ভারতের দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ কি

ভারতের দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ কি?

ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ

উঃ বিভিন্ন অর্থনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক কারণের জন্য ভারতের জনসংখ্যা দ্রুত গতিতে বেড়ে চলেছে। ভারতের জনবৃদ্ধির প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষ কারণগুলাে হল -
(১) অধিক জন্মহার : জন্মহারের আধিক্যের জন্য ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারও স্বাভাবিকভাবেই বেশি। 
(২) মৃত্যুর হার কমে যাওয়া : বর্তমানে যুগে সারা বিশ্বেই চিকিৎসাবিজ্ঞানের অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটায় জন্মহারের তুলনায় মৃত্যুহার কমে যাওয়া ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। 
(৩) অল্প বয়সে বিবাহ : কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া ভারতের বেশির ভাগ গ্রামাঞ্চলে ছেলে-মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে হয়, যা ভারতে জনসংখ্যার অত্যধিক বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। 
(৪) দারিদ্র্য ও স্বল্প শিক্ষার হার : ভারতের গ্রামগুলােতে বিশেষ করে নারী শিক্ষার হার এখনও বেশ কম (৩৯.২৯%) হওয়ায় নানান বিষয়ে অজ্ঞতা ও ধর্মীয় কুসংস্কার ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। এছাড়া, ভারতের বেশির ভাগ অধিবাসীই দরিদ্র, তাই অর্থনৈতিক নিরাপত্তার আশায় দরিদ্র পরিবারগুলাের
জনসংখ্যা অত্যধিক হারে বৃদ্ধি পায়। 
(৫) বিপুল সংখ্যায় অবৈধ অনুপ্রবেশ ও শরণার্থী আগমন : বহুদিন ধরেই বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণে প্রতিবেশী দেশগুলি থেকে বিপুল সংখ্যায় অবৈধ অনুপ্রবেশ ও শরণার্থী আগমনের ফলে বিশেষত সীমান্ত অঞ্চলগুলিতে জনবিস্ফোরণ ঘটেছে।
অন্যদিকে, ভারতে জনবৃদ্ধির অন্যান্য কারণের মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল : (৬) কৃষিভিত্তিক সমাজব্যবস্থা ও যৌথ সামাজিক প্রথা, (৭) সমাজে মেয়েদের মতামতের স্বল্প মর্যাদা, (৮) পুত্র সন্তান কামনা, (৯) প্রতিবেশী রাষ্ট্র থেকে উদ্বাস্তু এবং অনুপ্রবেশকারী আগমন সমস্যা প্রভৃতি।

