চলন ও গমন
উঃ চলনের সংজ্ঞা (Definition of movement) : যে প্রক্রিয়ায় জীব এক জায়গায় স্থির থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বা উদ্দীপকের প্রভাবে দেহের কোনও অংশ বা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঞ্চালন করে তাকে চলন বা সঞ্চালন বলে।
2. গমন কাকে বলে ?
উঃ গমনের সংজ্ঞা (Definition of locomotion) : যে প্রক্রিয়ায় জীব স্বেচ্ছায় অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঞ্চালনের মাধ্যমে সামগ্রিকভাবে স্থান পরিবর্তন করে, তাকে গমন বলে।
3. ট্যাকটিক চলন (Tactic movement) কাকে বলে ও তার প্রকারভেদ গুলো কি তাদের সংজ্ঞা লেখ?
উঃ ট্যাকটিক চলন (Tactic movement) : বহিস্থ কোনও উদ্দীপকের গতিপথ ও তীব্রতার প্রভাবে উদ্ভিদ বা উদ্ভিদ অঙ্গের সামগ্রিক স্থান পরিবর্তনকে ট্যাকটিক চলন বা আবিষ্ট সামগ্রিক চলন বলে। ট্যাকটিক প্রকারের চলন নিম্নলিখিত কয়েক ধরনের হয় ।
(i) ফটোট্যাকটিক (Phototactic) : উদ্ভিদের সমস্ত দেহ যখন আলােক-উদ্দীপকের গতিপথ ও তীব্রতার প্রভাবে স্থান পরিবর্তন করে, তখন তাকে ফটোট্যাকটিক বা আলােক-অভিমুখ্য চলন বলে। কয়েক প্রকার শৈবালে এরকম চলন দেখা যায়।
(ii) থার্মোট্যাটিক (Thermotactic) : উদ্ভিদের সমগ্র দেহ যখন উষ্ণতা-উদ্দীপকের গতিপথ ও তীব্রতার প্রভাবে স্থানান্তরিত হয়, তখন তাকে থার্মো ট্যাকটিক বা উষ্ণ অভিমুখ্য চলন বলে। পাতাশেওলা নামে উদ্ভিদের পাতায় কোষের প্রবাহ গতি এই রকমের চলন।
(iii) কেমােট্যাকটিক (Chemotactic) : উদ্ভিদের সমগ্র দেহ বা কোনও অংশ যখন কোনও রাসায়নিক পদার্থের গতিপথ ও তীব্রতার প্রভাবে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যায়, তখন তাকে কেমােট্যাটিক চলন বা রসায়ন অভিমুখ্য চলন বলে।
যেমন : ম্যালিক অ্যাসিডের আকর্ষণে ফার্ণ গাছের শুক্রাণু ডিম্বাণুর দিকে ধাবিত হয়। গ্লুকোজের দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে মসের শুক্রাণুর চলন এই ধরনের চলন।
(iv) হাইড্রোট্যাটিক (Hydrotactic) : জলের গতিপথ ও তীব্রতার প্রভাবে যে ট্যাটিক চলন হয় তাকে হাইড্রোট্যাটিক চলন বলে। যেমন শৈবালের শুষ্ক অঞ্চল থেকে জলের দিকে চলন ।
4. ট্রপিক চলন (Tropic movement) কাকে বলে ও তার প্রকারভেদ গুলি কি কি?
ট্রপিক চলন (Tropic movement) : উদ্ভিদের স্থায়ী অঙ্গের চলন যখন উদ্দীপকের গতিপথ অনুসারে হয়, তখন সেই আবিষ্ট বক্র চলনকে ট্রপিক চলন বা দিকনির্ণীত চলন বলে ।
ট্রপিক চলনের প্রকারভেদ (Types of tropic movement) :
উদ্ভিদের ট্রপিক চলন প্রধানত তিন রকমের, যথা : ফটোট্রপিক চলন, জিওট্রপিক চলন এবং হাইড্রোট্রপিক চলন।
5.ন্যাস্টিক চলন কাকে বলে উদাহরণ দাও।
ন্যাস্টিক চলন (Nastic movement) : উদ্ভিদের স্থায়ী অঙ্গের চলন যখন উদ্দীপকের তীব্রতা বা ব্যাপ্তি অনুসারে হয়, তখন তাকে ন্যাস্টিক চলন বলে।
যেমন : (i) পদ্ম ফুল তীব্র আলােতে ফোটে এবং কম আলােতে বুজে যায়, এছাড়া
(ii) লজ্জাবতী লতা স্পর্শ করলে সঙ্গে সঙ্গে পত্রকগুলি বুজে যায়।
6.ন্যাস্টিক চলনের প্রকারভেদ গুলি কি কি ও তাদের সংজ্ঞা লেখ।
ন্যাস্টিক চলনের প্রকারভেদ (Types of Nastic movement) : উদ্দীপকের প্রকৃতি অনুযায়ী ন্যাস্টিক চলন পাঁচ রকমের হয়;
