকেই বধির হয়।
7. সিস্টিনিউরিয়া (Cystinuria): বিপাকজনিত গােলযােগের ফলে মূত্রে সিস্টিন নির্গত হয়। এটিও অটোজোমবাহিত প্রচ্ছন্ন জিনের প্রভাবে ঘটে।
৪. সিকল সেল অ্যানিমিয়া (Sickle cell anaemia): এটি একধরনের রক্তাল্পতা, এক্ষেত্রে লােহিতরক্তকণিকা কাস্তে আকৃতি ধারণ করে। অটোজোমবাহিত একপ্রকার প্রকট জিনের উপস্থিতিতে এই রােগ প্রকাশ পায়।
আরও মানবদেহের ( বংশগত) জিন ঘটিতরোগ ক্রোমোজোমবাহিত রোগ
9. ডাউন সিন্ড্রোম : অস্বাভাবিক আকৃতি ও জড়বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ।
10. ক্রাই ডু চ্যাট সিনড্রোম : বিড়ালের মতাে আওয়াজ বা কণ্ঠস্বর।
11. টার্নার সিনড্রোম : পুরুষের স্ত্রীলােকের ন্যায় আচরণ।
12. ডায়াবেটিস ইনসিপিটাস : মধুমেহ।
13. ক্লাইনেফেল্টার সিনড্রোম : দেহে ক্রোমােজোম সংখ্যার অস্বাভাবিকতা।
14. এডওয়ার্ড সিনড্রোম : দৈহিক ক্রটি।
15. ত্রুটিপূর্ণ আইরিস (চক্ষু) : চোখের রােগ।
16. মায়ােপিয়া (চক্ষু) : ত্রুটিপূর্ণ দৃষ্টিশক্তি।
17. হান্টিংটনস্ কোরিয়া : স্নায়ুতন্ত্রের জিনঘটিত ক্ষয়রােগ।
18. থ্যালাসেমিয়া রোগ কেন হয়?
উঃ থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রােগ, যা একটি প্রচ্ছন্ন অটোজোমীয় অ্যালিলের (d) উপস্থিতিতে ঘটে। স্বাভাবিক মানুষ বিশুদ্ধ প্রকট বৈশিষ্ট্যযুক্ত (DD) হলেও সংকর বৈশিষ্ট্য (Dd) মাইনর থ্যালাসেমিয়া এবং বিশুদ্ধ প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট (dd) মেজর থ্যালাসেমিয়া নামক মারাত্মক বংশগত রােগ সৃষ্টি হয়।