ভারতের জনসংখ্যা বন্টনের তারতম্যের কারণ গুলি আলোচনা করাে।

উঃ আয়তনের দিক দিয়ে বিরাট তেমনি ভারতের জনসংখ্যাও বিশাল (২০১১ খ্রিস্টাব্দের জনগণনা অনুযায়ী ভারতের জনসংখ্যা ১২১ কোটিরও বেশি) এবং জনসংখ্যার ঘনত্বও বেশি, কিন্তু এই সুবিশাল জনসংখ্যা ভারতের সব জায়গায় সমানভাবে ছড়িয়ে নেই। ভারতের অঞ্চল বিশেষে জনঘনত্ব কোথাও খুব বেশি কোথাও খুব কম এর তারতম্যের প্রাকৃতিক ও অপ্রাকৃতিক কারণ গুলি হল-
(১) ভূপ্রকৃতি : অনুকূল ভূপ্রকৃতিও উর্বর মৃত্তিকাযুক্ত অঞ্চলে জীবনযাপন ও জীবিকা নির্বাহের নানান সুযােগসুবিধা থাকায় সেই অঞ্চলটি জনঘনত্বপূর্ণ হয়। হিমালয়ের উচ্চ পার্বত্য অঞ্চল (যেমন : জম্মু-কাশ্মীরের লাদাখ অল ও সিকিমের বেশির ভাগ অঞ্চল), আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ (উদাহরণ: ব্যারেন দ্বীপ) এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন পাহাড়ি অঞ্চলগুলির (অরুণাচল প্রদেশ, মিজোরাম প্রভৃতি রাজ্য) ভূপ্রকৃতি দুর্গম, মৃত্তিকা অনুর্বর এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ জীবনযাত্রা নির্বাহের পক্ষে একান্ত প্রতিকূল হওয়ায় এইসব অঞলের জনঘনত্ব খুবই কম। 
(২) জলবায়ু ও মৃত্তিকা : কিছু জায়গায় অতি অল্প বৃষ্টিপাতের কারণে যেমন ভারতের রাজস্থান রাজ্যের পশ্চিম অংশের পাকিস্তান সীমান্তের লাগােয়া থর মরুভূমি অঞলে মানুষের অস্তিত্ব প্রায় নেই বললেই চলে, তাই এই অঞ্চলটি মরুথলী অর্থাৎ মৃতের দেশ নামে পরিচিত। রাজস্থানের বেশির ভাগ অংশ এবং মধ্যপ্রদেশ, কর্ণাটক, ছত্তিশগড় রাজ্যের মালভূমি অঞ্চলের অনুর্বর ও পাথুরে মৃত্তিকা, বন্ধুর ভূপ্রকৃতি এবং চরমভাবাপন্ন জলবায়ুর জন্যঘনত্ব বেশ কম।
অন্যদিকে, (১) সমতল ভূপ্রকৃতি, (২) উর্বর মৃত্তিকা, (৩) সমভাবাপন্ন জলবায়ু, (৪) পরিমিত বৃষ্টিপাত, (৫) উন্নত জলসেচ ও (৬) কৃষিকাজের সুবিধাযুক্ত সিন্ধু-গঙ্গা-ব্রহ্পুত্রের অববাহিকায় অবস্থিত পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও নিম্ন আসামে জনঘনত্ব বেশ বেশি। একই কারণে গাঙ্গেয় বদ্বীপ অঞ্চলে অবস্থিত পশ্চিমবঙ্গ এবং পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত কেরালা রাজ্যের জনঘনত্ব খুব বেশি।
ভূপ্রকৃতিগত ভাবে দুর্গম হওয়া সত্ত্বেও চা চাষের পক্ষে অনুকূল ভূপ্রকৃতি, জলবায়ু এবং উপযুক্ত মৃত্তিকার জন্য পার্বত্য ঢালে অবস্থিত দার্জিলিং ও অসমের পাহাড়ি অকূলে প্রচুর চা উৎপন্ন হয় বলে বাগিচা-শিল্পে কাজ করে জীবিকা নির্বাহের সুবিধার জন্য লােকে ওই অঞ্চলে ভিড় জমায় ও জনঘনত্ব বাড়িয়ে তােলে।
(৩) খনিজ সম্পদ ও শিল্প : প্রতিকূল জলবায়ু ও অনুর্বর মৃত্তিকা থাকা সত্ত্বেও যেখানে খনিজ সম্পদের প্রাচুর্য দেখা যায়, সেখানে ভূপ্রকৃতি দুর্গম হলেও কাজের সুবিধা থাকায় জনসংখ্যা বেশি হয়। ভারতের বিভিন্ন কয়লাখনি অঞ্চলে (রানিগঞ্জ ও ঝরিয়া) এইজন্য জনঘনত্ব বেশি। ছােটোনাগপুর ও ছত্তিশগড় মালভূমি অঞ্চলের ভিন্ন খনি ও শিল্পাঞলে এই একই কারণে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
(৪) যােগাযােগের সুবিধা এবং নদী ও বন্দরের সান্নিধ্য : (i)ব্যাবসাবাণিজ্যের যােগাযােগ পথের সংগমস্থল বা বন্দর এলাকায় অবস্থানের জন্যও কোনাে অঞ্চলের জনবল বৃদ্ধি পায়। স্বাধীনতা লাভের পর থেকে পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি ও মহারাষ্ট্রের পুনে শহরের আশপাশের অঞ্চল, অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ রেলপথ ও সড়কপথের সংযােগস্থলে অবস্থিত হওয়ার জন্য বর্তমানে অত্যন্ত জনঘনত্বপূর্ণ অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে, (ii) নবগঠিত হলদিয়া, কালা প্রভৃতি বন্দর এলাকা ও কাছাকাছি অঞ্চলে জীবিকানির্বাহের অজস্র সুযােগ-সুবিধা থাকায় ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের লােককে আকৃষ্ট করে ঘনবসতিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
(iii) গঙ্গা, ব্ৰত্মপুত্র, গােদাবরী এবং মহানদী উপত্যকার উর্বর ভূপ্রকৃতি ও জলপথে যাতায়াতের সুবিধার জন্য প্রাচীনকাল থেকেই ঘনবসতিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
(৫) স্বাভাবিক উদ্ভিদের প্রভাব : বৃক্ষহীন মরুভূমি (যেমন : রাজস্থানের মরু অঞ্চল) অথবা গভীর অরণ্যসংকুল অঞ্চল (যেমন : সুন্দরবন, হিমালয় ও পশ্চিমঘাট পর্বতের পাদদেশ, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ বনভূমি অঞ্চল) মানুষের জীবননির্বাহের অসুবিধার জন্য জনঘনত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারেনি।
(৬) অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক কেন্দ্র : ব্যাবসাবাণিজ্যে অর্থ বিনিয়ােগের উপযুক্ত পরিবেশ এবং রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কেন্দ্র হওয়ার জন্য দিল্লি, মুম্বই, কলকাতা প্রভৃতি শহরগুলি ও তার আশেপাশের অঞ্চলগুলিতে জীবিকানির্বাহের সুবিধা থাকায় ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের অধিবাসীদের আকৃষ্ট করে অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ মহানগরীতে রূপান্তরিত হয়েছে।
(৭) অন্যান্য কারণ: ওপরের ৬টি কারণ ছাড়াও প্রচুর জনসমাগমের জন্য (i) ঐতিহাসিক (আগ্রা, লক্ষ্মৌ, মুর্শিদাবাদ), (ii) তীর্থকেন্দ্র (পুরী, বারাণসী, গয়া, তিরুপতি, আজমীর), (iii) গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাকেন্দ্র (শান্তিনিকেতন, আলিগড়), (iv) পর্যটনকেন্দ্র (দার্জিলিং, সিমলা), (v) স্বাস্থ্যকেন্দ্র (মধুপুর, চুনার), (vi) গুরুত্বপূর্ণ সামরিক কেন্দ্র
(মীরাট, আম্বালা), (vii) সীমান্ত অঞ্চল (বনগাঁ, বিরাটনগর প্রভৃতি) অঞ্চলগুলির জনঘনত্ব বেশি হয়।