যেমন : (i) ফটোন্যাস্টি, (ii) থার্মোন্যাস্টি, (iii) নিকটি ন্যাস্টি, (iv) কেমােন্যাস্টি এবং (v) সিসমেন্যাস্টি।
(i) ফটোন্যাস্টি (Photonasty) : আলাের তীব্রতার প্রভাবে যে ন্যাস্টিক চলন হয়, তাকে ফটোন্যাস্টি চলন বলে। যেমন- পদ্মফুল ও সূর্যমুখী ফুল প্রভৃতি তীব্র আলােকে ফোটে; আবার
কম আলােকে মুদে যায়।
(ii) থার্মোন্যাস্টি (Thermonasty) : উষ্ণতার তীব্র প্রভাবে উদ্ভিদ-অঙ্গের চলনকে থার্মোন্যাস্টিচলন বলে। যেমন- টিউলিপ ফুল বেশি উষ্মতায় ফোটে এবং কম উষ্ণতায় মুদে যায়।
(iii) নিকটিন্যাস্টি (Nyctinasty) :
উডিজ-অঙ্গের ন্যাস্টিক চলন যখন আলো ও উষ্ণতা, এই দুই এর প্রভাবে ঘটে, তখন তাকে নিকটিন্যাস্টি চলন বলে। যেমন- কোনও কোনও শিম্বী গােত্রীয় উদ্ভিদের পত্রফলক প্রখর রােদ
এবং বেশি উষ্ণতায় খুলে যায় এবং রাত্রে কম উষ্ণতায় বন্ধ হয়ে যায়।
(iv) কেমােন্যাস্টি (Chemo-nasty) : কোনাে রাসায়নিক পদার্থের তীব্রতায় সংঘটিত ন্যাস্টিক চলনকে কেমােন্যাস্টি বলে। যেমন- সূর্যশিশির উদ্ভিদের পাতার রােম প্রােটিনের (পতঙ্গ) সংস্পর্শে আসা-মাত্র পতঙ্গের দিকে বেঁকে যায় এবং পতঙ্গকে আবদ্ধ করে।
(v) সিসমেন্যাস্টি (Seismo-nasty) : স্পর্শ, ঘর্ষণ বা আঘাতের তীব্রতার ফলে যে ন্যাস্টিক চলন হয়, তাকে সিসমেন্যাস্টি চলন বলে। যেমন- লজ্জাবতী লতার পাতা স্পর্শ করামাত্র পাতার পত্রকগুলি মুদে যায় বা নুয়ে পড়ে।
বিভিন্ন প্রাণী ও তাদের প্রধান গমন অঙ্গের নাম | |
---|---|
প্রাণীর নাম | প্রধান গমন অঙ্গ |
অ্যামিবা | ক্ষণপদ বা সিউডোপোডিয়া |
কেঁচো | সিটি এবং বৃত্তাকার ও অনুদৈর্ঘ্য পেশি |
আরশোলা | তিন জোড়া পা এবং দুই জোড়া ডানা এবং অ্যাডাকটার ও অ্যাবডাক্টর পেশি |
মাছ | সাতটি জোড় বিজোড় পাখনা এবং মায়োটোম পেশি |
মানুষ | পা এবং হাত এবং তৎসংলগ্ন পেশি |
1.কোন প্রাণী ক্ষণপদের সাহায্যে চলাফেরা করে?
উঃ অ্যামিবা
2.কোন্ প্রাণী ‘সিটার’ সাহায্যে চলাফেরা করে?
উঃ কেঁচো
3. পতঙ্গভুক উদ্ভিদের ক্ষেত্রে পতঙ্গদেহের প্রােটিনের সংস্পর্শে পত্রফাদের ঢাকনিতে বা কর্ষিকাগুলিতে কী ধরনের চলন দেখা যায় ?
উঃ কেমোন্যাস্টি চলন।
4. ট্যাকটিক চলন যুক্ত একটি উদ্ভিদের নাম কর ।
উঃ ম্যালিক অ্যাসিডের আকর্ষণের ফার্ণ গাছের শুক্রানু ডিম্বানু দিকে ধাবিত হয়। গ্লুকোজ দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে মসের শুক্রাণুর চলন এই ধরনের চলন।
5. ন্যাস্ট্রিক বা ব্যাপ্তি চলনের একটি উদাহরণ।
উঃ লজ্জাবতী পাতা স্পর্শ করলে সঙ্গে সঙ্গে পত্রকগুলো বুজে যায়।
6. মাছের গমনের সময় কোনটি হাল এর কাজ করে?
উঃ পুচ্ছ পাখনা।
7.রিওট্যাকটিক চলনে বহিঃস্থ উদ্দীপক কোনটি?
উঃ জলস্রোত
8.গমনে অক্ষম কয়েকটি প্রাণীর উদাহরণ দাও।
উঃ স্পঞ্জ , সাগরকুসুম প্রবাল ইত্যাদি।
9.গমনে সক্ষম একটি উদ্ভিদের নাম কি?
উঃ ক্ল্যামাইডােমােনাস, ভলভক্স ইত্যাদি ফ্ল্যাজেলা থাকায় তারা গমনে সক্ষম।
10.মায়ােটোম পেশী কোথায় দেখা যায়?
উঃ মাছের দেহে।
11.ক্ল্যামাইডােমােনাসের আলাের দিকে গমনকে কি বলে?
উঃ ফটোট্যাকটিক।
12. উদ্ভিদের কান্ড জলের বিপরীত দিকে বৃদ্ধি পাওয়াকে কি বলে?
উঃ নেগেটিভলি জিওট্রপিক।
13.সূর্যশিশির পাতা পতঙ্গের সংস্পর্শে আসামাত্র পতঙ্গের দিকে বেঁকে যায় এই চলনকে কি বলে?
উঃ কেমোন্যাস্টিক চলন।
উঃ কেমোন্যাস্টিক চলন।
Good
Very good