জনসংখ্যার বিষয়ে কয়েকটি প্রশ্ন উত্তর

1. ভারতের সবথেকে বেশি জনঘনত্ব বিশিষ্ট রাজ্য কোনটি?
উঃ বিহার ( 1102 জন / বর্গ কিমি).
2. ভারতের সর্বনিম্ন জনসংখ্যা যুক্ত রাজ্য কোনটি?
উঃ অরুণাচল প্রদেশ।
3. ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কোন রাজ্যে সবচেয়ে বেশি?
উঃ মেঘালয়
4. ভারতের কোন রাজ্যে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা বেশি?
উঃ কেরালা।
5. ভারতের জনগণনা কত বছর অন্তর হয়?
উঃ প্রতি 10 বছর অন্তর।
6. ভারতের প্রথম আদমশুমারি হয় কত সালে?
উঃ 1872 সালে ভারতে প্রথম আদমশুমারি বা জনগণনা সংঘটিত হয়েছিল তখন ভারতের মোট জনসংখ্যা ছিল 25.40 কোটি। তখন ভারতের গভর্নর জেনারেল ছিলেন লর্ড মেয়ো । এই আদমশুমারি বা জনগণনা হয়েছিল অগোছালোভাবে ।  অতএব 1881 সালে জনগণনার মাধ্যমে সর্বপ্রথম ইংরেজ শাসনাধীন ভারতে জনসংখ্যা বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য  সংগ্রহ করা হয়েছিল।
7. জনবিস্ফোরণ কাকে বলে?
উঃ বিগত কয়েক দশক ধরে ভারতের জনসংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে এই দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাওয়াকে জনবিস্ফোরণ বলে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url